প্রতিদিন বিশ্বে গড়ে ১০০ মিলিয়ন ব্যারেল অপরোশোধিত তেল এবং ৬০ মিলিয়ন ব্যারেল গ্যাস খরচ হয়। গত ৫০ বছরে বিশ্বের বার্ষিক শক্তি খরচ প্রায় তিনগুণ বেড়েছে— ১৯৬৯ সালে ৬২,৯৬৯ টেরাওয়াট-ঘণ্টা (TWH) থেকে ২০১৯ সালে ১৭৩,৩৪০ TWH-এ পৌঁছেছে। এর আগে অন্তত একশো বছর জ্বালানি শক্তির প্রধান উৎস হিসেবে কয়লা ব্যবহৃত হয়েছে। পেট্রোলিয়াম, অপরিশোধিত তেল, বা সহজভাবে তেল নামেও পরিচিত— এটি প্রধানত হাইড্রোকার্বনের একটি প্রাকৃতিকভাবে ঘটে যাওয়া হলুদ-কালো তরল মিশ্রণ এবং ভূতাত্ত্বিক গঠনে এটি পাওয়া যায়। পেট্রোলিয়াম নামটি প্রাকৃতিকভাবে সংঘটিত অপরিশোধিত তেল এবং পরিশোধিত অপরিশোধিত তেল দ্বারা গঠিত পেট্রোলিয়াম পণ্য উভয়কেই বুঝায়। বিশ্ববাজারে তেলের দাম নির্ধারণ করা হলেও একেক দেশ একেকভাবে তেলের দাম নির্ধারণে নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করে— সাধারণত একটি দেশ তিন উপায়ের যেকোনো একটি উপায় বেছে নিয়ে তেলের দাম নির্ধারণ করে— ১. বিশ্ববাজারের সাথে প্রয়োজনে প্রতিদিন সমন্বয় করে তেলের দাম নির্ধারণ (যেমন: ভারত ও আফগানিস্তান এ প্রক্রিয়ায় তেলের দাম নির্ধারণ করে), ২. কোনো কোনো দেশ একটি সর্বোচ্চ সিলিং বেধে দিয়ে প্রয়োজনে সমন্বয় করে, ৩. কোনো কোনো দেশে সরকার থেকে মূল্য ফিক্সড্ করে দেওয়া হয় (যেমন: বাংলাদেশ)। তেল বিশ্বব্যাপী ব্যবসা করা হয় এবং জাহাজ, পাইপলাইন বা বার্জের মাধ্যমে সহজেই এক বাজার থেকে অন্য বাজারে যেতে পারে। আবার পাইপ লাইনের মাধ্যমেও এক দেশ থেকে আরেক দেশে তেল সরবারাহ করা হয়। ফলস্বরূপ, সরবরাহ/চাহিদার ভারসাম্য এবং রিজার্ভ অনুমান করে বিশ্বজুড়ে অপরিশোধিত তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। ওপেক যেহেতু বিশ্ববাজারে তেলের প্রায় ৪০% যোগান দেয়, তাই ওপেক সদস্যভুক্ত দেশগুলোর জোট (অ্যাঙ্গোলা, আলজেরিয়া, ইরাক, ইরান, ইউএই, কুয়েত, নাইজেরিয়া, ভেনিজুয়েলা, লিবিয়া, সৌদি আরব, গ্যাবন,ইকুয়েটোরিয়াল গিনি) তেলের মূল্য নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তেলের স্পট মার্কেট ভার্সেস ফিউচার মার্কেট
স্পট মার্কেটে তেল নগট টাকায় কেনা বেঁচা হয়। লেনদেন করা তেলের প্রকৃত ব্যারেলগুলি ছাড়াও একটি দ্বিতীয় তেলের বাজার রয়েছে— যেটি হচ্ছে ফিউচার মার্কেট, যা শুধু একটা ‘কাগুজে’ লেনদেন বা একটি অনুমিত দাম ধরে চুক্তি। এটি সহজভাবে নির্দেশ করে যে, তেলের একটি অনুভূত আর্থিক মূল্যে ওপর ভিত্তি করেও একটি বাজার পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে পণ্যের শারীরিক বিনিময় তাৎক্ষণিকভাবে হয় না। তেলের জন্য কাগজের চুক্তিগুলো আগামী মাসগুলিতে বা এমনকি বছরের মধ্যে প্রত্যাশিত বাজার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে কেনা এবং বিক্রি করা হয়। ফিউচার মার্কেটে দুই ধরনের ক্রেতা বিক্রেতা রয়েছে: ১. অপরিশোধিত তেলের প্রকৃত উৎপাদক বা ব্যবহারকারী (যেমন: শোধনাগার) এবং যারা প্রকৃত অপরিশোধিত তেলের দখল নেওয়ার কোনো অভিপ্রায় ছাড়াই বিনিয়োগ হিসেবে ফিউচার চুক্তি কেনেন। প্রথম গোষ্ঠী ফিউচার মার্কেট ব্যবহার করে দামের অস্থিরতা থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য, আগাম খরচ মেটাতে, এবং ভবিষ্যতের তেল উৎপাদন থেকে লাভের নিশ্চয়তা দিতে, যাতে রাজস্বে টান না পড়ে। তেল কেনার খরচ আগাম লক করার জন্য শোধনাগারগুলি ফিউচার চুক্তি ক্রয় করে। যুক্তরাষ্ট্র মোটা দাগে উভয় পদ্ধতিতে তেল ক্রয় করে থাকে। ২. দ্বিতীয় গ্রুপ (বিনিয়োগকারীরা যারা তেল উৎপাদন বা ব্যবহার করে না) বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে তেলের ফিউচার চুক্তি ক্রয় করে এবং ভবিষ্যতে দাম বাড়বে বা কমবে কিনা তা সঠিকভাবে অনুমান করে অর্থ উপার্জন করতে চায়। মিডিয়া প্রায়শই তেলের বর্তমান মূল্যের ওপর ভিত্তি করে নিকটতম মাসে ফিউচার বাজার মূল্য উদ্ধৃত করে। তেলের বর্তমান স্পট মূল্য ফিউচার বাজার মূল্য দ্বারা প্রভাবিত হয়, কারণ, ফিউচার মূল্য বাজারের সমষ্টিগত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করে। গণমাধ্যমের প্রচারণাও এক্ষেত্রে একটি ভূমিকা রাখে।
বেশিরভাগ পণ্যের দাম যেভাবে চাহিদা যোগান তত্ত্বের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়, তেলের দাম সম্পূর্ণরূপে সরবরাহ, চাহিদা এবং প্রকৃত পণ্যের প্রতি বাজারের অনুভূতি দ্বারা নির্ধারিত হয় না। বরং, সরবরাহ, চাহিদা এবং তেলের ফিউচার কন্ট্রাক্টের প্রতি কন্ট্রোল, যেগুলো ফটকাবাজদের দ্বারা ব্যাপকভাবে লেনদেন করা হয়, মূল্য নির্ধারণে বিশ্ববাজারে সিন্ডিকেট একটি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে। পণ্য বাজারে চক্রীয় প্রবণতা একটি ভূমিকা পালন করতে পারে. জ্বালানি এবং অগণিত ভোগ্যপণ্যে এর তেলের) ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে দাম চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয়। রাজনীতি এবং যুদ্ধ তেলের বাজার ওঠানামায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অপরিশোধিত তেলের হিসাব কেন ব্যারেলে হয়
তেল উৎপাদন পরিমাপ করা হয় এবং রিপোর্ট করা হয় ব্যারেলে— ‘BBL’। উৎপাদন হার সাধারণত প্রতিদিন ব্যারেলের পরিপ্রেক্ষিতে রিপোর্ট করা হয়, যা BPD, B/D এবং BBL/D সহ বিভিন্ন উপায়ে সংক্ষিপ্ত করা যেতে পারে। অপরিশোধিত তেল ব্যারেলে পরিমাপ করা হয়— এর প্রধান কারণ হল যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটিকে ব্যারেলে পরিমাপ করে (এক ব্যারেল ৪২ গ্যালনের সমতুল্য/১৫৯ লিটার প্রায়) এবং এটি তেলের হিসেব রাখার একটি স্বাভাবিক উপায়ে পরিণত হয়েছে।
এর উৎস বোঝার জন্য আমাদে পেনসিলভানিয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৬০-এর দশকের প্রথম দিকের তেলক্ষেত্রগুলোর দিকে ফিরে তাকাতে হবে। প্রথম যে তেলটি পাম্প করা হয়েছিল তা ব্যারেলে সংরক্ষণ করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে এটি থেকে যা পাওয়া যেত তা যেকোন ধরনের পাত্র বা বয়ামে সংরক্ষিত ছিলো। প্রতিটি জার আলাদা আকারের হলে আপনি কোন পরিমাণে এটি কিনলেন বা বিক্রি করলেন তা বিচার করা অত্যন্ত কঠিন করে তুলেছিলো।
১৯ শতকের সময় তেল শিল্পের বিকাশের সাথে সাথে অনুসন্ধানকারীদের সারা দেশে এটি পরিবহনের জন্য একটি উপায় খুঁজে বের করার প্রযয়েজন ছিলো। হুইস্কি শিল্প থেকে অনুপ্রেরণাটি এসেছিলো। এটি একটি আদর্শ আকারের কাঠের ব্যারেলে গোল্ডেন এ তরল প্রথম পরিবহন করা হয়েছিলো, যা ছিলো ৪০ গ্যালন।
ব্যারেল নতুন করে নকশা করার পরিবর্তে তেল উৎপাদনকারীরা নিজেদের জন্য ধারণাটি নিয়েছিলো এবং তাই ৪০ গ্যালন ব্যারেল তৈরি করা হয়েছিলো— এছাড়াও অতিরিক্ত ২ গ্যালন তেল পরে ব্যারেলে যোগ করার নিয়ম করা হয়েছিলো যাতে পরিবহনের সময় কিছু তেল গড়িয়ে পড়লেও ৪০ গ্যালন ঠিক থাকে। এখনো সেই ৪২ গ্যালনেই ব্যারেল হয়।
এটি ছিলো একটি বৈপ্লবিক কারণ, এটি তেলের ক্রেতাদের সঠিকভাবে জানতে দেয় যে, তারা এক সময়ে কতগুলো জিনিস কিনছে, তেল শিল্পের বিকাশের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। যাইহোক, আজকাল ৪০ গ্যালন করে তেল জাহাজে অপরিশোধিত অবস্থায় পাম্প করা কার্যকর বা লাভজনক হবে না, তাই এটি সাধারণত সরাসরি ট্যাঙ্কার বা কার্গো জাহাজে পাম্প করা হয়, কিন্তু ব্যারেলের ধারণাটি এখনো আটকে আছে।
তেলের দাম কেন ডলারে হিসেব করা হয়
কিন্তু কেন তেলের দাম উদ্ধৃত করা হয় ডলারে এবং ব্যবহারকারীর দেশীয় মুদ্রায় নয়? কেউ কেউ বলে যে, এর কারণ হলো ডলার বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রা এবং তাই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করা মুদ্রা। এর সাথে এটি ঐতিহ্যগতভাবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং শক্তির সাথে জড়িত। অন্য কথায় যেহেতু তেল বাণিজ্য একটি বড় ব্যবসা, ফলে আপনার এটির জন্য অর্থ প্রদানের জন্য এমন একটি মুদ্রা ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করা উচিৎ যেটির স্থিতিশীলতা আছে।
আরেকটি কারণ হল যে, তেল আজারবাইজানে পাম্প করা হতে পারে, সুইডেনে পরিবহন করা হতে পারে এবং তারপর হয়ত ফ্রান্সে, যেখানে এটি শেষ ব্যবহারকারীর কাছে বিক্রি করা হয়। এক ব্যারেল তেলের (বা তেলের BBL) জটিল এ জীবনচক্রের অর্থ হলো এটিকে একটি মুদ্রায় লেনদেন করা সকলের জন্য সহজ।
অন্যথায় উপরের উদাহরণটি ব্যবহার করে বলা যায়— তেলের লেনদেনের কারেন্সি এক্সপোজার হবে: সুইডিশ রপ্তানিকারক ক্রোনকে আজারবাইজানীয় মানাতে পরিবর্তন করবে, তারপর আজারবাইজানীয় মানটিকে ইউরোতে এবং আবার ক্রোনাতে ফের স্থানান্তর করতে হবে। যদি পুরো লেনদেন প্রক্রিয়াটি ডলারে সম্পন্ন হয়, তবে এটি জড়িত সকলের জন্য বিনিময় হার ওঠানামার ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেবে।
এখানেও প্রচুর ষড়যন্ত্র তত্ত্ব রয়েছে। কেউ কেউ যুক্তি দেন যে, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপকার করে। যদি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য প্রবাহের জন্য ডলার এত গুরুত্বপূর্ণ না হত তবে মার্কিন ডলার অবনতি থেকে অনেক সময় বেরিয়ে আসতে পারত না, যা কয়েক দশক ধরে মার্কিন বাণিজ্যকে শুধুই বাড়িয়েছে।
যাইহোক, বেশিরভাগ তেল বাণিজ্য ডলারে সম্পন্ন হলেও, কিছু অন্যান্য মুদ্রায় সম্পন্ন হয়, উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ ইরানের জন্য ডলারে করা বাণিজ্য নিষ্পত্তি করা কঠিন করে তুলেছে, তাই তেহরান তেল প্রদানের জন্য ভারতের সাথে একটি চুক্তি স্থাপন করেছে। রুপির বিনিময়ে যেমন ভারতকে ওরা তেল দিয়ে থাকে।
তেল এবং যুদ্ধ
আমরা সত্যিই তেল ছাড়া বাঁচতে পারি না, কিন্তু আমাদের জীবনের বেশিরভাগ অংশকে শক্তি দেয় এমন অত্যাবশ্যকীয় জ্বালানি সম্পর্কে আপনি আসলে কতটা জানেন? এটি কেবল আমাদের গাড়িতে জ্বালানি দেয় না, এটি প্লাস্টিক এবং এমনকি কিছু ধরনের মেক-আপেও পাওয়া যায়। ফলস্বরূপ এটি আমাদের সকলের জন্য অন্যভাবেও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, এটি এমন একটি পণ্য যা বিশ্বে নীরব লড়াই পরিচালনা করে— মাঝে মাঝে তা যুদ্ধেও রূপ নিতে পারে। সর্বশেষ তেল-সম্পর্কিত দ্বন্দ্ব— ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে— তেহরান তার পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত ইরানের তেল কেনা বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিশোধ হিসেবে ইরান হরমুজ প্রণালী অবরুদ্ধ করার হুমকি দিয়েছে— এটি একটি প্রধান ধমনী, যেখানে তেল মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপ এবং এর বাইরে প্রবাহিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টিকে যুদ্ধ শুরুর সামীল বলে অভিহিত করেছিলো। তাই তেল শুধুমাত্র আমাদের জীবন পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় নয়, এটি আমাদের ভূ-রাজনৈতিক নিরাপত্তাও নির্ধারণ করে।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
তেলের ব্যবহার কমাতে এবং বিকল্প সবুজ শক্তির উৎস খোঁজার অব্যাহত প্রচেষ্টা সত্তে¡ও বিশ্ব অর্থনীতিতে তেল এখনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক সময় ড্রিল করে তেল খুঁজে পাওয়া বিষয়টা ছিলো বিরক্তিকর, কারণ, জ্বালানি তেলকে পানি বা লবণের মতো অপরিহার্য প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে তখন বিবেচিত হত না। এটি ১৮৪৭ সাল পর্যন্ত নয় যখন প্রথম বাণিজ্যিক তেলের কূপটি আজারবাইজানের আবশারন উপদ্বীপে ড্রিল করা হয়েছিলো। মার্কিন পেট্রোলিয়াম শিল্পের জন্ম আরো ১২ বছর পরে, ১৮৫৯ সালে, পেনসিলভানিয়ার টিটাসভিলের কাছে। (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খনন কাজ ১৮০০-এর দশকের গোড়ার দিকে শুরু হয়েছিলো, কিন্তু তারা ব্রাইনের জন্য ড্রিলিং করছিল, তাই যে কোনো তেল আবিষ্কারের বিষয়টি ছিল দুর্ঘটনাজনিত)। যদিও তেলের প্রাথমিক চাহিদার বেশির ভাগই ছিলো কেরোসিন— তেলের বাতির জন্য। ১৯০১ সালে দক্ষিণ-পূর্ব টেক্সাসের স্পিন্ডলটপ নামে পরিচিত একটি স্থানে ব্যাপক উৎপাদনে সক্ষম প্রথম বাণিজ্যিক কূপটি ড্রিল করা হয়। এই সাইটটি একদিনে ১০০,০০০ ব্যারেলেরও বেশি তেল উৎপাদন করেছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী কূপের চেয়েও বেশি। অনেক ইতিহাসবিদ এবং গবেষকের মতো ১৯০১ সাল থেকেই জ্বালানী তেলের প্রথম বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয় এবং জ্বালানী উৎস হিসেবে কয়লার পরিবর্তে তেল ব্যবহৃত হতে শুরু করে। উল্লেখ্য, ১৮৯০-এর দশকে রুডলফ ডিজেল একটি দক্ষ, কম্প্রেশন ইগনিশন, অভ্যন্তরীণ জ্বলন ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছিলেন, যা তার নাম বহন করে নাম হয় ডিজেল ইঞ্জিন। প্রারম্ভিক ডিজেল ইঞ্জিনগুলি বড় ছিলো এবং তাদের সংকুচিত বায়ু-সহায়ক জ্বালানী ইনজেকশন সিস্টেমের সীমাবদ্ধতার কারণে কম গতিতে পরিচালিত হত। তাই প্রারম্ভিক বছরগুলিতে ডিজেল ইঞ্জিন আরেকটি ভারী জ্বালানী তেল ইঞ্জিন ধারণার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলো— আকরয়েড-স্টুয়ার্ট দ্বারা উদ্ভাবিত হট-বাল্ব ইঞ্জিন। উচ্চ-গতির ডিজেল ইঞ্জিনগুলি ১৯২০-এর দশকে বাণিজ্যিক যানবাহন অ্যাপ্লিকেশনের জন্য এবং ১৯৩০-এর দশকে যাত্রীবাহী গাড়ির জন্য চালু করা হয়েছিলো।
পরিশেষে পেট্রোডলার হলো অপরিশোধিত তেল রপ্তানি আয়, যা মার্কিন ডলারে চিহ্নিত। ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে এই শব্দটি জনপ্রিয়তা লাভ করে, যখন তেলের দামের ঊর্ধ্বগতি তেল রপ্তানিকারক দেশগুলির জন্য বৃহৎ বাণিজ্য এবং চলতি হিসাবের উদ্বৃত্ত তৈরি করেছিলো। তারপরে এবং এখনো যেমন, তেল বিক্রি এবং এর ফলে চলতি অ্যাকাউন্টের উদ্বৃত্তগুলোকে ডলারে চিহ্নিত করা হয়, কারণ, মার্কিন ডলার ছিলো— এবং এখনো রয়ে গেছে সর্বাধিক ব্যবহৃত এবং স্থিতিশীল মুদ্রা হিসেবে। মার্কিন ডলারের বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা তেল রপ্তানিকারকদের ভালো মন্দ ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে না, এটি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি এবং পণ্য আমদানিকারক হিসাবে মার্কিন মর্যাদার ওপর ভিত্তি করে, যেটি গভীর রাজনীতি এবং তরল পুঁজিবাজার আইনের শাসনের পাশাপাশি সামরিক শক্তি দ্বারা সমর্থিত।