মামলা (অভিযোগ) করলে অর্থ খরচ হয়, কিন্তু ভোক্তা অধিকার আইনে মামলা করে অর্থ পাওয়া যায়, এটা অনেকেই জানে না। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনটি সে রকমই একটি আইন। ভোক্তা অভিযোগ করলে এই আইন অনুযায়ী কোনো অসাধু ব্যবসায়ী ভোক্তাকে ঠকালে শুধু শাস্তিই পাবে না, বরং ভোক্তা এক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ পাবে। রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের সব জায়গায় প্রতিনিয়ত লাখ লাখ ভোক্তা হয়রানির শিকার হচ্ছে, ঠকছে। তাদের ঠকানো হচ্ছে বিভিন্ন উপায়ে। অথচ সচেতনতা না থাকায় আইন থাকলেও এর কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না ভোক্তারা।
এসব অভিযোগ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিভাগীয় উপপরিচালক, প্রত্যেক জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর করতে হবে। অভিযোগ সরাসরি বা ফ্যাক্স/ই-মেইল/ওয়েবসাইটে করার সুযোগ রয়েছে।
জানা যায়, কোনো ভোক্তা অভিযোগ করলে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সে অভিযোগ নিষ্পত্তি করার বিধান রয়েছে। জাতীয় অভিযোগ কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ ছাড়াও মোবাইল, ফোন, ফ্যাক্স ও ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ করা যাবে। তবে অভিযোগকারীর নাম ও পূর্ণ ঠিকানা লেখা বাধ্যতামূলক।
ভোক্তা অধিকার আইন-২০০৯ এ ২২টি সজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেনে নেওয়া যাক সেগুলো-
* “অভিযোগ” অর্থ এই আইনের অধীন নির্ধারিত ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কোন কার্যের জন্য কোন বিক্রেতার বিরুদ্ধে মহাপরিচালকের নিকট লিখিতভাবে দায়েরকৃত নালিশ; * “অভিযোগকারী” অর্থ নিম্নবর্ণিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ, যিনি বা যাহারা এই আইনের অধীন কোন অভিযোগ দায়ের করেন- (ক) কোন ভোক্তা; (খ) একই স্বার্থসংশ্লিষ্ট এক বা একাধিক ভোক্তা; (গ) কোন আইনের অধীন নিবন্ধিত কোন ভোক্তা সংস্থা; (ঘ) জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ বা উহার পক্ষে অভিযোগ দায়েরের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা; (ঙ) সরকার বা, এতদুদ্দেশ্যে, সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন সরকারী কর্মকর্তা; বা (চ) সংশ্লিষ্ট পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ী; * “উৎপাদনকারী” অর্থ কোন ব্যক্তি, যিনি- (ক) কোন পণ্য অথবা উহার অংশবিশেষ প্রস্তুত বা উৎপাদন করেন; (খ) কোন পণ্য প্রস্তুত বা উৎপাদন করেন না, কিন্তু আইন অনুযায়ী অন্যের প্রস্তুতকৃত বা উৎপাদিত পণ্যের অংশসমূহ সংযোজন করিয়া থাকেন এবং এইরূপে সংযোজিত পণ্যকে নিজস্ব উৎপাদিত পণ্য বলিয়া দাবী করেন; (গ) আইন অনুযায়ী অন্যের প্রস্তুতকৃত বা উৎপাদিত কোন পণ্যের উপর নিজস্ব ট্রেডমার্ক সন্নিবেশ করিয়া উক্ত পণ্যকে নিজস্ব প্রস্তুতকৃত কিংবা উৎপাদিত পণ্য বলিয়া দাবী করেন; বা (ঘ) বাংলাদেশের বাহিরে উৎপাদিত হয় এমন কোন পণ্য, যে পণ্য উৎপাদকের বাংলাদেশে কোন শাখা অফিস বা ব্যবসায়িক অফিস নাই, আমদানি বা বিতরণ করেন; ব্যাখ্যাঃ কোন দেশীয় উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের কোন পণ্য উহার কোন স্ব-নিয়ন্ত্রিত বা স্ব-পরিচালিত শাখা অফিসে সংযোজন করিয়া থাকিলেও, উক্ত শাখা অফিস উৎপাদক হিসাবে গণ্য হইবে না; * “ঔষধ” অর্থ মানুষ, মৎস্য ও গবাদি পশু-পাখির রোগ প্রতিরোধ বা রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার্য এলোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, ইউনানী, আয়ুর্বেদিক বা অন্য যে কোন ঔষধ; * “খাদ্য পণ্য” অর্থ মানুষ বা গবাদি পশু-পাখির জীবন ধারণ, পুষ্টি সাধন ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ফল-মূল এবং পানীয়সহ অন্য যে কোন খাদ্যদ্রব্য; * “গবেষণাগার” অর্থ কোন আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত বা সরকার কর্তৃক স্বীকৃত কোন গবেষণাগার বা প্রতিষ্ঠান, যে নামেই অভিহিত হউক; * “নকল” অর্থ বাজারজাতকরণের জন্য অনুমোদিত কোন পণ্যের অননুমোদিত অনুকরণে অনুরূপ পণ্যের সৃষ্টি বা প্রস্তুত, যাহার মধ্যে উক্ত পণ্যের গুণাগুণ, উপাদান, উপকরণ বা মান বিদ্যমান থাকুক বা না থাকুক; * “নির্ধারিত” অর্থ বিধি দ্বারা নির্ধারিত এবং বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত মহাপরিচালক কর্তৃক লিখিত আদেশ দ্বারা নির্ধারিত; * “পণ্য” অর্থ যে কোন অস্থাবর বাণিজ্যিক সামগ্রী যাহা অর্থ বা মূল্যের বিনিময়ে কোন ক্রেতা-বিক্রেতার নিকট হইতে ক্রয় করেন বা করিতে চুক্তিবদ্ধ হন; * “ফৌজদারী কার্যবিধি” অর্থ Code of Criminal Procedure, 1898 (Act No.V of 1898); * “বিধি” অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি; * “বিক্রেতা” অর্থ কোন পণ্যের উৎপাদনকারী, প্রস্তুতকারী, সরবরাহকারী এবং পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে; * “ব্যক্তি” অর্থ কোন ব্যক্তি, কোম্পানী, সমিতি, অংশীদারী কারবার, সংবিধিবদ্ধ বা অন্যবিধ সংস্থা বা উহাদের প্রতিনিধিও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে; * “ভেজাল” অর্থ Pure Food Ordinance, 1959 (Ordinance No. LXVIII of 1959) এর section 3(1) এ সংজ্ঞায়িত adulteration এবং Special Powers Act, 1974 (Act No. XIV of 1974) এর section 25C বা অন্য কোন আইনে উল্লিখিত adulteration বা ভেজাল; * “ভোক্তা” অর্থ এমন কোন ব্যক্তি,- (ক) যিনি পুনঃবিক্রয় ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ব্যতীত- (অ) মূল্য পরিশোধে বা মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে কোন পণ্য ক্রয় করেন; (আ) আংশিক পরিশোধিত ও আংশিক প্রতিশ্রুত মূল্যের বিনিময়ে কোন পণ্য ক্রয় করেন; বা (ই) প্রলম্বিত মেয়াদ বা কিস্তির ব্যবস্থায় মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে কোন পণ্য ক্রয় করেন; (খ) যিনি ক্রেতার সম্মতিতে দফা (ক) এর অধীন ক্রীত পণ্য ব্যবহার করেন; (গ) যিনি পণ্য ক্রয় করিয়া উহা, আত্মকর্ম সংস্থানের মাধ্যমে স্বীয় জীবিকা অর্জনের উদ্দেশ্যে, বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করেন; (ঘ) যিনি,- (অ) মূল্য পরিশোধে বা মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে কোন সেবা ভাড়া বা অন্যভাবে গ্রহণ করেন; বা (আ) আংশিক পরিশোধিত ও আংশিক প্রতিশ্রুত মূল্যের বিনিময়ে কোন সেবা ভাড়া বা অন্যভাবে গ্রহণ করেন; বা (ই) প্রলম্বিত মেয়াদ বা কিস্তির ব্যবস্থায় মূল্য পরিশোধের বিনিময়ে কোন সেবা ভাড়া বা অন্যভাবে গ্রহণ করেন; বা (ঙ) যিনি সেবা গ্রহণকারীর সম্মতিতে দফা (ঘ) এর অধীন গৃহীত কোন সেবার সুবিধা ভোগ করেন; * “ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য” অর্থ,- (ক) কোন আইন বা বিধির অধীন নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে কোন পণ্য, ঔষধ বা সেবা বিক্রয় করা বা করিতে প্রস্তাব করা; (খ) জ্ঞাতসারে ভেজাল মিশ্রিত পণ্য বা ঔষধ বিক্রয় করা বা করিতে প্রস্তাব করা; (গ) মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিকারক কোন দ্রব্য, কোন খাদ্যপণ্যের সহিত যাহার মিশ্রণ কোন আইন বা বিধির অধীন নিষিদ্ধ করা হইয়াছে, উক্তরূপ দ্রব্য মিশ্রিত কোন পণ্য বিক্রয় করা বা করিতে প্রস্তাব করা; (ঘ) কোন পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করা; (ঙ) প্রদত্ত মূল্যের বিনিময়ে প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করা; (চ) কোন পণ্য সরবরাহ বা বিক্রয়ের সময়ে ভোক্তাকে প্রতিশ্রুত ওজন অপেক্ষা কম ওজনের পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহ করা; (ছ) কোন পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহের উদ্দেশ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ওজন পরিমাপের কার্যে ব্যবহৃত বাটখারা বা ওজন পরিমাপক যন্ত্র প্রকৃত ওজন অপেক্ষা অতিরিক্ত ওজন প্রদর্শনকারী হওয়া; (জ) কোন পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুত পরিমাপ অপেক্ষা কম পরিমাপের পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহ করা; (ঝ) কোন পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহের উদ্দেশ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দৈর্ঘ্য পরিমাপের কার্যে ব্যবহৃত পরিমাপক ফিতা বা অন্য কিছু প্রকৃত দৈর্ঘ্য অপেক্ষা অধিক দৈর্ঘ্য প্রদর্শনকারী হওয়া; (ঞ) কোন নকল পণ্য বা ঔষধ প্রস্তুত বা উৎপাদন করা; (ট) মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বা ঔষধ বিক্রয় করা বা করিতে প্রস্তাব করা; বা (ঠ) সেবা গ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হইতে পারে এমন কোন কার্য করা, যাহা কোন আইন বা বিধির অধীন নিষিদ্ধ করা হইয়াছে; * “সেবা” অর্থ পরিবহন, টেলিযোগাযোগ, পানি-সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, জ্বালানী, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নির্মাণ, আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁ এবং স্বাস্থ্য সেবা, যাহা ব্যবহারকারীদের নিকট মূল্যের বিনিময়ে লভ্য করিয়া তোলা হয়, তবে বিনামূল্যে প্রদত্ত সেবা ইহার অর্ন্তভুক্ত হইবে না৷ |
কোনো দ্রব্য বা সেবার মূল্য বেশি মনে হলে, দ্রব্যের মান খারাপ হলে, মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি তথা মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা যায়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ-২০০৯ আইনে বলা হয়েছে, “ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ, ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধ ও তৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে বিধান করিবার লক্ষ্যে প্রণীত আইন।”
কোনো কোম্পানি মিথ্যা-বানোয়াট বিজ্ঞাপন প্রচার করলেও ভোক্তা অধিকার আইনে মামলা হতে পারে।
অনুচ্ছেদ ৪০-এ বলা হয়েছে, “কোন ব্যক্তি কোন আইন বা বিধির অধীন নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে কোন পণ্য, ঔষধ বা সেবা বিক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব করিলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।”
কোনো ভোক্তা বা যে কেউ যদি মনে করে পণ্যটির মূল্য অনেক বেশি, যা হওয়া উচিৎ নয়, তাহলে সে উক্ত অনুচ্ছেদের অধীনে মামলা করতে পারবে। ধরা যাক, ‘ক’ প্রকাশনীর একটি বইয়ের মূল্য গায়ে লেখা আছে ৭০০ টাকা, এবং কমিশন নির্দিষ্ট না থাকায় বিক্রেতা সেটি ইচ্ছেমত মূল্যে বিক্রী করতে পারে, যদি বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের মনে হয় লিখিত এ মূল্য ঠিক হয়নি, তাহলে ৪০ অনুচ্ছেদের অধীনে আদালতের মাধ্যমে সে ব্যাখ্যা চাইতে পারে। বাংলাদেশে ওষুধ, খাদ্যপণ্য এবং প্রাকশনা ব্যবসায় ভোক্তা অধিকার আইন খুব বেশি লঙ্ঘিত হয় বলে জানা গেছে। দেখা যায়, নিউজপ্রিন্ট কাগজে এমনভাবে বই ছাপা হচ্ছে, যা পড়া যায় না, ভুলে ভরা বই ছাপা হচ্ছে, একই জিনিস বারে বারে বিভিন্ন বইতে ছাপা হচ্ছে, বিষটি নিয়ে কোনো সচেতন নাগরিক আদালতে মামলা করে প্রতিকার চাইতে পারে। কোনো চিকিৎসকের কাছে হেনস্থার শিকার হলে, তিনি অপ্রয়োজনীয় ওষুধ চাপিয়ে দিলে, অহেতুক একগাদা টেস্ট দিলে, অথবা বিশেষ কোনো ক্ষতির শিকার হলে আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার চাওয়া যায়।
আইনটি ভাড়াটিয়াদের ক্ষেত্রেও প্রয়োজ্য। কোনো ভড়াটিয়া যদি মনে করে যেসকল সুবিধা ভাড়ার বিনিময়ে পাওয়ার কথা, তা তিনি পাচ্ছেন না, তাহলে মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন তিনি।
অনুচ্ছেদ ৪৩-এ বলা হয়েছে, “কোন ব্যক্তি মানুষের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয় এমন কোন প্রক্রিয়ায়, যাহা কোন আইন বা বিধির অধীন নিষিদ্ধ করা হইয়াছে, কোন পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ করিলে তিনি অনূর্ধ্ব দুই বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।” ওষুধ এবং খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে এ আইনটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য।
অনুচ্ছেদ ৩৭-এ বলা হয়েছে, “ কোন ব্যক্তি কোন আইন বা বিধি দ্বারা কোন পণ্য মোড়কাবদ্ধভাবে বিক্রয় করিবার এবং মোড়কের গায়ে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওজন, পরিমাণ, উপাদান, ব্যবহার-বিধি, সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, প্যাকেটজাতকরণের তারিখ এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করিবার বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করিয়া থাকিলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।”
অনুচ্ছেদ ৩৮-এ বলা হয়েছে, “ কোন ব্যক্তি কোন আইন বা বিধি দ্বারা আরোপিত বাধ্যবাধকতা অমান্য করিয়া তাহার দোকান বা প্রতিষ্ঠানের সহজে দৃশ্যমান কোন স্থানে পণ্যের মূল্যের তালিকা লটকাইয়া প্রদর্শন না করিয়া থাকিলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।”
প্রায় সকল ক্ষেত্রে আমাদের দেশে অনুচ্ছেদ ৩৮-এর এই আইনটি লঙ্ঘিত হচ্ছে।
প্রয়োজনীয় সব আইনই দেশে আছে, কিন্তু আইনের প্রয়োগ নেই। সচেতন মানুষ মামলা করতে এগিয়ে আসে না বলে দুর্বৃত্তরা পার পেয়ে যায়। বেশিরভাগ মানুষ সচেতন নয়, একথাও সত্য। দেশে যে ভোক্তা অধিকার আইন আছে, এটাই হয়ত বেশিরভাগ মানুষ জানে না। আইনটি শুধু আছেই না, আইনটি প্রবলভাবে কার্যকরীও। জানতে হবে, মানুষকে জানাতে হবে যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনটি কী এবং কীভাবে এই আইন থেকে সাধারণ মানুষ এর সুফল পেতে পারে।
১৯৮৩ সালের ১৪ মার্চ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ‘আন্তর্জাতিক ভোক্তা অধিকার দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন গৃহীত হয়েছে ২০০৯ সালে। ১৯৬২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি বলেছিলেন, “একজন ভোক্তাকে যদি খারাপ পণ্য দেয়া হয়, যদি পণ্যমূল্য অধিক হয়, যদি ওষুধ সঠিক মাত্রায় না থাকে, যদি ভোক্তা পছন্দমতো নির্ভরযোগ্য পণ্য না পায়, তখন তার পয়সার শ্রাদ্ধ হয়, সম্পদ ও জীবন শঙ্কায় পড়ে ও জাতীয় স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর পরই যুক্তরাষ্ট্র ভোক্তা অধিকার আইন পাস করে। এ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হলো- ভোক্তাকে সঠিক মানের পণ্য বা সেবা ন্যায্য দামে পাওয়ার অধিকার সৃষ্টিতে সহায়তা করা। প্রতি বছর দিবসটি বিশ্বব্যাপী অভিন্ন সুরে পালিত হলেও আমাদের দেশে আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে প্রতি পদে পদে।