মূলত ব্যক্তিস্বার্থেই সুন্দরবন ঘিরে এনজিওগুলো পরিচালিত হয়। এখানে রাষ্ট্রের স্বার্থ না থাকলেও যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তাদের স্বার্থ জড়িত থাকে। বিগত রাজনৈতিক সরকারগুলো যখন ক্ষমতায় ছিলো, তখন অন্তত সেটিই হয়েছে। দেখার বিষয়— এখন কোনো পরিবর্তন হয় কিনা।
যেমন— সুন্দরবনের গা ঘেষে যে রিসোর্ট করা যায়, এই উদাহরণটি প্রথম তৈরি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল, যেখানে বিগত সরকারের কর্তাব্যক্তিদের স্বার্থ এবং লোকাল এনজিও-এর স্বার্থ জড়িত ছিলো। বলা হয়েছিলো এই রিসোর্ট নির্মাণের ফলে স্থানীয় মানুষের সুন্দরবনের ওপর নির্ভরতা কমবে। দশটি রিসোর্ট তারা করেছিলো। টিকে আছে একটা। স্থানীয় জনগণের কোনো লাভ হয়নি, বরং বাইরে থেকে শখের ভ্রমণকারীরা গিয়ে সুন্দরবনের এটাওটা চায় বলে বনজ এবং জলজ সম্পদের ক্ষতিসাধন বেড়েছে।
পাশাপাশি এই উদাহরণ যে কুফল বয়ে এনেছে, সেটি হলো সুন্দরবনের ডাংমারি খালের পাড়টি এখন কালো টাকার রিসোর্ট বাজারে পরিণত হয়েছে। প্রায় বিশটি রিসোর্ট সেখানে স্থাপিত হয়েছে। দু’একটি ব্যতিক্রম বাদে বিনিয়োগকৃত বেশিরভাগ টাকাই বিগত সরকারের আমলের রাজনীতিক এবং আমলাদের লুটপাটকৃত অর্থ। গোপালগঞ্জ, খুলনা, সিলেট, মুন্সিগঞ্জ সহ বিভিন্ন জেলার মানুষের কালো টাকার বিনিয়োগ এখানে রয়েছে।
রিলিফি ইন্টারন্যাশনালের পরে সুন্দরবন ঘিরে এবং ঘেঁষে আরো অনেক এনজিও স্থাপনা নির্মাণ করেছে, যেগুলো সুস্পষ্টভাবে সুন্দরবনের ক্ষতি করেছে। ড্যাংমারি গ্রামেই একটি এনজিও সুন্দরবনের সীমানার মধ্যে গড়ে তুলেছে একটি দোতলা ভবন। সেটির ব্যবহার উদ্দেশ্য নিয়ে এলাকাবাসী সন্দিহান, কিন্তু ক্ষতি যা করার করে ফেলেছে।
বানিশান্তা ইউনিয়নের ডাংমারি নদীর পাড়ে সুন্দরবনের সাথে যে রিসোর্টগুলো নির্মিত হয়েছে, সেগুলোর কোনো পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকলেও বিগত সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং স্থানীয় প্রশাসন মাসে মাসে টাকা নেয় বলে অনেক রিসোর্ট মালিকরাই নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকার করেছেন।
স্থানীয় এবং সুন্দরবনপ্রেমী সচেতন মানুষের দাবী সুন্দবনকে ঘিরে যাতে সকল ধরনের অপকর্ম এবং অবৈধ ব্যবসা বন্ধ হয়, এজন্য পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়।