রাষ্ট্রদ্রোহিতা তো হয়েছেই, মামুনুল হকদের সাজা দিতে তাহলে বাধা কোথায়?

Babu Nagari, Mamunul Haque, Foizul Karim

প্রথমে আসা যাক— হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ভাস্কর্যে বিষয়ে কী বলেছিলেন?

১৩ নভেম্বর (২০২০) ঢাকার বিএমএ মিলনায়তনে খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগরীর এক অনুষ্ঠানে মামুনুল হক বলেন, “ধোলাইখালে (ধোলাইরপাড়ে) বঙ্গবন্ধুর মূর্তি স্থাপন বঙ্গবন্ধুর আত্মার সঙ্গে গাদ্দারি করার শামিল। যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন করে তারা বঙ্গবন্ধুর সু-সন্তান হতে পারে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান একজন মুসলিম হিসেবে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তার মূর্তি তৈরি করে রাস্তার মোড়ে মোড়ে স্থাপন, এটা বঙ্গবন্ধুর আত্মার সঙ্গে বেইমানি করা হবে।”

Babu Nagari, Mamunul Haque, Foizul Karim
বাবুনগরী, মামুনুল হক এবং ফয়জুল করীম

তিনি আরও বলেন, “আমরা বারবার দেখতে পাচ্ছি, এই মসজিদের শহরের গৌরবময় পরিচয়কে মুছে দিয়ে এটাকে মূর্তির শহরে পরিণত করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। এ দেশের তৌহিদী জনতা আবার শাপলা চত্বরে যাবে।” (১৪ নভেম্বর ২০২০, বিডিনিউজ)

এরপর মামুনুল হক সংবাদ সম্মেলন করে তার সংশোধিত বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একজন মরহুম মুসলিম নেতা হিসেবে পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা করি এবং তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি। কখনো কোনভাবেই এমন একজন প্রয়াত মরহুম জাতীয় নেতার বিরুদ্ধাচারণ করি না এবং করাকে সমীচীনও মনে করি না। আবারো স্পষ্ট করে বলছি আমাদের বক্তব্য ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে, কোনোভাবেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নয়।” (২৯ নভেম্বর ২০২০, দৈনিক ইত্তেফাক)

এখানেও একবারও তারা বঙ্গবন্ধুকে ‘জাতির পিতা’ সম্মোধন করেননি, সেটি তারা কখনই করবেন না। পাশাপাশি ভাস্কর্য স্থাপনের বিরুদ্ধে তাদের অনঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেন।

এছাড়াও মি. মামুনুলের আরো কিছু বক্তব্য আগ্রহী পাঠকদের জন্য এখানে সংযুক্ত করছি:

লিঙ্ক (এডিট, মুক্তির গান): https://www.facebook.com/100009465077095/videos/2860093544316120/

বক্তব্য:

‘কীভাবে আল্লাহ নবী ঐ সময় ঠোঁঠ দিয়ে উচ্চারণ করতেন, কীভাবে কোরআনের আয়াতগুলো নবীজী পড়তেন, সেটা আমি বলতে পারব। আলহামদুলিল্লাহ বলবেন না? আমি বলতে পারব আল্লাহ নবীর ঠোঁঠ কীভাবে নড়ত, আমি ঠোঁঠ নাড়ায়ে আপনাদেরকে দেখায়ে দিতে পারব। দেখতে চান? লক্ষ্য করেন, নবীজী কীভাবে ঠোঁঠ নাড়তেন, আমি দেখাই আপনাদেরকে …’

‘বলদ ষাঁড় জাফর ইকবাল কীভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার … কয়েকটা নাস্তিক, এর মধ্যে বড় একটা নাম হচ্ছে ভূতের বাচ্চা জাফর ইকবাল।’

রাজনীতিবিদ রাশেদ খান মেনন, প্রখ্যাত লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক …

মামুনুল হক বলেন, ‘এই তিনজনকে যে জায়গায় পাওয়া যাবে সঙ্গে সঙ্গে জুতা খুলে পিটাইতে হবে।

এমন শত শত রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিদ্বেষ ও ঘৃণা প্রকাশ করার শত শত ভিডিও আছে।

মামুনুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কথা আমরা মানতে প্রস্তুত না। লাসের পর লাস পড়বে, রক্তের বন্যা বইবে।’

আওয়ামী লীগের তৎকালনীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সমর্থক যারা তারা পালানোর পথ পাবে না।’

আরেক জায়গায় তিনি বলেন, ‘বঙ্গভবন, গণভবন, সংসদ ভবন সব ভেঙে যাবে বঙ্গোপসাগরে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনার মন্ত্রীদেরকে সামলান। গাজাখোর হানিফকে সামলান, আইনমন্ত্রীকে সামলান। রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইন— আপনি মুরতাদদেরকে সামলান। যদি সামলাতে না পারেন বিদ্রোহের আগুন ধরিয়ে দেওয়া হবে। পিঠের চামড়া খুঁজে পাবে না।’

নিচের ভিডিওটিতে বলেন, পারমাণবিক বোম বানানোর বিজ্ঞানী দরকার। একটি পারমাণবিক বোম বানিয়ে তিনি হোয়াইট হাউজ উড়িয়ে দিতে চান।’

যঃঃঢ়ং://ভন.ধিঃপয/২৪ঃি১৯পর৬ফ/ (লিংক)

এই ভিডিওটিতে মামুনুল হক শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে আক্রমণ করেন ।

https://youtu.be/E73Lpl52BFs?t=58

এই ভিডিওতে তিনি পহেলা বৈশাখকে হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি হিসেবে বর্ণনা করেন। মঙ্গল শোভাযাত্রাকে শিরক হিসেবে বর্ণনা করে তিনি তা প্রতিহত করার ডাক দেন। পহেলা বৈশাখ মামুনুল হকের ভাষায় দিল্লির সংস্কৃতি। অথচ পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ, যা দিল্লি সংস্কৃতি হওয়ার কোনো কারণ নেই।

https://youtu.be/QsFN6QmgQv8?t=474

এই ভিডিওতে তিনি জীবন পরোয়া না করে রক্ত দেওয়ার জন্য শাপলা চত্বরে ছুটে আসতে বলেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের।

https://youtu.be/ABe4Ee8s1Kc?t=174

এই ভিডিতে জাতীয় সংসদের সদস্যদের কটাক্ষ করে তিনি বলেন, শিক্ষিত হলেও তারা আধা লাইনের আরবী পড়তে পারে না। তিনি আরো বলেন, মৃত্যুর পর কবর থেকে শুরু হবে শুধু আরবী ভাষা।

https://youtu.be/ThGuJNTf9Gs?t=12

প্রখ্যাত কথাশিল্পী অধ্যাপক জাফর ইকবালকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক জাফর ইকবাল নাকি বিবর্তনবাদের অন্যতম একজন প্রবক্ত।’

কীভাবে তা সম্ভব? এটা প্রায় সকল শিক্ষিত মানুষেরই জানা আছে যে, বিবর্তনবাদের প্রবক্তা এবং প্রস্তাবক হচ্ছেন চার্লস ডারউইন। তাহলে?

https://youtu.be/LCAsfHwAFeM?t=14

সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে নির্দোষ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিনা বিচারে তাকে জেলে বন্দী করে রাখা হয়েছে।’

https://youtu.be/sW-Af1oAoe4?t=62

এই ভিডিওটিতে শাহরিয়ার কবিরের বক্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে তিনি তাকে হুমকি প্রদান করেন। টকশোতে তিনি কোনো জবাব খুঁজে না পেলেও পরবর্তীতে মাঠের ওয়াজে অপ্রসাঙ্গিকভাবে তিনি প্রখ্যাত লেখক সাংবাদিক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শাহরিয়ার কবিরকে টেনে আনেন। এখানে তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডকেও বৈধ বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছেন।

ভাস্কর্য বিষয়ে হেফাজতের মহাসচিব বাবুনগরীর বক্তব্য:

ছাত্রলীগ ও যুবলীগের প্রতিহতের ডাক ও রাজপথে অবস্থানের মধ্যে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ধর্মীয় মাহফিলে যোগ দিতে পারেননি হেফাজত নেতা মামুনুল হক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ হতে না দেয়ার ঘোষণা দেওয়া হেফাজতের এ যুগ্ম মহাসচিবের হাটজারীর মাহফিলে প্রধান বক্তা হিসেবে ২৭ নভেম্বর উপস্থিত থাকার কথা ছিল।

সেই একই অনুষ্ঠানে গিয়ে জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, “আমি কোনো পার্টির নাম বলছি না, কোনো নেতার নাম বলছি না…. কেউ যদি আমার আব্বার ভাস্কর্য স্থাপন করে, সর্বপ্রথম আমি আমার আব্বার ভাস্কর্যকে ছিঁড়ে, টেনে-হিঁচড়ে ফেলে দেব”।

শুক্রবার সন্ধ্যাবেলা চট্টগ্রামের হাটহাজারীর একটি স্কুল মাঠে তিন দিনের একটি ওয়াজ মাহফিলের সমাপনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন জনাব বাবুনগরী।

২০১৪ সালে এক বক্তৃতায় শেখ হাসিনা রূপক অর্থে বাংলাদেশে মদিনা সনদ বাস্তবায়ন করা হবে বলে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, সেই বক্তব্যের কথা মনে করিয়ে দিয়ে জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, “মদিনা সনদে যদি দেশ চলে, তাহলে কোন ভাস্কর্য থাকতে পারে না”।

“মদিনা সনদে যদি দেশ চলে, ইসলামবিরোধী কোনো কাজ হতে পারবে না… ইনশাআল্লাহ প্রধানমন্ত্রী দেবে না, দেবে না। কারণ উনি নিজে ঘোষণা করেছেন মদিনা সনদে দেশ চলবে।”

ভাস্কর্য বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের নেতা সৈয়দ ফয়জুল করিমের বক্তব্য:

১৩ নবেম্বর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা সৈয়দ ফয়জুল করিম ধোলাইখালের নিকটে গেন্ডারিয়া নামক স্থানে তার নসিহত শুনতে আসা সাধারণ মুসলমানদের হাত উঁচু করে শপথ পড়িয়ে নেন যে, “আন্দোলন করব, সংগ্রাম করব, জেহাদ করব। রক্ত দিতে চাই না। কিন্তু দেয়া শুরু করলে বন্ধ করব না। রাশিয়ার লেলিনের বাহাত্তর ফুট মূর্তি যদি ক্রেন দিয়ে তুলে সাগরে নিক্ষেপ করতে পারে তাহলে আমি মনে করি শেখ সাহেবের এই মূর্তি আজ হোক অথবা কাল হোক খুলে বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করবে।”

https://fb.watch/2f3XVEnu6p/লিংক: 

বাংলাদেশ কিন্তু খেলামত রাষ্ট্র নয়, শরিয়া আইনে বাংলাদেশ চলে না। বাংলাদেশ পরিচালিত হয় সংবিধান মোতাবেক। দেখে নেওয়া যাক সংবিধান এ বিষয়ে কী বলছে—

সংবিধারনের ২৪ অনুচ্ছেদে বলা আছে— ‘বিশেষ শৈল্পিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎর্যমণ্ডিত স্মৃতিনিদর্শন, বস্তু বা স্থানসমূহকে বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ হইতে রক্ষা করিবার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’

অর্থাৎ ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করার সুযোগ কারো সংবিধান অনুযায়ী নেই। কেউ ভাস্কর্য অপসারনের কথা বললে, তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ২১ অনুচ্ছেদে বলা আছে ‘(১) যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগান্ডা ও প্রচারণা চালান বা উহাতে মদদ প্রদান করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

‘(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১০ (দশ) বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক ১ (এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

‘(৩) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, বা ৩ (তিন) কোটি টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’

জাতির পিতা, জাতীয় সংগীতের পুঃন পুঃন অবমাননা করা সত্ত্বেও এরপরও আমাদের রাষ্ট্র কেন চুপ থাকবে?

এবার দেখে নেওয়া যায়— সংবিধান থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বাদ দিয়ে যারা ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ করতে চান তাদের জন্য সংবিধানে কী বার্তা আছে:

আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনার ২য় ধাপে বলা আছে ‘যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল— জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে।’
একইরকমভাবে ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে— ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য (ক) সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িকতা, (খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান, (গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার, (ঘ) কোনো বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন, বিলোপ করা হইবে।’
আবার সংবিধানের ৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে— কীভাবে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে অর্থাৎ ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহ (১) জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা— এই নীতিসমূহ এবং তৎসহ এই নীতিসমূহ হইতে উদ্ভূত এই ভাগে বর্ণিত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে।’

তাহলে আমরা সংবিধান থেকে কী পেলাম? সংবিধানের শুরুতে প্রস্তাবনায় দেখলাম— ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে ধর্ম নিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রের করণীয়। ধর্মনিরপেক্ষতা এখানে পরিষ্কার। নয় কি?

এখন যারা বলছেন— ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধান থেকে বাদ দিতে হবে, কীভাবে বাদ দিবেন তা, যদি সংবিধান অস্বীকার না করেন? তাদের জন্য অন্য কোনো রাস্তা কি আছে? নেই। অর্থাৎ এরা যেটা বলছে তা মুক্তিযুদ্ধ এবং ত্রিশ লক্ষ শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকে অস্বীকার করার সামীল। 

সংবিধানের ৭ নম্বর অনুচ্ছেদের খ ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে যে, ‘সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলী সংশোধন অযোগ্য’। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমুহের বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোন পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।’

যতদিন বাংলাদেশের সংবিধানে ৭খ অনুচ্ছেদ বহাল থাকবে ততদিন সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল করা সম্ভব নয়। আবার সংবিধানের ৭ নম্বর অনুচ্ছেদের ক ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে যে, ‘সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ, ইত্যাদি অপরাধ— (১) কোন ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোন অসাংবিধানিক পন্থায় এই সংবিধান বা ইহার কোন অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে; কিংবা

(খ) এই সংবিধান বা ইহার কোন বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে— তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে।

(২) কোন ব্যক্তি (১) দফায় বর্ণিত— (ক) কোন কার্য করিতে সহযোগিতা বা উস্কানি প্রদান করিলে; কিংবা

(খ) কার্য অনুমোদন, মার্জনা, সমর্থন বা অনুসমর্থন করিলে— তাহার এইরুপ কার্যও একই অপরাধ হইবে।

(৩) এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত অপরাধে দোষী ব্যক্তি প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।

অতএব, দেখা যাচ্ছে যে, মামুনুল হক বাবুনগরীরা সুস্পষ্টভাবে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধ করেছেন, তাহলে তাদের সাজা দিতে বাধা কোথায়?