একজন পাকিস্তানি পিতার আর্তি: চীন তার উইঘুর পুত্র-কন্যাকে ধরে নিয়ে বন্দি শিবিরে পাঠিয়েছে

উইঘুর

উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর চীনা সরকার দিনের পর দিন যে অভিযান চালিয়ে আসছে তার প্রভাব পড়ছে পাকিস্তানি উইঘুর, বিশেষ করে চীন থেকে যারা পালিয়ে এসেছে তাদের ওপরও। চীনের সাথে পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন স্বার্থ জড়িয়ে থাকায় তারা ব্যাপারটিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে সংকট থেকে বের হওয়ার কোনো পথও মিলছে না।
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর মুসলিমের বাস। উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর চীনা সরকারের চালানো নির্যাতনের শিকারদের মধ্যে একজন সিকান্দার হায়াত। হায়াত সহ এমন আরও কয়েকজনের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ‘লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস্’।


সেকেন্দার হায়াত
সিকান্দার হায়াত, একজন পাকিস্তানি, যার উইঘুর স্ত্রী চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলের কাশগরে আটক ছিলেন এবং তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছিল, তিনি তার পরিবারের সাথে পুনরায় একত্রিত হওয়ার আশা করছেন। (মাশাল বালুচ / দ্য টাইমসের জন্য)

সিকান্দার হায়াত তার ছেলেকে নিয়ে চীন থেকে তার জন্মস্থান পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন সেবারের রমজান মাসটা বিশেষভাবে কাটবেন। কিন্তু এখান থেকেই শুরু হয় তাদের জীবনের এক ভয়ানক অধ্যায়ের। পাকিস্তানে তারা তিন সপ্তাহের মতো একসঙ্গে কাটান। এরপর একদিন তাদের কাছে খবর আসে যে, চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে থাকা সিকান্দারের স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে।
ছেলে আরাফাতকে নিয়ে ফেরার জন্য চীনের সীমান্তে যান সিকান্দার। সেখানে থাকা চীনা পুলিশ স্ত্রীর মতো ছেলে আরাফাতকেও আটক করে। পুলিশ জানায়— পাকিস্তানে তারা কী করেছে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে ছেলেকে ফেরত পাবেন বলে সিকান্দারকে সে সময় পুলিশ জানিয়েছিল। এ ঘটনার পর প্রায় দুই বছর সময় পেরিয়ে যায়। কিন্তু ছেলের দেখা আর পায় না সিকান্দার। সিকান্দার বলেন, কারাগারের চেয়েও ভয়ংকর জায়গায় নিজের প্রিয়জনদের থাকার খবর খুবই কষ্টের। স্ত্রী ও ছেলেকে আটকের পর চীন দুই বছর আমাকে ভিসা দেয়নি। আমাকে না জানিয়ে আমার সাত বছর ও বারো বছর বয়সী দুই মেয়েকে এতিমখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়, যেগুলো কার্যত চীনা কর্তৃপক্ষের বন্দীশিবির। তিনি পাকিস্তান ও চীন উভয় দেশের কাছেই স্ত্রী ও সন্তানের খবর চেয়ে আবেদন করেছিলেন। তখন চীনের কর্মকর্তারা জানিয়েছিল, ক্যাম্পে তার ছেলে ‘পড়াশোনা’ করছে।
দক্ষিণ জিনজিয়াং প্রদেশের বাসিন্দা মোহাম্মদ ২০০০ সাল থেকে পাকিস্তানে ব্যবসা করতেন। তিনি জানান, তাকে ক্যাম্পে সাত মাস আটকে রাখা হয়। ২০১৮ সালে সীমান্ত অতিক্রম করার সময় তাকে আটক করা হয়। এরপর ক্যাম্পে একটি কক্ষে ৩৫ জনের সঙ্গে তাকেও হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়।
তিনি জানান, প্রতিদিন ভোর ৪টায় তাদের ডেকে তোলা হত। এরপর চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বিষয়ে তাদের জ্ঞান দেওয়া হতো। মোহাম্মদ বলেন, সেখানে আমাদের বলা হতো, কমিউনিস্ট পার্টি আমাদের খাবার দিচ্ছে এবং পার্টি ছাড়া উইঘুরদের কোনো অস্তিত্ব নেই। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি না থাকলে তাদের না খেয়ে মরতে হবে। তারপর তাকে পার্টি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রশংসা করে গান গাইতে বাধ্য করা হতো।
এরপর তাদের ব্যায়াম করতে হতো। তাদের গরম পানি এবং এক টুকরো রুটি খেতে দেওয়া হতো। তাদের পাঁচ ঘণ্টা চীনা ভাষা শেখানো হতো। পাকিস্তান থেকে স্ত্রী ও সন্তানকে জিনজিয়াংয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার শর্তে মোহাম্মদকে মুক্তি দেওয়া হয়।
মোহাম্মদ জানান, মাঝে মাঝেই শিবিরের রক্ষীরা এসে উইঘুরদের বাসা থেকে প্রার্থনা চাদর এবং ধর্মগ্রন্থ নিয়ে পুড়িয়ে ফেলত। এটা তারা প্রায়ই করে— উইঘুরদের বাড়ি থেকে ধর্মীয় বই বাজেয়াপ্ত করে। তারা বন্দীদের বলে, “তোমরা তুর্কী নও। উইঘুররা চীনা। তোমাদের আমাদেরই মতো হতে হবে।”

উইঘুর কনসেনট্রেশন ক্যাম্প
জিনজিয়াংয়ে উইঘুর বন্দী শিবির (দ্য জিনজিয়াং পুনঃশিক্ষা শিবির, সরকারিভাবে ভোকেশনাল এডুকেশন এবং ট্রেনিং সেন্টার নামে পরিচিত)। চীন বলেছে যে, শিবিরগুলো সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা

তিনি বলেন, বন্দী শিবিরের রক্ষীরা আমাকে বৈদ্যুতিক লাঠি দিয়ে মারধর করে— কেন আমি পাকিস্তানে গিয়েছিলাম, তারা আমার বিরুদ্ধে পূব তুর্কিস্তান ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ তুলেছিলো? বিপরীত দিকেও আমাদের বিপদ রয়েছে— চীনবিরোধী একটি জঙ্গিগোষ্ঠী যারা সিরিয়ায় যোদ্ধা প্রেরণ করেছিল, তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, আমি প্রার্থনা করি কিনা, এবং যখন আমি “না” বলেছিলাম তখন তারা আমাকে পিটিয়ে বলল, “আপনি কি মুসলিম নন?”
চীনা রক্ষিদের কথা উল্লেখ করে মোহাম্মদ বলেন, “আপনি আস্তে আস্তে কথা বললে তারা আপনাকে মারবে। আপনি যদি জোরে কথা বলেন তাহলেও তারা আপনাকে মারবে। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, “আমি তাহলে কীভাবে কথা বলব? আমি কীভাবে উত্তর দেব? আমাকে মারবেন না, আমি সবকিছুর সুস্পষ্ট জবাব দেব। কিন্তু তারপরও মারধর অব্যাহত ছিল।’’
অবশেষে এই শর্তে মোহাম্মদকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল যে, তিনি তার স্ত্রী ও সন্তানদের পাকিস্তান থেকে জিনজিয়াং-এ ফিরিয়ে আনবেন এবং চীনা কর্তৃপক্ষের জন্য একজন তথ্যদাতা হিসাবে কাজ করবেন। এই শর্তের বিপরীতে জিনজিয়াং-এ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা জামানতে পরিণত হয়েছিল।
“তবে আমি আর চীনে ফিরে যাব না” রাওয়ালপিন্ডিতে বসে এক সাক্ষাৎকারে তিনি ‘লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস্কে’ একথা বলছিলেন। শৃঙ্খল, মারপিট এবং বৈদ্যুতিক শক থেকে সৃষ্টি হওয়া চিহ্নগুলি তখনো তার কব্জি, বাহু, পিঠে এবং পায়ে চিহ্নিত হয়েছিল। “চীন একটি অন্ধকূপ, আমাদের ঘরগুলি অত্যাচারের কোষ, এবং সেখানে নির্যাতনে মৃত্যু বা ফাঁসি আমার এবং আমার পরিবারের জন্য অপেক্ষা করছে।” কিছুদিন পর তিনিও পাকিস্তান ত্যাগ করেন।
অনেক মুসলিম দেশের মতো পাকিস্তানও চীনের বিরোধিতা করে না। কারণ, চীন তাদের বিশাল ঋণের জালে বন্দী রেখেছে, পাশাপাশি চীনের কাছ থেকে পাকিস্তান সামরিক সহায়তা পেয়ে থাকে। চীন তাদের অস্ত্র রপ্তানির চল্লিশ ভাগ করে থাকে পাকিস্তানে। এছাড়া পাকিস্তানের অনেক কাঠামোগত উন্নয়নের অংশিদারও চীন। কাশগড় থেকে আরব সাগর পর্যন্ত রাস্তা এবং রেলপথ হিসেবে দুই হাজার মাইলের “চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর” যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কীভাবে বিনিয়োগ প্রকল্পগুলো বজায় রাখার মাধ্যমে উইঘুরদের দুর্দশার বিষয়ে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, ঋণ এবং চাপ দিয়ে মুসলিম দেশগুলোকে নিরব রেখে কর্তৃত্ববাদ জোরদার করছে চীন তা নিয়ে সম্প্রতি পাকিস্তানের ডন পত্রিকা একটি কলাম প্রকাশ করে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বার বার জিনজিয়াং-এ চীনের পদক্ষেপ সম্পর্কে কিছু বুঝতে অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন যে, বিষয়টা চীনের নিজস্ব। তিনি ফিনান্সিয়াল টাইমস্, আল জাজিরা এবং তুরস্কের নিউজ চ্যানেল টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে গত বছর সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, উইঘুরদের সম্পর্কে তিনি “বেশি কিছু জানেন না”। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, “আমি চীন সম্পর্কে একটি কথাই বলব— পাকিস্তানের পক্ষে চীন সবচেয়ে ভাল বন্ধু হয়ে আছে।”
“মানবাধিকারের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় কৃতিত্বের” দাবী করে গত বছর জাতিসংঘকে চীনের “শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র” রক্ষার পক্ষে একটি চিঠি প্রদান কর হয়, যেখানে ৩৬টি দেশ স্বাক্ষর করে। যার মধ্যে পাকিস্তানও রয়েছে। 
খাইবার-পাখতুনখোয়ার ৬৩ বছর বয়সী পাকিস্তানি ব্যবসায়ী বাছা জানান— তিনি ১৯৮৮ সাল থেকে জিনজিয়াং-এর রাজধানী উরুমুকিতে বসবাস করেছিলেন এবং ২০০১ সালে সেখানে একজন উইঘুরকে বিয়ে করেন। কিছুদিন পর তিনিও পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করেন। পরিবারের সদস্যদের তিনি কোথায় কীভাবে রেখে গিয়েছিলেন সেসব কিছু টাইমস্-কে স্পষ্ট করে বলেননি। ২০০৯ সালে সুরক্ষা ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছিল— উরুমুকিতে দাঙ্গায় প্রায় ২০০ মানুষ মারা গিয়েছিল।
কমিউনিস্ট পার্টি হান সম্প্রদায়ের চীনা জনগণ এবং সংস্থাগুলোকে জিনজিয়াং-এ যেতে উৎসাহিত করার সাথে সাথে জাতিগত উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। অনেক উইঘুর তাদেরকে সুযোগবাদী হিসাবে দেখেছিল যারা সর্বাধিক চাকরি বাগিয়ে নিয়েছিল এবং সরকারি সম্পদগুলো যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করছিল। চীন সরকার আত্তীকরণ ও শক্তি প্রয়োগের মধ্য দিয়ে অস্থিরতা কাটানোর চেষ্টা করেছে। তারা ধর্মীয় পোশাক নিষিদ্ধ করেছে, দেশপ্রেমিক শিক্ষার নামে শিক্ষা-সংস্কৃতি চাপিয়ে দিয়েছে। এবং সবসময় উইঘুর সম্প্রদায়ের লোকেদের ওপর নজরদারি করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সহিংসতার পাশাপাশি জাতিগত সহিংসতা ক্রমান্বয়ে আরও বেড়েছে— ২০১২, ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে তিয়ানানমেন স্কয়ারের একটি ভিড়ের মধ্যে বিমান ছিনতাই, ছুরি হামলা, বোমা হামলা এবং একটি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটার কারণে বেসামরিক লোকজন ও পুলিশে উইঘুরদের ওপর হামলা শুরু করেছিল।
হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ এবং চীনের সরকানি নথিগুলি থেকে প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক তদন্তকারী সংস্থাগুলির কাছে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, দাড়ি বড় করা, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা বা বিদেশে পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করার মতো নিরীহ কারণগুলির জন্যও উইঘুরদের নির্যাতিত হতে হয়। হান ক্যাডারদের উইঘুর বাসাতেও প্রেরণ করা হত— প্রায়শই উইঘুর পুরুষদের আটক করার সময় উইঘুর নারী ও শিশুদের সাথে অন্যায় ব্যবহার করা হত। “পার্টির প্রতি ভালবাসা” “ধর্মকে প্রত্যাখ্যান করা” এবং “আরও চীনা হয়ে ওঠা”র জন্য তাদের বলা হত। বাছা বলেন, আপনার ওপর সবসময় কেউ নজর রাখছে, আপনি কী করবেন তা বলে দেওয়া হচ্ছে। আপনার মাথায় সবসময় একটা ভয় আটকে থাকবে। ভয় বাতাসে ভ্রমণ করবে।
২০১৬ সালে বাছা দুই সন্তানকে নিয়ে তুরস্কে পালিয়ে যায়। এরপর চাইনিজ পুলিশ তার স্ত্রী এবং ৩, ৪ এবং ৫ বছর বয়সী তার আরও তিন শিশুকে আটক করে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রক এবং চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করার পরে তাকে সম্প্রতি বলা হয়েছিল যে, তিনি তার সন্তানদের বাইরে আনার জন্য পাকিস্তানি পাসপোর্ট পেতে পারেন, তবে তার স্ত্রী জন্য নয়। বাছার স্ত্রীকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কোনো ব্যাখ্যা কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি।
১৯৪০-এর দশকের শেষভাগে জিনজিয়াং ছেড়ে পরিবার নিয়ে পাকিস্তানি নাগরিক হওয়া পাকিস্তানি উইঘুর সম্প্রদায়ের সদস্যরা একইরকম অভিজ্ঞতা এবং হুমকির কথা বলেছেন। রাওয়ালপিন্ডির এক পাকিস্তানি উইঘুর দোকানের মালিক টাইমস্কে বলছিলেন যে, ২০১৮ সালের শেষদিকে তাকে সাদা পোশাকের পাকিস্তানি সুরক্ষা আধিকারিকরা দু’সপ্তাহের জন্য আটক করেছিলো। তাকে তখন তাকে আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, তিনি পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামী আন্দোলনের সাথে যোগাযোগ রাখেন কিনা। জিজ্ঞাসাবাদকারীরা আমাকে বলেছিলেন, এমনকি ব্যক্তিগত কোনো আলাপচারিতায়ও চীনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবেন না। তাহলে জিনজিয়াং-এ বসবাসকারী তার স্বজনদের ওপর আরো বিপদ নেমে আসবে বলে ভয় ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
উইঘুর ভাষা ও সংস্কৃতি প্রচারের চেষ্টা করার জন্য পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের চাপের মুখোমুখি হয়েছেন আরেক পাকিস্তানি উইঘুর মুহাম্মদ উমর খান। খানের বাবা-মা ১৯৬৭ সালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নিপীড়ণ থেকে বাঁচতে কাশগড় থেকে পাকিস্তানে চলে এসেছিলেন। ২০০৮ সালে উমর উইঘুর ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০১০ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে তার বাড়ীর কাছে একটি ছোট স্কুল চালু করেন।
দ্রুতই পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ খানের স্কুলে আসে এবং তাকে স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেয়, কারণ এটি “চীন-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষতি করছে।” খান বলছিলেন, স্কুলটি বন্ধ করতে আমি অস্বীকৃতি জানালে সরকারি কর্তৃপক্ষ স্কুলটি ধ্বংস করে দিয়েছে। স্কুলের কম্পিউটার ভেঙে ফেলেছে এবং পড়াশোনার জিনিসপত্রগুলো বাজেয়াপ্ত করেছে।
২০১৩ সালে খান স্কুলটি আবার খোলার চেষ্টা করেছিলেন, তবে এক মাসের মধ্যে আবার জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ২০১১ সালে তাকে এবং তার ভাইকে সাময়িকভাবে পাকিস্তান ত্যাগ করতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালে খানকে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা নয় দিনের জন্য আটক করেছিলো।
২০১৯ সালের শুরু থেকে পাকিস্তানের উইঘুরদের জন্য “প্রাক্তন চীনা অ্যাসেন” নামে পরিচিত চীনা দূতাবাসের অর্থায়নে পরিচালিত একটি সংস্থাও পাকিস্তানি উইঘুর পরিবারকে চীনে তাদের পরিবারের সদস্যদের নাম এবং ঠিকানা নিবন্ধিত করতে বলা শুরু করে। পাকিস্তানি উইঘুরদের বলা হয়েছিল যে, তারা চীনা অ্যাসেন। তাদের বাচ্চারা বিদ্যালয়ের জন্য যোগ্য কিনা তা নিশ্চিত করতে তাদের আত্মীয়দের সম্পর্কে তথ্য চেয়েছিল। তবে খান চিন্তিত কারণ এই তথ্যগুলো নজরদারীর কাজে ব্যবহার করা হবে।
৪৭ বছর বয়সী খান বলছিলেন, “আমি ভয় পাই, যদিও আমরা একটি মুসলিম দেশে বাস করছি। চীন এখানেও উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর দমননীতি বাস্তবায়ন করছে। আমার আশঙ্ক্ষা তাহলে তারা চীনে বসবাসরত উইঘুরদের সাথে কী-না করছে!”


লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস্-এ প্রকাশিত, ইংরেজি থেকে অনূদিত। দিব্যেন্দু দ্বীপ-এর অনুবাদ এবং সম্পাদনায় নিউজটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে বহুভাষিক বুলেটিন জাগরণ-এর ষষ্ঠ সংখ্যায়।