Headlines

ফিদেল কাস্ত্রো চলে গেলেন, কী রেখে গেলেন?

ফিদেল কাস্ত্রো মারা যাওয়ার পর সামাজিক গণমাধ্যম দেখেলে মনে হচ্ছে- সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবটা হচ্ছে না শুধু কেউ ডাক দিচ্ছে না বলে। অনেকেই, যারা বিপ্লবের, সাম্যবাদী রাজনীতির ধারেকাছেও নেই তারাও ফিদেলকে নিয়ে সুন্দর কিছু বলার চেষ্টা করছে। এর মানে হচ্ছে, ফিদেল কাস্ত্রো বিপ্লবের সফল রূপটা দেখিয়ে যেতে পেরেছেন।

সাধারণ জনগণ মূলত সফলতাটুকু বোঝে, পিছনের বিষয়গুলি বোঝে না বা বুঝতে চায় না। ফলে ফিদেল কীভাবে ফিদেল, কেন ফিদেল, এসবের চেয়ে তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ফিদল কাস্ত্রো একজন সফল রাষ্ট্র নায়ক, যাকে যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশ অনেক চেষ্টা করেও সরাতে পারেনি, অবশেষে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন বয়সের ভারে।

ফিদেল এবং চে’র কারণে সাধারণ জনগণের মধ্য থেকে অনেকেই সাম্যবাদী রাজনীতির একটি সফল রূপরেখা পেয়ে আগ্রহী হবে সমাজতন্ত্র তথা কম্যুনিজম প্রতিষ্ঠায়। বাম রাজনীতি নিয়ে যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে বর্তমান সমাজে তা কিছুটা হলেও দুরীভূত হবে। অর্থাৎ সার্বিক বিবেচনায় ফিদেল শুধু কিউবার জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্য একটি মডেল হয়ে থাকবেন। চে-ফিদেল মডেল ধরে পৃথিবীতে আবার মার্কসবাদী রাজনীতির উত্থান হলে তাতে মোটেই অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

১৯৪০-এর দশকে হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়বার সময়ে ফিদেল কাস্ত্রো রাজনীতিতে জড়িয়েছিলেন। ২০০৮ সালে ভাই রাউল কাস্ত্রোর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে প্রায় অর্ধশতক জুড়ে এক দলীয় কিউবা শাসন করেছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো।

তার সফলতার একটি বড় কারণ বোধহয় এই যে তিনি সময়ের পরিবর্তনটা মেনে নিয়েছিলেন, তিনি বলেন, রাজনীতিতে একটি আদর্শ থাকতে পারে, তবেই মোটেই সেটি স্থির হতে পারে না।

কাস্ত্রো ক্ষমতায় এসেছেন বিপ্লবের মাধ্যমে। মাত্র ৩৩ বছর বয়েসে ১৯৫৯ সালে কিউবার তখনকার শাসক বাস্তিতাকে উৎখাত করে কাস্ত্রো রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছিলেন। পাঁচ দশক ধরে ক্ষমতায় ছিলেন, তার সময়ে আমেরিকা পার করেছ ১০ জন প্রেসিডেন্টের শাসনকাল। বলা হয়ে থাকে- আমেরিকা তাকে ৬শ ৩৮বার হত্যা চেষ্টা করেছে।

কিউবার শিক্ষা এবং চিকিৎসা, এ দুটি মৌলিক চাহিদা পূরণে ফিদেল কাস্ত্রোর সরকার যে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে তা ঈষর্ণীয়। শিশুমৃত্যুর হার নিম্ন, মাথাপিছু আয় কম, কারণ, যেহেতু নাগরিক চাহিদার অনেক কিছু সরকারিভাবে মেটে।

তিনি শুধু যে কিউবার নেতা ছিলেন তা নয়, গোটা দক্ষিণ আমেরিকাতে একটা সমাজতান্ত্রিক বলয় তৈরি হয়েছে মূলত তাকে ঘিরেই। অনুপ্রাণিত করেছেন ভেনেজুয়েলার উগো চাভেজ, বা বলিভিয়ার ইভো মোরালেসের মতো নেতাদের ।

দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী সরকারের পতন এবং নেলসন ম্যান্ডেলার মুক্তিতে তার পরোক্ষ অবদান আছে। তার সামরিক পরিকল্পনার কারণে এংগোলো থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা সৈন্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল। নামিবিয়া স্বাধীন হয়েছিল। যার প্রভাব পড়েছিল আফ্রিকা অঞ্চলের বর্ণবাদ বিরোধী জাগরণে।

তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা, জনগণের সমর্থিত সমাজতান্ত্রিক স্বৈরশাসক, কখনো চাপে নোয়াননি, প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূরণে সচেষ্ঠ ছিলেন সবসময়। স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ জনগণ তার দৃঢ়তা এবং বিজয় মনে রেখেছে। ইতিহাস মনে রাখবে তাকে, বিশ্বে একদিন অবশ্যই সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হবে, সে পথের তিনি একজন অগ্রপথিক, স্বপ্নদ্রষ্টা।