এভারেস্টে বাঙ্গালী নারীর জীবন বাঁচিয়েছেন ব্রিটিশ অভিযাত্রী লিসবন

1

এভারেস্ট চূড়ার থেকে মাত্র হাত ছোঁয়া দূরত্বে ছিলেন তিনি। কিন্তু চূড়ায়  না উঠে ফিরে এলেন ব্রিটিশ অভিযাত্রী লেসলি জন বিনস। তবে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে নয়, কোনো একজনের জীবন বাঁচাতে। একজন ভারতীয় বাঙালি নারীকে বাঁচাতেই হিমালয় জয়ের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছেন লেসলি জন। তার সঙ্গীরা অবশ্য ইতোমধ্যে উঠে গেছে এভারেস্ট চূড়ায়।

এভারেস্ট জয় না করলেও মানবতার চূড়া জয় করে এখন তিনি বিশ্বময় আলোচিত। অভিনন্দনের স্রোতে এখন তিনি ভাসছেন। পর্বতারোহী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিপদে পড়ার একটু আগেই ভারতের এক সন্তানের মা সুনীতি হাজরা এভারেস্ট জয় করে নেমে আসছিলেন। কিন্তু অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাই এভারেস্টের চূড়া থেকে নেমে আসার পথে পড়ে যাচ্ছিলেন এ নারী। সেই সময় তার সাহায্যে এগিয়ে যান লেসলি জন। চূড়ায় থাকা বন্ধুদের দিকে হাত না বাড়িয়ে তিনি হাত বাড়ালেন সুনীতির দিকে। একেই বলে মানবতা।

বন্ধুর এ কৃতিত্বের সঙ্গী হতে ভুলেননি মার্কিন মেরিন মাইকেল ফেয়ারম্যান। এ ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে তিনি তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, এভারেস্টের চূড়ায় নীচের একটি অংশে একজন ভারতীয় তরুণী পিছলে লেসলি জনের কাছাকাছি পড়ে যান। তখন ওই তরুণী ছিলেন অত্যন্ত ক্লান্ত। পড়ে গিয়ে ব্যথাও পেয়েছিলেন তিনি। তার কাছে তখন অতিরিক্ত অক্সিজেনও ছিল না।

কোনো দ্বিধা না করেই তখন লেসলি তার সাহায্যে এগিয়ে যান। নিজের অক্সিজেন সিলিন্ডার সুনীতির সঙ্গে বদল করেন এবং তাকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করেন। এ সময় আরো অনেকেই তাদের পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল, কিন্তু কেউই সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। শেষ পর্যন্ত তিনি একাই সুনীতিকে আঁকড়ে ধরে নীচে নামিয়ে নিয়ে আসেন।

আসার পথে নিজের টিমের আরো একজনকে বিপদগ্রস্ত অবস্থায় দেখতে পান লেসলি। তখন তাকে চিৎকার করে, উৎসাহ দিয়ে হাঁটতে বাধ্য করেন তিনি। কিন্তু তারপরও হাঁটতে পারছিলেন না ওই অভিযাত্রী। পরে তাকেও ধরে তিনি দুজন অভিযাত্রীকে একসঙ্গে নিয়ে এভারেস্টের সেই তুষারের ভেতর দিয়ে বেশকিছু পথ নিচে নামিয়ে আনেন। অবশ্য একপর্যায়ে সেই ব্যক্তিকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন লেসলি। কারণ দু’জনকে টেনে নিয়ে আসার মতো শক্তি তার ছিল না। পরে অন্যরা ওই অভিযাত্রীকে উদ্ধার করে।

সেই সময় লেসলি কাঠমান্ডুতে একটি টেলিভিশনে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, ‘অবশ্যই আমার কিছুটা খারাপ লাগছে, কারণ আমি চূড়া জয় করতে পারলাম না। কিন্তু আমি খুশি, আমি একটা জীবন বাঁচাতে পেরেছি। এটা এভারেস্ট জয়ের থেকে কম নয়।’

জীবন বাঁচানোর জন্য লেসলি জনের কাছে কৃতজ্ঞ সুনীতি হাজরাও। তিনি বলছেন, ‘আমার জীবন তার কাছে ঋণী হয়ে রইলো। আমি আমার সন্তানকে দেখতে বাড়ি ফিরতে পেরেছি। এরচেয়ে আনন্দের আর কি আছে?’

এভারেস্টের এই পথে সেদিন অনেকেই মারা গেছেন। এই দুজনের ভাগ্যেও যে কি ঘটতো তা জানা নেই। হয়তো তাদের কিছু হলে কেউই কিছু জানতেও পারতো না। শুধুমাত্র লেসলির হিরোগিরির কারণেই দু’জন নতুন জীবন পেলো। অবশ্য লেসলি যে টিমের সঙ্গে অভিযাত্রী হয়েছিলেন, তারা সবাই হিমালয় জয় করেই ফিরে এসেছে।

লেসলি জন বিনসের বসবাস যুক্তরাজ্যের ইয়র্কশায়ারে। তিনি  ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হয়ে বসনিয়া, ইরাক আর আফগানিস্তানে কাজ করেছেন। সেখানে কাজ করার সময় বোমা বিস্ফোরণে তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়।

সূত্র: খবরটি সিলেটটুডে.কম থেকে নেওয়া।