করুণা রাণী দাসের চিকিৎসা: শিক্ষক সমিতি প্রতিশ্রুতি মোতাবেক অর্থ সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে

করুণাা রাণী দাস
করুণাা রাণী দাস
ডায়ালাইসিস রুমে রোগী। পাশে ভাগ্নি তুলিকা রাণী দাস।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আবেদনের প্রেক্ষিতে বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমিতি এক লক্ষ টাকা তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। করোনার কারণে ব্যবস্থাপনায় কিছু অসুবিধা হলেও এ পর্যন্ত শিক্ষক সমিতি পয়ষট্টি হাজার টাকা দিতে পেরেছেন। এর মধ্যে পঞ্চাশ হাজার টাকা কচুয়ার উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যুৎ রঞ্জন সাহার নেতৃত্বে কচুয়া প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সেখ সারোয়ার হোসেন, প্রধান শিক্ষক, শহীজ জিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কচুয়া; চিত্ত রঞ্জন সাহা, সাধারণ সম্পাদক, শিক্ষক সমিতি, প্রধান শিক্ষক, শিরোখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; কমল কৃষ্ণ বৈদ্য, কোষাধ্যক্ষ, শিক্ষক সমিতি, সহকারি শিক্ষক, কচুয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ওমর ফারুক, প্রধান শিক্ষক, ধোপাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়— রোগীর বাড়ী গিয়ে টাকা দিয়ে আসেন এবং রোগী সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন। পুরো বিষয়টি দেখভাল করছেন কচুয়া উপজেলা শিক্ষক সমিতির সম্মানিত সভাপতি সেখ সারোয়ার হোসেন । তিনি বলেন, রোগী আমাদেরই একজন শিক্ষক, তাই তার জন্য সাধ্যমতো আমরা সবই করব। এ বিষয়ে সকল শিক্ষকই খুব আন্তরিক, কিন্তু করোনার কারণে আমাদের কিছু অসুবিধা হচ্ছে। বাকী টাকা উঠলে আমরা রোগীর কাছে পৌঁছে দেব। তিনি কচুয়া উপজেলার সকল শিক্ষকদের পক্ষ থেকে রোগীর আশু রোগমুক্তি কামনা করেছেন। 

যেহেতু রোগীর অবস্থা এখন যথেষ্ট খারাপ, তাই তার চিকিৎসা চালিয়ে যেতে দীর্ঘমেয়াদে ডায়ালাইসিস এবং অন্যান্য উপসর্গজনিত চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন। যেহেতু কোভিড পজেটিভ থাকা অবস্থায় সকল হাসপাতাল ডায়ালাইসিস হয় না, তাই বিষয়টি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং কঠিন। এমতাবস্থায় শিক্ষক সমিতি যদি সম্পূর্ণ সহযোগিতাটুকু করতে পারে তাহলে রোগী বিশেষভাবে উপকৃত হয়। একইসাথে শিক্ষকদের করা শিক্ষক সমিতি হতে প্রাপ্য সহযোগিতার জন্য রোগী এবং রোগীর পরিবার বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। প্রসঙ্গত, কচুয়া উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে নব্বইটি। প্রতিটি স্কুলে চার থেকে পাঁচজন শিক্ষক রয়েছেন।  পরোপকারী মনোভাবের জন্য কচুয়ার শিক্ষকদের বিশেষ সুনাম রয়েছে।  

চিকিৎসার ইতিহাসঃ

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক করুণা রাণী দাস গত এক বছর ধরে কিডনি রোগে ভুগছিলেন। এর আগে ত্রিশ বছর ধরে তার হাইপ্রেসার ছিল। তিনি নিয়মিত প্রেসারের ওষুধ সেবন করতেন। প্রেসারের ওষুধ সেবন করলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিডনি চেকআপ করতে হয়। এমনিতেই বছরে একবার ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হয়ে শরীরের পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো। যেটি সবার মতো তিনিও কখনো করেননি। বিভিন্ন সময়ে উপসর্গ দেখা ‍দিলেও সেগুলো আমলে নিতে সমর্থ হননি। তাছাড়া বাগেহাট খুলনায় সবসময় সঠিক চিকিৎসাটাও পাননি, বা চিকিৎসা নিতে পারেননি। ফলে রোগ ধরা পড়তে অনেক সময় লেগে গিয়েছে। 

বাগেরহাট, খুলনা এবং শেষে ঢাকায় তিনি বিভিন্ন ব্যয়বহুল চিকিৎসা করিয়েছেন বটে, কিন্তু ক্রমান্বয়েই তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে, কারণ কিডনি রোগ একবার ফাইনাল স্টেজে চলে গেলে ডায়ালাইসিস বা কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট ছাড়া বেঁচে থাকার আর কোনো সুযোগ থাকে না। সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতির কারণে তার চিকিৎসা বিঘ্নিত হয়। ওষুধ, ইনকেজশন, চিকিৎসা এবং অন্যান্য খরচ বাবদ তিনি গত ছয় মাস যাবৎ প্রতি মাসে পনেরো থেকে বিশ হাজার টাকা খরচ করে আসছেন। হঠাৎ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মাঝে মাঝেই ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে বড় অংকের টাকা খরচ করতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে তার পরিবারটি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। পরিবারে বেকার স্বামী, মেয়ে ছাড়াও তার ওপর নির্ভরশীল শশুর শাশুড়ী রয়েছে।

এমতাবস্থায় সর্বশেষ গত ৫ সেপ্টেম্বর তিনি আবার শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। পরের দিন ভোরে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকায় আনা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ঢাকার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে তড়িঘড়ি করে ভর্তি করার পর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ধারণা করা হয় যে, তিনি কোভিড পজেটিভ হয়েই ঢাকায় এসেছেন। এজন্য প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তার আর চিকিৎসা দিতে ক্লিনিকটি অপারগতা প্রকাশ করে। এরপর বিশেষ ব্যবস্থায় ঐদিনই রাত বারোটায় তাকে ভর্তি করা হয় সরকারি সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তখন তার অবস্থা একেবারে মুমূর্ষু। দ্রুত ডায়ালাইসিস না করলে বাঁচানো যাবে না। কিন্তু কোভিড টেস্ট না করে চিকিৎসকরা ডায়ালাইসিস করবেন না। তারপরও রোগীর ভাগ্নের সহযোগিতায় বিশেষ ব্যবস্থায় দুটি ডায়ালাইসিস করা হয় । এরপর কোভিড টেস্টের রেজাল্ট পজেটিভ আসলে তাকে কোভিড ওয়ার্ডে ট্রান্সফার করা হয়। এখন তাকে ডায়ালাইসিস করিয়ে আনতে হবে পপুলার বা এরকম কোন হাসপাতাল থেকে, যেটি খুব ব্যয়বহুল। কোভিড পজেটিভ রোগীকে নেওয়া আনা, ডায়ালাইসিস— সবই করতে হবে বিশেষ ব্যবস্থায়। সবদিক ভেবে সর্বশেষ রোগীকে আনা হয়েছে ঢাকা মেডিকেলএ। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলএ রোগীর ডাইয়ালাইসিস এবং অন্যান্য চিকিৎসা চলছে।

একজন শিক্ষককে বাঁচিয়ে রাখতে আমরা চাই আবার তাকে সকলে সহযোগিতা করতে। রোগীর প্রত্যাশা আত্মীয়স্বজন, তার সহকর্মী সহ সবাই তার পাশে দাঁড়াবেন। এমনকি কেউ ধার হিসেবে একটা বড় অংকের টাকা দিলে তিনি পেনশনের বিপরীতে চেক লিখে দিয়ে তা শোধ করার কথা বলেছেন। যেহেতু বাড়ি করার জন্য তিনি বেতনের বিপরীতে একটি কনজুমার লোন নিয়েছিলেন, এবং লোনটি এখনো পরিশোধ হয়নি, তাই এই মুহূর্তে তিনি কোনো লোনও ব্যাংক থেকে আর করতে পারছেন না। শুধু ঘরটি ছাড়া বাড়িতে জায়গা জমি তাদের কিছু নাই বললেই চলে। 

রোগী বাঁচার সম্ভাবনার কথা কিছু বলা যায় না, গত ৬ সেপ্টেম্বর (২০২০) যখন ঢাকায় আসেন তখন তার বাঁচার কোন সম্ভাবনা ছিল না বললে চলে। ডাক্তার! ডাক্তার! ডাক্তার! কৃতজ্ঞতা অশেষ ডাক্তারদের প্রতি। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় যতই প্রশাসনিক ত্রুটি এবং কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা থাক, চিকিৎসকদের প্রতি আমাদের আস্থা রাখতে হবে। সেই আস্থা থেকেই বলছি, রোগী হয়ত এ যাত্রায়ও বেঁচে যেতে পারেন। 

করুণা রাণী দাসের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজখবর রাখতে এবং সহযোগিতা করতে যোগাযোগ: 

A/C Name: করুণা রাণী দাস

A/C NO: ৩৪০৬১৪৪৫

সোনালী ব্যাংক লিঃ, কচুয়া শাখা, বাগেরহাট।  

মোবাইল: 01710 281640, 01310863304

https://www.facebook.com/100003183409795/videos/3269681536481261/?extid=pE5s4N39C20Sgo78