কেস স্টাডি-৩: সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ মনিকা রাণী সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ

সদর হাসপাতাল
অভিযোগকারী রোগীর জন্য ডাঃ মনিকা রাণী সাহার করা প্রেসক্রিপশন।

রোগীর নাম জাহানারা (ছদ্মনাম), বয়স (২৮), ৩ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে খুলনা সদর হাসপাতাল থেকে টিকিট কেটে বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিতে যান। রোগী গর্ভবতী (যমজ), পাশাপাশি ঐদিন ভোরে নাক দিয়ে রক্ত যায়, মুখ দিয়েও জমাট বাঁধা রক্ত বের হয়। অনেকক্ষণ বসে থাকার পরে রোগী ডাঃ মনিকা সাহার সাক্ষাৎ পান। ডাঃ মনিকা সাহা রোগীকে বসিয়ে রেখে মোবাইলে ব্যক্তিগত আলোচনা করতে থাকেন। এরপর রোগীর সাথে কোনো কথা না বলে পূববর্তী রিপোর্ট (অন্য হাসপাতালের) দেখে প্রেসক্রিপশন করতে শুরু করেন। রোগী হতাশ হয়ে চিকিৎসককে গলা থেকে বের হওয়া রক্ত দেখাতে গেলে ডাঃ মনিকা সাহা রোগীকে ‘পাগল’ বলে সম্মোধন করেন, এবং অন্যদের ডেকে বলেন, “এই পাগল কোথা থেকে এসেছে?” চিকিৎসকের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ পেয়ে উক্ত গর্ভবতী নারী উত্তেজিত হয়ে যান এবং এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। চিকিৎসক মনিকা সাহা রোগীর জন্য যে প্রেসক্রিপশন লিখেছেন, সেটি নিয়েও রোগীর পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে। ফলোআপ নিউজ রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং প্রেসক্রিপশন নিয়ে অন্য চিকিৎসকের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছে— চিকিৎসক মনিকা সাহা রোগীর অবস্থা না বুঝেই প্রেসক্রিপশন করেছেন। ভিন্ন চিকিৎসক মনিকা সাহার প্রেসক্রিপশন বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজী না হলেও তিনি এই প্রেসক্রিপশন ফলো করতে নিষেধ করেছেন।

ডাঃ মনিকা রাণী সাহা
ডাঃ মনিকা রাণী সাহা। অনলাইন থেকে প্রাপ্ত কার্ডে উল্লিখিত নম্বরে কথা বলে জানা যায়, তিনি সাতক্ষীরার এ (সিবি হসপিটাল লিমিটেড) হাসপাতালে ৩ টা থেকে রোগী দেখেন। কীভাবে তিনি খুলনা সদর হাসপাতালের ডিউটি শেষ করে আবার ৩টা থেকে সাতক্ষীরায় রোগী দেখেন, সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে। উল্লেখ্য, সিবি হাসপাতালে তিনি ভিজিট নিয়ে থাকেন ৭০০ টাকা করে। ফলোআপ নিউজ জাহানারা খাতুন নামে ৮ আক্টোবরের (২০২৪) জন্য একটি সিরিয়াল দিতে চাইলে ১৫ নম্বর সিরিয়াল পাওয়া যায়। ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।

‘হাইড্রোজেস্ট-ডিএস’ নামে যে ইনজেকশনটি রোগীকে তিনি প্রেসক্রাইব করেছেন, সেটি কোনোভাবেই এই রোগীর জন্য যথাযথ নয় বলে জানা গিয়েছে। তাহলে কেন তিনি ৬৫০/- টাকা দামের একটি ইনজেকশন একজন টুইন গর্ভবতী নারীকে প্রেসক্রাইব করলেন? ‘ডাইড্রোজেস্ট’ নামে যে ওষুধটি তিনি ‘চলবে’ উল্লেখ করে লিখেছেন, তার প্রতিটির দাম ৪০/- টাকা। এরকম একটি ওষুধ লেখার জন্য রোগীর সাথে আলোচনা করে নেওয়া উচিৎ নয় কি? সদর হাসপাতালে বা যে কোনো সরকারি হাসপাতালে যে সকল রোগী চিকিৎসার জন্য যায়, তাদের আর্থিক দিকটা বিবেচনায় নিয়ে হলেও তো বিষয়টি আলোচনা করে নেওয়া উচিৎ ছিলো। এর বাইরে তিনি লিখেছেন ‘ফেরাবেক্স-৫০০’, এই ওষুধটির প্রতিটির দাম ২৩ টাকা করে। এই ওষুধটিও তিনি কেন লিখলেন সেটি বোঝা যাচ্ছে না। তিনি রোগীর সাথে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা করেননি। রোগী ৫ টাকার একটি টিকিট কেটে ডাক্তার দেখালেও উক্ত চিকিৎসক রোগীকে প্রায় ১৫,০০০/- টাকা মূল্যের ওষুধ লিখেছেন। যেখানে গর্ভাবস্থায় ওষুধ খাওয়ার জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, সেক্ষেত্রে রোগীর সাথে কোনো আলোচনা ছাড়াই, রোগীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে কোনো ধরনের খোঁজ খবর নেওয়া ছাড়াই কীভাবে তিনি এ ওষুধগুলো লিখলেন? এ বিষয়ে অভিযোগকারী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ফলোআপ নিউজকে জানিয়েছেন। খুলনার নাগরিক সমাজ জানিয়েছে— রোগীর রোগ সম্পর্কে ঠিকমতো না জেনে চিকিৎসক যেভাবে ওষুধ লিখেছেন, এটি গর্হিত অপরাধ। এই চর্চা নতুন নয় বলে নাগরিক সমাজের অভিমত।

চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন-এর সভাপতি ডাঃ বাহারুল বলেছেন, ওষুধ বাণিজ্য এবং চিকিৎসকদের সাথে ওষুধ কোম্পানির সাথে সম্পর্কের বিষয়টি অজানা কিছু নয়।

তবে খুলনা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত) ডাঃ রফিকুল ইসলাম গাজী বলেছেন, গর্ভবতী নারীদের আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা অনুসারে এ ওষুধগুলোই লেখা হয়, ফলে এখানে প্রেসক্রিপশন যা করা হয়েছে, তা শতভাগ ঠিক আছে।