চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে প্রতিবছর বাংলাদেশে ৬৫লাখ মানুষ দরিদ্র হচ্ছে

বনানীর পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে দি ঢাকা ফোরাম আয়োজিত ‘ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ, ’শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় ৬ আগস্ট, ২০১৬। দ্য ঢাকা ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা: রশিদ-ই মাহবুব, সাবেক স্বাস্থ্যসচিব মো: নাসির উদ্দিন, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক এমডি সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত এফ এ শামীম আহমেদ, ড. মাহবুব জামিল, সাবেক রাষ্ট্রদূত ইফতিখারুল করিম, সাবেক রাষ্ট্রদূত মাসুদ আজিজ, সাবেক রাষ্ট্রদূত শাহেদ আখতার, ল্যাব এইডের এমডি ডা: শামীম আহমেদ ও ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা বিভাগের পরিচালক ড. রাইসুল হক।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক। তিনি বলেন চিকিৎসায় ব্যয় মেটাতে গিয়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৬৫ লাখ মানুষ দরিদ্র হচ্ছে। তারা চিকিৎসার ৬৪ শতাংশ নিজেদের পকেট থেকে ব্যয় করে থাকেন। ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা (ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ) নিশ্চিত করতে হলে সারা দেশে প্রতিষ্ঠিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হবে। প্রবন্ধে তিনি আলো উল্লেখ করেন যে, ৩১-৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থায়ী ও অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ প্রাপ্ত ২১ থেকে ৩৫ জন ডাক্তারের পোস্টিং থাকলেও এদের মধ্যে নিয়মিত ৩ থেকে ৫ জন ডাক্তার সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকেন। অবশিষ্ট ডাক্তারেরা নিয়মিত কর্মস্থলে আসেন না। এর বাইরে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রেও এমবিবিএস ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয়েছে কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা। এদের মধ্যে খুব সংখ্যক ডাক্তারকে কর্মস্থলে উপস্থিত পাওয়া যায়। শহরে ১৫শত লোকের জন্য একজন ডাক্তার । গ্রামে ১৫,০০০ লোকের জন্য একজন ডাক্তার । আসলে তিনজন ডাক্তারের বিপরীতে একজন নার্স থাকার কথা। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা: রশিদ-ই মাহবুব, বলেন প্রতিটি উপজেলায় ৫০ বেডের হাসপাতালে রোগী ভর্তি কিন্তু ভাল সেবা নাই। জনবল ঘাটতি রয়েছে। প্রাইভেট হাসপাতালগুলিতে প্রতারনা বেশি হয়। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। সরকার যদি বরাদ্দ না দেয় তা হলে‘ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ হবে না। বাংলাদেশে ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ করার সুযোগ আছে। চিকিৎসায় দুর্বিতায়ন বন্ধ করুন।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী, রেফারাল পদ্ধতির উন্নয়ন করতে হবে। উপজেলায় যে স্বাস্থ্য কমিটি রয়েছে সেখানে সেই কমিটির দায়িত্ব দিতে হতে হবে উপজেলা চেয়ারম্যানকে। উপজেলা পর্যায়ে অবেদন বিদ নাই। অবেদনবিদ তৈরী করতে হবে। ফিজেও থেরাপিস্ট তৈরি করতে হবে বয়স্ক লোকদের জন্য। বাংলাদেশে সরকারি ভাবে ৩ লাখ ডাক্তারের প্রয়োজন। ৪৪ % লোক ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনে খায়। তা হলে ওষুধের দোকানদারদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সরকারকে ওষুধের দাম নির্ধারণ করে দিতে হবে। ভেজাল ও নিম্নমানের ওষূধ বাজার থেকে তুলে নিতে হবে।