ডাবের পানি প্রকৃতির বিশেষ দান। ভাবা যায় এত সুন্দর এবং পুষ্টিকর পানীয় গাছে ধরে! সুস্থ থাকার জন্য ডাবের পানি অতুলনীয়। ডাবের পানি হচ্ছে সত্যিকারের এনার্জি ড্রিঙ্ক। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান তথা বিভিন্ন রোগের নিরাময় লুকিয়ে রয়েছে ডাবের পানির মধ্যে। বিপুল পরিমাণ অ্যামিনো অ্যাসিড, পটাশিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স, আয়রন, জিংক সমৃদ্ধ এই পানি শুধু রোগ নয়, ত্বকের যত্নেও ব্যবহার কারা হয়। উপকারী দিক থেকে অনেক, কিন্তু শুধু তৃষ্ণা নিবারণের কথাই যদি তাহলেও কি ডাবের পানির তুলনা হয়? ভর দুপুরে এরকম একটি ডাব হাতে পেলে কে না খুশি হয়?
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক আমাদের কী কী উপকারে করে এবং কতটা খেতে পারি ডাবের পানি—
পেট ঠান্ডা রাখে
ডাবের পানিতে রয়েছে সূক্ষ্মতিসুক্ষ্ম আঁশ, যা অনেক সময় খালি চোখে দেখা যায় না, আঁশ সমৃদ্ধ এই পানি পেট ঠাণ্ডা রাখে৷ তাছাড়া ডাবের পানি যে শুধু পিপাসা মেটায় তাতো নয়, খেতেও তো সুস্বাদু৷ বিপাক ক্রিয়া বা মেটাবোলিজম ঠিক রাখে ডাবের পানি, এজন্য মূলত পেট ঠাণ্ডা হয়৷ এসব তথ্য জানিয়েছেন জার্মান পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডা. অলিভার হান৷
রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম
কলায় প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে, তবে ডাবে থাকে কলার তুলনায় দ্বিগুণ পটাশিয়াম। ডাবের পানি শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রেখে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে৷
পানির মাত্রা ঠিক রাখে: শরীরে পানির মাত্রা ঠিক রাখতে ডাবের পানির তুলনা হয় না। এতে পানির পরিমাণ রয়েছে প্রায় ৯৪ শতাংশ যা আপনাকে ডি-হাইড্রেশনের সমস্যা থেকে মুক্তি দিবে।
ডায়রিয়া-কলেরা দূর করে: ডায়রিয়া-কলেরা কিংবা বমির কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি বের হয়ে যায়। তাই পানির এই ঘাটতি পূরণ করার জন্য ডাক্তার ডাবের পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন।
এসিডিটি কমায়: বিপাক ক্রিয়ার সহায়তা করে বলে ডাবের পানি খেলে এসিডিটির সমস্যা কমে। গর্ভবতী মায়েদের অনেকই অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভুগে থাকেন। এ সময়ে ওষুধ খাওয়ায় খানিকটা বিধিনিষেধ থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপায়ে অ্যাসিডিটি দূর করতে নিশ্চিন্তে খেতে পারেন ডাবের পানি।
খেলোয়াড়দের জন্য এনার্জি ড্রিংক: ডাবের পানিতে রয়েছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় মিনারেল, যা খেলোয়াড়দের জন্য এনার্জি ড্রিংকের কাজ করে৷ তাছাড়া ডাবে থাকা প্রাকৃতিক উপাদানকে রক্ত তাড়াতাড়ি শুষে নিতে পারে৷ অ্যামেরিকায় করা এক সমীক্ষা থেকে এই তথ্য জানা যায়৷
কিডনিতে পাথর রোধ এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: কিডনি পাথর প্রতিরোধ করতে ডাবের পানি অনেক বেশি কার্যকর। নিয়মিত ডাবের পানি খেলে কিডনিতে পাথর হবার আশঙ্কা থাকে না। এছাড়া এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনে।
ওজন কমাতে ডাবের পানি: এই ওজান কমানোর অর্থ এই নয় যে ডাবের পানি খেলে ওজন কমে। যেহেতু ডাবের পানিতে পুষ্টি উপাদান রয়েছে, তাই এটি খেলে ভারী খাবারের প্রয়োজনিয়তা কমে। এর ফলেই মূলত ওজন কমে। ওজন কমানো তখনই সম্ভব, যখন কেউ শরীরের জন্য যতটা এনার্জি প্রয়োজন, তারে চেয়ে কম খাবার গ্রহণ করে৷ তাই বিজ্ঞানীরা নিয়মিতই সেসব খাবার খুঁজে বেড়ান, যেসব খাবার এই শর্ত পূরণ করতে পারে৷ আর ডাবের পানি তার একটি৷ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক দল সেকথাই জানিয়েছেন৷
ফ্রিজে রেখে খান: ফ্রিজে রাখলে ডাবের পানির গুণমান অটুট থাকে, স্বাদও পরিবর্তীত হয় না। বারে বারে ডাব কেনা এবং কাটার ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকতে সপ্তাহের যতটুকু প্রয়োজন তা একবারে কিনে ফ্রিজে রেখে খেতে পারেন। আজ থেকেই ক্লোড ড্রিঙ্কসের পরিবর্তে ফ্রিজে রাখা শুরু করুন ডাবের পানি। আর যারা বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর এনার্জি ড্রিঙ্কি আসক্ত, তারা আসক্ত হতে পারেন ডাবের পানিতে, কোনো ক্ষতি হবে না।
ত্বকের যত্নে: ত্বকের যত্নে ডাবের পানি গুনাগুণ অতুলনীয়। ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধুলে ব্রন-অ্যাকনি, ত্বকের তৈলাক্ত ভাব, রোদে পোড়া দাগ দূর হয়ে যায়। এছাড়া ডাবের পানি খেলে বয়সের ছাপ চলে যায় এবং ত্বক মসৃণ হয়।
চুলের যত্নে: পুষ্টির অভাবের একটি বড় প্রভাব পরে আমাদের চুলের ওপর। ডাবের পানি খাওয়ার পাশাপাশি এই পানি মাথায় দিয়ে মাসাজ করলে নতুন চুল উঠবে এবং চুল ঝলমলে রাখবে।
মিষ্টি পানীয়র বিকল্প: অনেকের মিষ্টি জাতীয় খাবার বা পানীয়র প্রতি আকর্ষণ থাকে। তারা ডাবের পানি খেতে পারেন, এতে মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছেটাও মিটবে আবার ক্ষতিও হবে না। ১০০ মিলিলিটার ডাবের পানিতে ১৫ থেকে ২০ ক্যালোরি থাকে৷ ডাবে প্রাকৃতিক মিষ্টি থাকার ফলে মিষ্টি পানীয় কোকাকোলা বা ফান্টার বিকল্প হিসেবে পান করা যেতে পারে৷ এতে ওজন তো বাড়বেই না, বরং কমবে৷
সতর্কতা
কিডনিতে পাথর হয়েছে বা ডায়ালাইসিস চলছে, এ ধরনের রোগীরা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ডাবের পানি খাবেন না। কারণ এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম যা কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।
যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাঁদের জন্য ডাবের পানি খাওয়া নিষেধ। যাঁদের শরীরে সোডিয়াম, ক্লোরাইড, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফেট, বাইকার্বোনেট বেশি থাকে, তাদের জন্য ডাবের পানি খেতে কিছুটা বিধিনিষেধ আছে।
কখন খাবেন? কীভাবে পাবেন ডাবের পানি: ঢাকা শহরে বাসায় বসে ডাবের পানি পাওয়া সত্যিই কষ্টকর। যেটি করতে পারেন- সুবিধা মতো বেশ কয়েকটা ডাব এনে, কেটে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। প্রতিদিন এক গ্লাস করে খেতে পারেন। দুপুরে, বিশেষ করে বারেটার দিকে ডাবের পানি খাওয়া ভালো, এর চেয়ে ভালো সকালে খালি পেটে খাওয়া। রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস ডাবের পানি পান করলে ঘুম ভালো হয়। এছাড়া যেকোনো সময়েই খেতে পারেন ডাবের পানি।
শুনেছি কিছু অনলাইন ফুড সাপ্লাই আছে, যারা ডাবের পানি বাসায় সরবরাহ করে থাকে, তারা সর্বনিম্ন দশটি ডাব বাসায় সরবরাহ করে, অথবা তাদের পয়েন্টে আসলে তারা সাথে সাথে ডাব কেটে বোতলজাত করে দেয়। ঢাকার বনশ্রীতে OFCC (Organic Food Consumer Club) কাজটি করছে। তারা প্রতি পিচ ডাব আকার ভেদে ভিন্ন ভিন্ন দামে বাসায় পৌছে দিচ্ছে, তবে নিতে হবে কমপক্ষে দশটি।একইসাথে প্রতি লিটার ১৬০/- দরে তারা বোতলে ডাবের পানি সরবরাহ করে থাকে। আপনি চলে আসতে পারেন বনশ্রীতে ‘কোয়েন্স’-এ। এখানে বসে আপনি ইচ্ছেমতো তাজা ডাবের পানি খেতে পারবেন।
শীতে বরং ডাবের পানি বেশি দরকারী: শীতকালে আবহাওয়া ঠাণ্ডা থাকায় শরীর শুষ্ক হয়ে যায়। ডাবের পানি এ শুষ্কতা কাটায় এবং শরীর সতেজ রাখে। ডাবের পানি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (যেমন রিবোফ্লাভিন, পাইরিডক্লিন, থায়ামিন, নায়াসিন এবং ফোলেট) এর উৎস হিসেবে কাজ করে। মানব শরীরে জন্য এই উপাদান সমূহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শীতকালে শরীরে এসব উপাদানের ঘাটতি দেখা যায়। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় ডাবের পানি উপকারী। ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব দূর করে ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখে। শীতকালে ত্বকের সমস্যা যেহেতু বেশি হয়, তাই শীতকালে ডাব খাওয়া বেশি প্রয়োজন।
কৃতজ্ঞতা: এই ফিচারটি করতে সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে ডয়েচেভেল, প্রথম আলো এবং আরটিভির।