জীবনের এই ছোট্ট যাত্রাপথে অনেক রকম বাবা দেখেছি। আর আজকাল তো কথাই নেই, টিভি পত্রিকা বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ রাখলেই হয়। কিছু বাবা আছেন যারা মেয়ে হলে অখুশি হন, কিছু বাবা আছেন যারা মেয়েকে সংসারের ঝামেলা মনে করেন, কিছু বাবা আছেন যারা মেয়েকে বিয়ে দিয়েই রক্ষা পান, এরপর আর মেয়ের ভালোমন্দের দায়িত্ব নিতে নারাজ। কিছু বাবা আছে যারা কিছুতেই মানবেন না যে, মেয়েরা সংসারে সৌভাগ্য হয়ে আসে। আবার এখন তো কিছু বাবার কাছে মেয়েরা নিরাপদই না, নিজের সন্তান কে আগলে রাখার পরিবর্তে নিজেই ভোগের সামগ্রী বানিয়ে ফেলছেন! এগুলো মনগড়া কোনো ভাবনা নয়, বাস্তব কিছু অভিজ্ঞতা, যা আশপাশ থেকেই উঠে আসছে।
তবে আমি একজন বাবাকে চিনি, যিনি মেয়ের জন্মের পর তার মুখ দেখে খুশিতে আত্মহারা হন, একজন বাবাকে চিনি যিনি নয় দিন বয়স থেকে নিজের মেয়েকে হাতের উপর নিয়ে ঘুমান, যিনি মেয়েকে তার সৌভাগ্য মনে করেন, গালে তুলে খাওয়ানো, গোসল করানো, বুকে নিয়ে ঘুম পাড়ানো এগুলো করেন। একজন বাবা আছেন যিনি মেয়ের হাসিতে পৃথিবীর সব সুখ খুঁজে পান, যিনি মেয়ের চোখে পানি দেখলে চিৎকার করে সারা বাড়ি মাথায় করেন। এমন একজন বাবা আছেন, যিনি শীতের সকালে অফিসে যাওয়ার সময় শত ব্যস্ততায় ও কখনো মেয়ের গোসলের পানি রোঁদে রাখতে ভুলতেন না, কখনো মেয়ের জন্য ভাত মেখে রাখতে দেরি করতেন না, এমন একজন বাবাকে আমি চিনি, যিনি কোনোদিন মেয়ের নাম ধরে ডাকেননি।
আমি এমন একজন বাবাকে চিনি, যিনি মাঝ রাতে মেয়ের কাছে গিয়ে দেখেন মশায় কামড়াচ্ছে কিনা, লোডশেডিং শুরু হলে মেয়ে ঘামছে কিনা। মেয়ের ফুল গাছ ছাগলে খেয়ে ফেললে বাজারের সবগুলো গাছ ঝাকাসহ কিনে নিয়ে আসতে পারেন মেয়ের কান্না থামাতে, মেয়ে ফুল কুড়াতে গেলে হাতে ময়লা লাগে বলে শিউলি তলায় যিনি চাদর বিছাতে পারেন। আমি একজন বাবাকে চিনি, যিনি এখনো মেয়ের পা দুটো বুকে জড়িয়ে রাখেন আদরে, এখনো মেয়ে খাবে না বললে ভাত মেখে নিয়ে মেয়ের রুমে গিয়ে মুখে ধরেন। যিনি মেয়েকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন, মেয়ের মতামতই শেষ সিদ্ধান্ত বাড়ির। যিনি মনে করেন বাবার মতন মেয়েকে কেউ ভালেবাসতে পারে না, মা-ও না।
জানিনা এমন আরও কোনো বাবা আছেন কিনা বা আরও অনেক বাবা আছেন কিনা, তবে একজন বাবা আছেন, আর আমি আল্লাহর এতটাই করুণা পেয়েছি যে, সেই বাবাটাই আমাকে তিনি দিয়েছেন। শুকরিয়া! আব্বু, তুমি আমার জীবনে আল্লাহ এর দেওয়া শ্রেষ্ঠা উপহার। শুভ জন্মদিন আব্বু! ♥