রোজ নামচা-২ ।। দিব্যেন্দু দ্বীপ

Dibbendu Dwip

বন্ধু নাজমুলকে ফোন দিলাম। ফোন দিতে দেরি আছে, ওর রিক্সা নিয়ে হাজির হতে দেরি নেই। বললাম, মাস্ক পরো না কেন? বলে, ভালো লাগে না। কথা বাড়ালাম না আর, বেশি কৈফিয়ত চেয়ে আনন্দ মাটি করা যাবে না।
রিক্সায় উঠে বসলাম। বললাম, যাইতে থাকবা, আর মাঝে মাঝে নামব, তুমি আমার ছবি তুলবা। কিন্তু ও ছবি তুলতে জানে না, কিন্তু পোজ দিতে জানে, অগত্যা ওর ছবি বরং আমি তুললাম।
ও যে একেবারেই ছবি তোলে নাই, তা না, কিন্তু ও ছবি পড়তি বয়সের একজন যুবক মানুষকে দেখাতে চায় না।
ঘোরাঘুরি করতেছি, ভালোই লাগতেছে। অন্য সবাই হয় পরিবার নিয়ে গেছে, না হয় বন্ধুবান্ধ মিলে গেছে। ওরা মূলত দেখছে একে অপরকে, বাসায় যেমন দেখে, তবে একটু ভিন্ন পরিবেশে। আমি একা বলে দেখতে পাচ্ছি সবকিছু।
ছবি তোলার সময় একজন নারী এসে বললেন, আচ্ছা, আমার ছবিটাও উঠে যায়নি তো? আমি বললাম, না, যায়নি, আর আপনার ছবি যদি উঠে যায়ও তাতো আপনার অসুবিধা কী?
ভীড়ের মধ্যে সবাইকে বাদ দিয়ে তো ছবি তোলা সম্ভব নয়। মহিলা আর কথা খুঁজে না পেয়ে বলে, নাহ! আমার একটু অসুবিধা আছে। আমি বললাম, অসুবিধা আপনার চেয়ে আমার বেশি আছে, ছবি ডিলিট করতে কষ্ট হয়! এবার তিনি লজ্জ্বা পেয়েছেন।
নাজমুলরে বললাম, নাজমুল, চলো একটা দোকান খুঁজে বের করি, একটা সিগারেট খাইতে হবে আজকে। খুঁজতে খুঁজতে দোকান একটা পেয়েও গেলাম। বললাম, পানি দেন আর সাবান দেন, হাত ধোব। মহিলা দোকানদার, খুব ধমকের সুরে বললেন, পানিও নাই, সাবানও নাই।
বুঝলাম যে, আগে পিছে নিশ্চয়ই তার স্বামী আছে, না হলে এটা তো নারীর সহজাত সুর নয়। অন্তত আমার সাথে নয়! ঠিকই তাই, সওয়ামি এসে হাজির। বলেন, ঐ পাশে মসজিদ মতো একটা ঘর আছে, সেখানে সাবানও আছে, পানিও আছে।
ভরসা করে গেলাম। দেখি সবাই ওজু করতেছে, আমি আর নাজমুলও একই ঢংএ হাত ধুয়ে নিলাম।
কেন জানি আজকাল সিগারেট বিস্বাদ লাগে, দেলাম ফালায়ে। নাজমুলরে বললাম, তুমি কিছু খাও। আমি জানতাম যে, ও কোক আর চিপস্ খাবে! বিজ্ঞাপন দিয়ে দিয়ে ওগুলোকে গরীবের আরাধ্য খাবার করে ফেলা হয়েছে। খাগগে।
নাজমুল, চলো এবার যাই। বলে, দ্বীপ ভাই, একটা কথা বললে রাগ করবেন না তো? বললাম, না, রাগ করব না, তুমি বলো। বলে, ভাই, আমার গার্লফ্রেন্ডরে দেখছি। বললাম, যাও, দেখা করে আসো। ও দৌড় দিয়ে চলে গেল। আবার দৌড় দিয়ে চলেও আসল।
চলে আসলে যে? ভাই, ওর ভাবি সাথে, তয় চোখাচোখি হইছে। বললাম, তালি তো হইলই। আমার তো ওটুকুও হয় না!
এবার ফেলার পালা। কিছু কিনতেও হবে। ঈশপের জন্য এক প্যাকেট গাড়ি কিনলাম। প্রিয় ফল তরমুজ কিনলাম। তরমুজ এবং কাঁঠাল কেনার অভিজ্ঞতা অম্লমধুর, এজন্য ব্যাকআপ হিসেবে আরেক প্রিয় ফল নাশপতি কিনলাম। প্রিয় আরও আছে, সব তো আর একদিনে নাগাল পাওয়া সম্ভব না, এত খাওয়াও যাবে না।
নাজমুলকে কিছু কিনে দেওয়ার কথা ভাবলাম, পরে ভাবলাম, টাকা দিলেই বরং ও স্বাধীনভাবে কিনতে পারবে। ওরে পাঁচশো টাকা দিলাম। ও হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে!
বললাম, নাও, আমি পুরোটাই তোমাকে দিচ্ছি। কিন্তু ওর সংকোচ কাটে না কিছুতে। বলে, দ্বীপ ভাই, আমিও আপনারা সাথে ঘুরতে বেরিয়েছি, আপনি একশো টাকা দেন।
বললাম, তোমার বাসায় কে থাকে জানি না, যদি তোমার আম্মা থাকে, কিছু একটা কিনে নিয়ে যাও, ঈদের দিন খুশি হবে।
ওকে বিদায় করে, খুব জোর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেলাম। তরমুজ খেতে হবে। ঢুকেই পটাপট জামা প্যান্ট খুলে ছাদে রেখে আসলাম। হাত পা ধুয়ে, করোনা সব মেরে, রেডি হয়ে গেলাম তরমুজ খাওয়ার জন্য।
তরমুজও সার্ফএক্সেল গুলে ভিজাইলাম, করোনা মরে যাক। আরাম করে খাব, কাঁটা চামচ দিয়ে। তার আগে ল্যাপটপ রেডি করলাম, সিনেমা দেখতে দেখতে খাব।
সব প্রস্তুত হয়ে গেলে ছুরি চালালাম। বরাবরের মতো মনের বাঘ বন থেকে বেরিয়ে আসলো। দেখতেই পারছেন স্বাদের তরমুজের অবস্থা! দুঃখ পাওয়ার লোক আমি নই, ব্যাকআপ নাশপতি আছে। এবার নাশপতি ধুয়ে নিলাম আচ্ছা করে, এ বস্তু নিয়ে ভয় নাই, যা দেখা যায় তাই-ই।


দিব্যেন্দু দ্বীপ

Dibbendu Dwip