মেদ ঝরাতে, ওজন কমাতে বা শরীরকে বিষমুক্ত করতে অনেকেই আজকাল বিভিন্ন প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন। এর মধ্যে ‘ডেটক্স’ পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়। কোনো রকম ওষুধ না খেয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরকে বিষমুক্ত করা যায় এ পদ্ধতিতে। ‘ডেটক্স’ শব্দটি এসেছে ‘ডিটক্সিফিকেশন’ শব্দ থেকে, অর্থাৎ যে সকল প্রাকৃতিক পদ্ধতি শরীরকে বিষমুক্ত করতে পারে তাকে বলা হচ্ছে ডেটক্স পদ্ধতি।
যেমন, নিমের পাতা সেদ্ধ করে সে পানিতে গোসল করা এক ধরনের ডেটক্স পদ্ধতি, তবে এটি এক্সটারনাল ব্যবহার। যখন খাদ্যখাবার ব্যবহারের মাধ্যমে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় সেটি কাজ করে শরীরবৃত্তীয় ক্রিকলাপের ওপর। সেরকম কয়েকটি পদ্ধতি এখানে দেওয়া হলো:
কয়েকটি ডেটক্স ড্রিংক এবং প্রাকৃতিক উপায়ে শরীর বিষমুক্ত করার উপায়:
নিমপাতার বড়ি: সকালে ঘুম থেকে উঠে বড় এক গ্লাস পানির সাথে একটি নিমপাতার বড়ি খেয়ে নিন। নিমপাতা বেটে বড়ি বানিয়ে শুকিয়ে কৌটায় রেখে দিতে হবে।
মধু-লেবুর মিশ্রণ: মধু, লেবু ও আদা একসঙ্গে মিশিয়ে জুস তৈরি করতে হবে, যা ডেটক্স বা শরীরকে বিষমুক্ত করতে পারে। এই মিশ্রণটি ওজন কমাতেও সাহায্য করে। সকাল বা সন্ধ্যায় এ মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারেন। ঘুমানোর আগেও ব্যবহার করা যায়।
কমলার জুস: যারা শরীর ঝরঝরে করতে চান, ত্বক সুন্দর রাখতে চান, তারা কমলালেবুর রসের মধ্যে সাধারণ লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। এটিও শরীরের জন্য দারুণ উপকারী। বিশেষ করে যকৃতের জন্য এ জুস উপকার দেবে। দুপুরের আগে এই জুসটি পান করতে পারেন।
লেবুযুক্ত গ্রিন টি: গ্রিন টির গুণাগুণ সবারই জানা, গ্রিন টি হার্টের উপকার করে, ওজন কমায়। গ্রিন টি আমাদের শরীরকে সতেজ ও উৎফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। এটি ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়। নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে শরীরের মেদ কোষে বেশি শর্করা ঢুকতে পারে না, এভাবে এই চা আমাদের শরীরের ওজন ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। সকালই গ্রিন টি পানের উত্তম সমায়। নাস্তার সময় এক মগ গ্রিন টি নিয়ে বসতে পারেন।
ফল ও সবজির জুস: সুস্থ থাকতে, ওজন কমাতে, রোগ প্রতিরোধ করতে অনেকেই ফল ও সবজির রস খান। এতে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার ও প্রোটিন থাকে। জুস পুষ্টিগুণের কারণে ত্বকে ঔজ্জ্বল্য আনতে সাহায্য করে। এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও হজমে সহায়তা করে। ফল ও সবজির জুস রাতে না খাওয়াই ভালো।
যে উপকারগুলো পাবেন:
কার্যকর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা
শরীর জীবাণুমুক্ত এবং ফিট রাখতে পারলেই শরীরে কার্যকর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান দূর হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। শরীরের ভেতরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পরিষ্কার থাকায় সেগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে।
ওজন কমায়
শরীরের ওজন বাড়লে রোগ জীবাণুর আক্রমণ বেড়ে যায়, পাশাপাশি শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রতঙ্গের অতিরিক্ত চাপ নিতে হয়, ফলে শরীর ঝুঁকিতে থাকে। শরীর বিষমুক্ত হলে দ্রুত ওজন কমে, এজন্য অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, এটাই বিষমুক্ত খাবারগ্রহণ পদ্ধতি।
চকচকে ত্বক
শরীর বিষমুক্ত হলে ত্বক চকচকে সুন্দর হয়, মানে ত্বকের চেহারা বদলে যায়। ত্বক আরও বেশি সতেজ হয়ে ওঠে, শরীরে ব্রণ বা খোসপাঁচড়া থাকে না।
চুল সুন্দর হয়
শরীর থেকে বিষ দূর হলে ত্বকের মতো চুল খুব সুন্দর হয়। যাদের চুল ঝরে, এবং চুল রূক্ষ দেখায় তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের দিকে নজর দিতে হবে। বিষমুক্ত খাবার খেতে হবে।
শক্তি বাড়ে
শরীর বিষমুক্ত করতে পারলে শরীর আরও বেশি শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। আর এজন্য ডেটক্স পানীয় খুব কার্যকরী।
ফিট থাকতে কে না চায়, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে চায় সবাই। তবে এজন্য সবার ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাসে বিশেষ নজর দেওয়া জরুরী, এমনি এমনি সুস্বাস্থ্য হবে না। প্রতিদিন যেমন স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, তেমনি শরীরকে বিষমুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে, প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে, নিয়মিত ব্যয়াম করতে হবে। এতে নানা রকম রোগবালাই থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে, শরীর ফিট থাকবে।