রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭) খুব ভোরে ঢাকার একটি হাসপাতালে ৭১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন মি. সেনগুপ্ত। বিকেলে সংসদ প্রাঙ্গনে তার মরদেহে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদেরা।
বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের মরদেহে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার।
তার নিজ দল ছাড়াও মি. সেনগুপ্তের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বিএনপি, জাতীয় পার্টি-সহ বৃহৎ সকল রাজনৈতিক দলের নেতারা।
সুপরিচিত এই রাজনীতিবিদের জন্ম ১৯৪৫ সালে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায়। রাজনৈতিক কেরিয়ারে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ষাটের দশকে ছাত্রজীবন থেকেই জড়িত ছিলেন বামপন্থী রাজনীতির সাথে।
ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ভিপি প্রার্থী হয়েছিলেন।
সে সময় থেকে দীর্ঘদিন একসাথে রাজনীতি করেছেন বামপন্থী নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তিনি বলছিলেন, সে সময় নাট্য-অভিনেতা হিসেবেও খ্যাতি ছিল মি. সেনগুপ্তের।
১৯৬৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) পিকিং ও মস্কো ধারায় দুই টুকরা হলে মাওলানা ভাসানীকে ত্যাগ করে সুরঞ্জিত অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন অংশে যোগ দেন।
১৯৭০-এর নির্বাচনে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি থেকে মাত্র ২৫ বছর বয়সে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এই রাজনীতিবিদ।
নব্বই-এর দশকের শুরুতে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
১৯৮৬ ও ১৯৯১- এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে জয়ী হন।
২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি অংশ গ্রহণ করা এই রাজনীতিকের একটি অন্যতম পরিচয় ছিল সংবিধান এবং আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে।
মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির একজন কনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন তিনি।
অভিজ্ঞ এই রাজনীতিবিদ মানুষের মাঝে বেশি পরিচিত ছিলেন সংসদে তার চাতুর্যপূর্ণ এবং রসাত্মক বক্তব্যের জন্য। রাজনীতিবিদ হিসেবে বিপক্ষের নেতাদেরও সমীহ পেয়েছেন তিনি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।
পরে ২০১১ সালে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেও কয়েক মাসের মাথায় সহকারীর অর্থ কেলেঙ্কারিকে কেন্দ্র করে পদত্যাগপত্র দেন। পরে ছিলেন দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে।
মৃত্যুকালে জাতীয় সংসদে আইন বিচার এবং সংসদ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতিও ছিলেন মি. সেনগুপ্ত।
চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সুরঞ্জিত ছিলেন সবার ছোট। তিন ভাই মারা গেছেন বেশ আগেই। একমাত্র বোন কলকাতায় বসবাস করছেন। স্ত্রী জয়া সেনগুপ্ত বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ডক্টরেট। তিনি একটি বেসরকারি সংস্থার শিক্ষা বিভাগে সমন্বয়কারী পদে দায়িত্ব পালন করেন। একমাত্র সন্তান সৌমেন সেনগুপ্ত নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ব্যাচেলর ডিগ্রি এবং কানাডা থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি ব্যবসা করছেন। সৌমেনের স্ত্রী রাখী মৈত্রী সেনগুপ্ত পেশায় চিকিৎসক।