বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘আমার দেখা নয়াচীন’ থেকে

বঙ্গবন্ধু

পৃষ্ঠা-৭৭

জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে না, কারণ জনসাধারণ খুব সজাগ হয়ে উঠেছে। যদি কেউ একটু বেশি দাম নেয়, তবে তার আর উপায় নাই! ছেলে বাপকে ধরাইয়া দিয়েছে। স্ত্রী স্বামীকে ধরাইয়া দিয়েছে, এরকম বহু ঘটনা নয়াচীন সরকার কায়েম হওয়ার পর হয়েছে। তাই দোকানদারদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। সরকার যদি কালোবাজারি ও মুনাফাখোরদের ধরতে পারে তবে কঠোর হস্তে দমন করে। এরকম অনেক গল্প আমাদের দোভাষী বলেছে। রাতে হোটেলে ফিরে এলাম। আগামীকাল সকালে আমরা রওনা করবো।

হোটেলে এসে শুনলাম, আমাকে কে বা কারা অনেক খোঁজ করেছেন। আমি ভাবলাম, এদেশে আমায় কে খোঁজ করবে? আরো শুনলাম, তারা চীনদেশীয় লোক। কিছুতেই বুঝতে পারলাম না, ব্যাপার কী? খাওয়ার পরে শান্তি কমিটির সভাপতি আমাকে বললেন, “কাল আপনি যে শ্রমিক মেয়েটিকে আংটি উপহার দিয়েছিলেন, তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়ে আপনার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন এবং বহুক্ষণ বসে থেকে আমার কাছে এই কলমটা উপহার দিয়ে গেছেন। এই কলমটার নাম ‘লিবারেশন পেন’। ক্ষমা চেয়ে গেছেন, কারণ তারা থাকতে পারেন নাই, তাদের বিশেষ কাজ আছে। সকালেও একবার এসে গেছেন।” আমি আশ্চর্য  হয়ে বললাম, “আমাদের দেশে তো এ নিয়ম নাই যে একজন উপহার দিলে তাকে আরেকটা উপহার দিতে হয়।  শান্তি কমিটির সভাপতি বললেন, “এটা চীনদেশ। এদেশের নিয়ম, উপহার দিলে সেই মুহূর্তে যিনি উপহার দিলেন তাকে একটা উপহার দিতে হয়। আপনি চীন দেশে এসেছেন, চীনের নিয়মই আপনাকে মানতে হবে।” আমার খুব লজ্জা হলো। আমি আরও বাধা দিলাম, কিন্তু কিছুতেই শুনলো না। আমাকে শেষ পর্যন্ত গ্রহণ করতে হলো।

যতগুলি উপহার পেয়েছিলাম, তার মধ্যে এইটাই আমার কাছে বেশি মূল্যবান। শ্রমিকের উপহার, দিনমজুরের উপহার, পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করে তা দিয়ে যে উপহার দেওয়া হয় সেটাই সকলের সেরা এবং মূল্যবান। অর্থ মূল্য দেখে উপহারের বিচার করতে হয় না।

আমার দেখা নয়াচীন