প্রকৃতির মতোই সুন্দর, সহজ সরল মানুষ তারা— সাবলীল কথা বলা, সাধারণ তাদের জীবনযাপন, চাহিদাও অনেক কম, কিন্তু প্রকৃতি তাদের নিয়ে ধ্বংসাত্মক খেলায় মত্ত হয় নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে। সিডর আইলার সাথে যুদ্ধ করে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকে তারা।
আমি কোন দুধ বিক্রেতার গল্প বলছি না। আমি বলছি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের কথা। বাংলাদেশে সড়ক পথে প্রকৃতি কন্যা সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করার একমাত্র স্থান।
ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে বুড়িগোয়ালিনী দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। চিংড়ি, কুঁচে, কাঁকড়া সহ বিভিন্ন জাতের মাছ ও পোনা উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখে। এছাড়া সুন্দরবনে উৎপাদিত মধুর একটি বড় অংশ এখান থেকে সংগ্রহ করা হয়।
এখানকার রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। এজন্য একজন মানুষের কথা উল্লেখ না করলেই নয়, তিনি হলেন বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ভবতোষ কুমার মন্ডল। যার যোগ্য নেতৃত্ব, নিরলস পরিশ্রমের ফসল আজকের নান্দনিক এই বুড়িগোয়ালিনী। অসম্ভব সুন্দর সাজানো গোছানো তার ইউনিয়ন পরিষদ ক্যাম্পাস। পাঁচিলে ঘেরা সুসজ্জিত প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকেই চোখ জুড়িয়ে যায়— সারি সারি ফুল গাছ, ফুটে আছে থোকায় থোকায় ফুল, সুসজ্জিত চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষ, লাইব্রেরি, সম্মেলন কক্ষ, অভিযোগ বাক্স, মায়েদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং রুম, পরিচ্ছন্ন বাথরুম, হিন্দু মুসলিম সকলের জন্য ধর্ম পালনের ব্যবস্থা, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য সরাসরি হুইলচেয়ারে বসে তার কক্ষে পৌঁছানোর ব্যবস্থা— কী নেই সেখানে!
আরো বেশি বিমোহিত হলাম পরিষদের ছাদে দেশী বিদেশী ফুল ফল আর ঔষধি গাছের অপূর্ব সমাহার দেখে। আমাদের মনে হয়েছে এই ইউনিয়ন পরিষদটি এবং চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মণ্ডল বাংলাদেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদ এবং চেয়ারম্যানদের জন্য মডেল হতে পারে। যদিও আমরা উপস্থিত হয়েছিলাম তার সর্বশেষ কর্ম দিবসে, কারণ, রাজনৈতিক খেলার মারপ্যাচে এবারের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হয়েছেন। আমরা যখন তার সাথে পরিষদ থেকে বের হচ্ছিলাম তখন মনে হচ্ছিল এখানকার প্রতিটি ইট পাথর, প্রতিটি বৃক্ষ যেন বলছিল ভবতোষ (চেয়ারম্যান) তুমি যেও না, আমরা তোমাকে মিস করবো।
যাইহোক এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে— তিনি ফিরে আসবেন হয়তোবা এর থেকেও বড় কোন পরিসরে। প্রিয় পাঠক, আপনিও ঘুরে আসতে পারেন বুড়িগোয়ালিনী, উপভোগ করতে পারেন প্রকৃতি কন্যা সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য, সাথে কাঁকড়া, চিংড়ি আর মধুর স্বাধ নেওয়ার সুযোগতো থাকছেই।
লেখক: ব্যাংকার ও সংবাদকর্মী