ব্লগার হত্যাকাণ্ডকে সরকার গুরুত্ব দেয়নি বলেই গুলশানে হামলার মতো ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
সংসদে মঙ্গলবার গুলশান, শোলাকিয়া, সৌদি আরবের মদিনা, ফ্রান্সের নিস শহরে সন্ত্রাসী হামলা এবং বিশ্বব্যাপী সংঘটিত জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিন্দা প্রস্তাবের উপর সাধারণ আলোচনা করতে গিয়ে সরকারের এই সমালোচনা করেন তিনি।
রওশন বলেন, “যখন ব্লগার মারা হল তখন তো আমরা গোড়া খুঁজতে যাইনি, গুরুত্ব দিইনি। আমরা ডেপথে চিন্তা করি না। সবকিছু ভাসাভাসা দেখি।”
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে একুশের বইমেলার বাইরে লেখক ও মুক্তমনা ব্লগ সাইটের পরিচালক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের পর বেশ কয়েকজন ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট একই কায়দায় খুন হন।
এসব হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিরা জড়িত বলে পুলিশ দাবি করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে খুনি কিংবা এর নেপথ্য পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তার করা যায়নি।
এর মধ্যেই গত ১ জুলাই রাজধানীর কূটনীতিকপাড়া গুলশানের একটি ক্যাফেতে নজিরবিহীন এক হামলায় খুন হন ১৭ বিদেশি, দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২২ জন।
এর এক সপ্তাহের মধ্যে শোলাকিয়ায় দেশের প্রধান ঈদ জামাতের কাছে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে দুজনকে হত্যা করা হয়।
সংসদে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের আনা এই নিন্দা প্রস্তাবের আলোচনায় রওশন আরও বলেন, “একদিনে এ ঘটনা ঘটেনি। অনেকদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যা মিলে এই ঘটনা ঘটেছে। জনগণকে কী আমরা শান্তি দিতে পেরেছি?”
গুলশান ও শোলাকিয়ার দুটি ঘটনায় নিহত হামলাকারীরা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সন্তানরা জড়িত বলে তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তাদের কারা এপথে নিয়েছে, তা তদন্ত করছে পুলিশ।
কর্মসংস্থান না থাকা লোকেরাই তরুণদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছে দাবি করেন রওশন বলেন, “ছয় লাখ লোকের কর্মসংস্থান করেছেন। এগুলো সরকারি দলের লোকেরা পেয়েছে। জনগণ তো পায়নি। ফ্লাইওভার না করে ইন্ডাস্ট্রি করলে ভালো হত, এত লোক ঢাকায় আসত না। মেট্রোরেল দিয়ে আমরা কী করব, যদি পেটে ভাত না থাকে।
“বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কী পড়াশোনা হচ্ছে খোঁজ নিতে হবে। কেউ তো যায় না সেখানে খোঁজ নিতে। একটা শিক্ষিত ছেলে জাস্ট একটা টাইম বোমা!”
গুলশানে হামলার পর বাংলাদেশের উপর থেকে বিদেশিদের আস্থা চলে গেছে বলেও মনে করেন ওই এলাকায় বসবাসরত বিরোধীদলীয় নেতা।
“অনেক ফরেনার চলে গেছে। ২০টি ফ্যামিলি, আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে চলে গেছে। বাংলাদেশ থেকে চলে গেছে।”
বিদেশিদের আস্থা ফেরাতে ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়ে তোলার রাজনৈতিক প্রস্তাব সরকারকে দেন জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান রওশন।
জঙ্গি হামলা মোকাবেলায় পুলিশের আধুনিকায়নের উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “পুলিশকে বদলাতে হবে। মডার্ন উইপেন দিতে হবে। সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। ট্রেইনিং দিতে হবে।”
পাশাপাশি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, “মন্ত্রীদের প্রটেকশেনর জন্য পুলিশ দেওয়া হয়। এমপিদের জন্য কী দেওয়া হয়? আমার বাড়িতে ৬ জন পুলিশ। দুজন করে আসে।
“প্রটেকশন, আল্লাহ ভরসা।”