ইসলাম পিছিয়ে থাকা লোকেদের ধারণ করতে পারেনি, কব্জা করে পূঁজিপতিদের হাতে তুলে দিয়েছে বরং

Musalman

একটা প্রশ্ন ঘুরেফিরেই আসে এবং আসতে বাধ্য— ইসলাম কি আসলে পিছিয়ে থাকা জাতিগোষ্ঠীকে ধারণ করেছে? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে বুঝতে হবে যে পৃথিবীর পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যেই ইসলামের প্রচার ও প্রসার বেশি —এ থেকে মনে হতে পারে যে ইসলাম বুঝি পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে মুক্তির দিশা দেয়।
সহজ উত্তর হচ্ছে, ইসলাম পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে মুক্তির দিশা দেয় না, [কোনো ধর্মই যে দেয় না সেটি এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়। অন্য ধর্মগুলো আরো বেশি করে দেয় না] তবে এটা সত্য যে ইসলাম পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে একদল নতুন পূঁজিপতি বেরিয়ে আসার সুযোগ করে দেয়।
“আমি মুসলমান” —ইসলাম এই অহংকারটুকু সবাইকে দেয়। যে বিশ্বাসের বীজ খুব গভীরভাবে এবং কখনো কখনো খুব ভয়ঙ্করভাবে ইসলাম পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে বপণ করে দেয় তা থেকে ফসল তুলে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয় চৌকস এবং চক্রান্তকারী একই গোষ্ঠীবদ্ধ কিছু মানুষের।
এটা অবশ্যই সত্য যে ইসলাম পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষকে বিশ্বাসী করে তোলে, এবং তারা ইহজগতে এক ধরনের কর্মজীবীর ভূমিকা পালন করে, মালিক হয়ে উঠতে তারা চায় না, কারণ, তারা সত্যিই বিশ্বাস করে যে মালিক একজন। এই সুযোগটা নেয় তাদেরই গোত্রের গুটিকতক মানুষ এবং পরোক্ষভাবে অন্য ধর্মের মানুষেরাও। ফলে ইহজাগতিক জীবনকে গণনায় ধরলে বলতে হবে ইসলাম বেশিরভাগ মানুষের জন্য একটা ‘ফাঁকি’, তবে পৃথিবীকে স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মের ভূমিকা শিকার করতেই হবে।
এটা যতটা জঙ্গি উৎপাদন করেছে তার চেয়ে অনেক বেশি নাস্তানাবুদ মানুষকে ধারণ করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই ধারণ করায় দিনশেষে মানব সমাজের লাভ হচ্ছে কিনা? পরলৌকিক জীবননির্ভর মুক্তির যে বার্তা ইসলাম মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় সরল বিশ্বাসের মানুষ সেটি ধারণ করলেও একই গোত্রের অনেক মানুষ সেটি করে না, এবং তারা সুযোগ নেয়, সুযোগটা পাচ্ছে বিশ্বের আন্তর্জাতিক পূঁজিপতিরাও, বলা যায় ধনিক রাষ্ট্রগুলো। এজন্য আমেরিকার মতো রাষ্ট্রগুলো মার্কসবাদ ভয় পেলেও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ইসলাম থাকুক এটা তারা চায়। কারণ, এটা তারা জানে যে ইসলাম ধর্ম দিয়েই পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে কব্জা করা সবচে সহজ।
ভারতবর্ষে যেটা হয়েছিল, ভারতবর্ষে সংস্কৃতি এবং আভিজাত্যের দখল নিয়ে রেখেছিল উচ্চ বর্ণের কিছু মানুষ, ফলে নিম্ন বর্ণের মানুষের অহংকার করার মতো কিছু ছিল না। ইসলাম যখন এ সকল নির্যাতিত মানুষকে এটা বুঝাতে সক্ষম হয় যে ইসলামে এ ধরনের কোনো ভেদাভেদ নেই, এবং একই মসজিদে ধনী-গরিব, মুচি-মেথড় সবাই নামাজ পড়তে পারে, সঙ্গত কারণেই মানুষ আকৃষ্ট হয়।
কিন্তু মানুষের যে মৌলিক প্রবৃত্তি, অন্যের চেয়ে ধনে-মানে বড় হওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা, সে পালে লাগাম ইসলামকে ব্যবহার করে বেশি করে টেনে নেয় কৌশলী মানুষেরা, অনেক ক্ষেত্রে ইসলামের গোষ্ঠীবাদ কাজে লাগিয়ে তারা অন্য জাতিগোষ্ঠীর উপর চড়াও হয়, ইসলাম ধর্ম হয়ে ওঠে সম্রাজ্যবাদী। আমরা এখন ইসলাম ধর্মের যে রূপ বিশ্বব্যাপী দেখতে পাই সেটি মূলত ঐ সম্রাজ্যবাদী রূপ। সে বিবেচনায় এটা মনে হতে বাধ্য যে ইসলাম পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে ধারণ করেনি, কব্জা করে পূঁজিপতিদের হাতে তুলে দিয়েছে বরং।


শেকস্ রাসেল

লন্ডন যুক্তরাজ্য