একটি আদর্শ গ্রামের লক্ষ্যে ।। দিব্যেন্দু দ্বীপ


লালন: আমরা কি একটা আদর্শ গ্রাম গড়ে বিশ্বের কাছে মডেল উপস্থাপন করতে পারি না?

নজরুল: কীভাবে সেটি হতে পারে? কোনো গ্রামে গিয়ে তো আপনি এ কাজ করতে পারবেন না। পারবেন?

লালন: কোনো গ্রামে গিয়ে আমরা এটি করতে চাই না। গ্রাম আমাদের গড়ে নিতে হবে। এমন একটি গ্রাম গড়তে হবে যেখানে ব্যক্তি মালিকানায় শুধু জায়গা এবং বাড়ি থাকবে, প্রতিষ্ঠান হবে সমবায়ভিত্তিক। গ্রামটি হবে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর। প্রতি বছর সম্পদ বরং উদ্বৃত্ত থাকবে।

নজরুল: গ্রামটি কেমন হবে সেটি পরে শুনব। জানতে চাই, এতটা জায়গা একসাথে আপনি কোথায় পাবেন? সেখানে থাকবেই বা কারা?

লালন: জায়গা কিনতে হবে। এখনো এরকম জায়গা দেশে আছে। তাছাড়া দেশেই হতে হবে এমন নয়, পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় হতে পারে।

নজরুল: শুরুটা কীভাবে হবে জানতে চাই।

লালন: প্রথমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দিয়ে শুরু করতে হবে। তারপর ক্রমান্বয়ে আবাসিক কর্মসংস্থান করা হবে। প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সকলের জন্য একই রকম বাসস্থান এবং খাবার থাকবে। তবে যে যার মেধা-যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করেব, এবং কাজের প্রয়োজন অনুযায়ী সুযোগ সুবিধা পাবে, অর্থাৎ যে কাজ করতে যেমন সুবিধা থাকা লাগে। এভাবে দুই থেকে পাঁচ হাজার লোক নিয়ে একটি আদর্শ গ্রাম গড়ে উঠবে।

নজরুল: আরো একটু বিস্তারিত শুনতে চাই।

লালন: ধরলাম, প্রথমে এক হাজার একর বা আরো বেশি আয়তনের একটি জায়গা প্রয়োজন হল। সেটি তো হিসেব করে দেখতে হবে যে, সকল কর্মকাণ্ডের জন্য কী পরিমাণ জায়গা লাগে। এরপর পরিবেশ বান্ধব উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান নিয়ে ভাবতে হবে। বিভিন্ন ধরনের খামার থাকবে, গার্মেন্টস থাকবে, কুটির শিল্প থাকবে, ইত্যাদি যা যা রাখা যায়, মোটামুটি একটি দেশের লিলিপুট সংস্করণ হতে যা যা লাগে। সবকিছু চলবে সমবায়ভিত্তিকভাবে, ব্যক্তি মালিকানায় নয়। এখানে যারা নিয়োগ পাবে তারা একইসাথে সমবায়ের সদস্যও হবে। তারা বেতন পাবে এবং একইসাথে বছর শেষে নিয়মানুযায়ী লভ্যাংশও পাবে, তবে লভ্যাংশের বেশিরভাগ পাবে সুযোগ সুবিধা হিসেবে, টাকা হিসেবে নয়। টাকা কেউ খুব বেশি পাবে না। থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা, বস্ত্র-বাসস্থান, শিক্ষা, বিনোদন ইত্যাদি সবকিছুর ব্যবস্থা সংগঠন তথা কোম্পানি করবে। ভ্রমণ এবং বিনোদনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

নজরুল: অনেক টাকা লাগবে তো এটা করতে। টাকা কোথা থেকে আসবে?

লালন: প্রথমে জায়গাটা কিনতে যা টাকা লাগবে। বাকিটা ব্যাংক লোন নিয়ে করা যাবে। তাছাড়া আমাদের মধ্য থেকে কিছু মানুষ নিশ্চয়ই দশ বিশ হাজার করে টাকা দিতে সক্ষম হবে। শুধু লক্ষ্যটা আমাদের ঠিক করতে হবে।

নজরুল: আপাতত আমরা কী করব?

লালন: আপাতত সমবায়ের নামে ছোট ছোট আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে পূঁজি সংগ্রহ করতে হবে। বিস্তারিত ধাপে ধাপে আমরা আলোচনা করব।