Headlines

জিন্নাহ বনাম মৌদুদী : আজ এত বছর পর সাফল্যের অট্টহাসি কে হাসছে?

হাসান মাহমুদ%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%a6

জামাতের অজস্র ধোঁকাবাজীর একটা হল এ দাবী করা যে, পাকিস্তান নাকি “ইসলামী রাষ্ট্র” হিসেবে বানানো হয়েছে। কথাটা ঠিক নয়। ইসলামী রাষ্ট্র হলে প্রথম থেকেই তো মৌদুদী’র জামাতে ইসলামী পাকিস্তানের বিরোধীতা না করে সমর্থনই করত। মৌদুদী পাকিস্তানের বিরোধীতা করে বলেছিলেন, ইসলাম একটি বৈশ্বিক ধর্ম, কোনো বিশেষ জায়গায় তাকে আবদ্ধ করা যায় না। মৌদুদী জিন্নাহকে “কাফের-এ আজম” পর্যন্ত বলেছিলেন, কিন্তু পরে যখন পাকিস্তান হয়েই গেল তখন তিনি স্থায়ীভাবে পাকিস্তানে এসে বললেন ইসলাম বৈশ্বিক ধর্ম হলেও কোনো একটা জায়গা থেকে ইসলামী রাষ্ট্র শুরু করা যেতে পারে।

ভারতীয় মুসলিমদের জন্য পৃথক দেশের ধারণা অনেক আগের কিন্তু এমনকি ১৯৩০ সালেও কবি ইকবালের সভাপতিত্বে এলাহাবাদে মুসলিম লীগের অধিবেশনেও দাবীটা করা হয়েছে কোনো নাম ছাড়াই। কেমব্রিজ-ছাত্র চৌধুরী রহমত আলী ১৯৩৩ সালে সর্বপ্রথম “পাকিস্তান” নাম প্রস্তাব করেন এবং সেটা সবাই গ্রহণও করে। খেয়াল করুন, পাঞ্জাবের পি, আফগানিস্তানের এ, কাশ্মীরের কে, সিন্ধুর এস ও বেলুচিস্তানের “তান” নিয়ে নামটা বানানো হয়, সেখানে বাংলার উল্লেখই নেই! অথচ ভারতের মুসলিমের একটা বড় অংশ বাস করে বাংলায়। যাইহোক, ১৯৪৭ সালে দেশের জন্ম হয় “ডোমিনিয়ন অফ পাকিস্তান” নাম নিয়ে।

দশ বছর পর ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধানে “ইসলামিক রিপাবলিক অফ পাকিস্তান” নাম রাখা হয়। পাকিস্তানের মৌদুদীকরণের সেই শুরু, এই সর্বনাশা পথে চলে দেশটা আজ ভয়াবহ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। উল্লেখ্য, স্বাধীনতা পেয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশের নেতারা ইসলামী রাষ্ট্রের দিকে যাননি, যেমন, পাকিস্তানের জিন্নাহ, মিসরের নাসের, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ণ, ইরানের ড: মোসাদ্দেক। তুর্কীস্তানের মুস্তফা কামাল পাশাও খেলাফত উচ্ছেদ করে গণতন্ত্রের দিকে দেশ চালিত করেন। কিন্তু যেহেতু তাঁরা কেউই জনগণকে রাজনৈতিক ইসলামের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করেন নি, তাই ও দেশগুলোর প্রতিটি আজ কমবেশী রাজনৈতিক ইসলামে কুক্ষিগত।

জিন্নাহ কী চেয়েছিলেন? সেই ১৯৪৭ সালে মাহমুদাবাদের নবাব বিবৃতি দিলেন এইবার তাঁরা নূতন দেশটায় ইসলামি শরীয়াত মোতাবেক ইসলামি রাষ্ট্র বানাবেন। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সংবাদ মাধ্যমে ধমকে উঠলেন জিন্না–“পাকিস্তান হবে একটা আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।”- (সূত্র ভুলে গেছি)। তার অনেক আগে ১৯৪১ সালে কে. এম. মুন্সী যখন বক্তৃতা দিলেন “পাকিস্তানের শাসনব্যবস্থা কোরানের নির্দেশভিত্তিক হবে” তখনই আলিগড়ে জিন্না দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করলেন “পাকিস্তান ইসলামি রাষ্ট্র হবে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা” (“পূর্ব বাংলার সমাজ ও রাজনীতি” কমরুদ্দিন আহমদ, বাঙালী রাষ্ট্রদূত, পাকিস্তানী আমল)

কী চেয়েছিলেন জিন্নাহ? পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদে প্রথম বক্তৃতায় তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছিলেন- “আমাদের উচিত হবে আমাদের আদর্শকে সামনে ধরে রাখা, এবং আপনি দেখবেন সময়ের সাথে সাথে হিন্দু আর হিন্দু থাকবে না এবং মুসলিম আর মুসলিম থাকবে না, ধর্মের দিক দিয়ে নয় কারণ সেটা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বিষয়, বরং দেশের নাগরিক হিসেবে রাজনৈতিক দিক দিয়ে”।

আজ এতো বছর পর সাফল্যের অট্টহাসি কে হাসছে? জিন্নাহ, না মৌদুদী?

#লেখক: সাধারণ সম্পাদক, মুসলিম ফেসিং টুমরো