নারীর উচ্চতা পুরুষের চেয়ে কম হওয়ার কি দরকার ছিল? – দীপ্রা নাথ

আমার কাছে উত্তর একটাই মনে হয়। যাতে নারীর চোখে তাকিয়ে কথা বলতে গেলে, নারীর হাত ধরতে বা তাকে ভালোবেসে চুম্বন করতে চাইলে প্রত্যেকবার পুরুষকে তার সামনে মাথা নুইয়ে নত হতে হয়, সম্মান করতে হয়।

এই কথা শুনে কেউ কেউ হয়ত রাগ করবেন। বেঁকে বসে বলবেন, নারীর উচ্চতা পুরুষের চেয়ে কম এটা বোঝায় যে তারা পুরুষের চেয়ে আকারে ছোট হওয়ায় কম শক্তিশালী। সাথে যোগ করবেন যে এই দূর্বলতার জন্য তাদেরই বরং নত হয়ে থাকা উচিত, এবং পুরুষের আধিপত্য স্বীকার করে নিয়ে পুরুষ যেভাবে ঠিক করে দেয় সেভাবেই জীবন কাটিয়ে দেওয়া উচিত। দূর্বল হওয়ায় নিকৃষ্ট কাজগুলো, যাতে মস্তিস্ক খাটাতে হয় কম বা দায়িত্ব কম সেই কাজ গুলোই করা উচিত।

কিন্তু নারী পুরুষের চেয়ে দূর্বল এটা একদমই সত্যি না। নারী দৈহিক ভাবে বা মস্তিষ্ক খাটানোর কাজে পুরুষের সমান শক্তিশালী হতে পারে, শুধু কাজ করার অভ্যাস থাকলে।

নেত্রকোনায় গারো পাহাড়ে যান। গারো মেয়েরা মাথায় করে গাছ বয়ে নিয়ে পাহাড় ওঠে আর নামে, পিছে পিছে আসে ছেলেরা। সাথে ক্ষেতের কাজ, মাছ ধরা থেকে শুরু করে সন্তান পালন সংসারের কাজেও তারা সমানভাবে অংশ নেয়। সেখানে মেয়েরা নিজেদের অতিরিক্ত কাপড়ে ঢাকে না। ধর্ষণ নেই, ব্যাভিচার, নৈরাজ্য খুবই কম। বাহির থেকে দরিদ্র মনে হলেও সুখী একটা সমাজ তাদের ।
এটা আমার নিজের চোখে দেখা (ধন্যবাদ তাকে যে আমাকে ভালোবেসে আমার শখের গারো পাহাড়ে নিয়ে গেছিল, না হলে কখনই নিজের উপর আত্মবিশ্বাস জন্মাত না আমার)।

নারীই প্রাণের ধারক, বাহক এবং পৃথিবীতে প্রাণ নিয়ে আসার একমাত্র দরজা।

নারীকে অসম্মান করতে যে ভোদা/ভুদা শব্দটা তার অর্থ হল “ভূ + দ্বার” বা পৃথিবীর দুয়ার। শব্দটায় যতটা সম্মান আছে, ঠিক ততটা অসম্মানের সাথে শব্দটাকে ব্যবহার করা হয়, গালি হিসেবে। যা দিয়ে জন্মে এখন কথা বলতে পারছেন, তাকেই দেন গালি!

তাহলে এখন বলুন, সম্মান করবেন না সেই নারী জাত কে, যার মাধ্যমে আপনি আর আপনার বংশধরেরা পৃথিবীর আলো দেখতে পাচ্ছেন ? সম্মান করবেন না তার সেই সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে যেগুলো সন্তান ধারন করে, সন্তানকে স্তন্যপান করিয়ে বাঁচিয়ে রাখে? সেগুলোর আকার আকৃতি নিয়ে বিকৃত গবেষণা বাদ দিবেন? নাকি উল্টো বরং বিকৃতির চরম পর্যায়ে গিয়ে সেই পবিত্র মুখ যা মানবসন্তানের মুখে আদর করে চুমু খায়, গান শুনিয়ে কান্না থামায়, সেই মুখের মধ্যে দিবেন আপনার পুরুষাঙ্গ পুরে?

গারো নারীদের উদাহরণের শোনার পর বলবেন আর কখনো যে শুধু সংসার, সন্তান জন্মদান আর পালনই নারীর একমাত্র কাজ?

নারীকে সম্মান না করলে নিজের মানব জন্ম কে অসম্মান করবেন আর অসম্মান করবেন সম্পূর্ণ মানব জাতিকে, সম্পূর্ন সৃষ্টিকে। পুরুষের সম্মান কোনো অংশে কম এটা আমি বলিনি, এটা হতেও পারে না। কিন্তু নারীকে পুরুষেরা সম্মান করতে ভুলে যায় জেনেই প্রকৃতি নারীকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছে, যাতে পুরুষকে নারীর সামনে বারবার ঝুঁকে, নত হয়ে এটা মনে রাখতে হয়।

-দীপ্রা নাথ