“বাংলাদেশের সরকার আওয়ামী লীগ, পাহাড়ের সরকার আর্মি” – কুঙ্গ থাঙ

চাকমা

বাংলাদেশের সরকার আওয়ামী লীগ ৷ পাহাড়ের সরকার আর্মি ৷ তারা আমাদের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ৷ রমেল চাকমা নামের ১৮ বছরের ছেলেটি এইচএসসি পরীক্ষার জন্য নানিয়াচর বাজারের একটি বাসায় ভাড়া থাকত ৷ আংশিক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছিল ছেলেটি, ডানচোখে দেখতে পেত না ৷ বুধবারে পরীক্ষা ছিল না তাই সকালে আলু পটল কিনতে গিয়েছিল বাজারে ৷

ফেরার পথে নানিয়াচর জোনের ৭ নং ই. বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনা সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে যায় ক্যাম্পে ৷ সেখানে আর্মির নিজস্ব পদ্ধতিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ৷ বিকেলে মৃতপ্রায় রমেলকে থানায় দিয়ে আসে আর্মি ৷ অজ্ঞান ‘আসামী’ কে রাখতে রাজী হননি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ৷

তাকে থানার পার্শ্ববতী সদর হাসপাতালে ভর্তি করাতে গেলে সেখানকার চিকিৎসকেরাও অপারগতা প্রকাশ করে চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করার পরামর্শ দেয় ৷ ১৯শে এপ্রিল চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে কড়া সেনা ও পুলিশি নজরদারির মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় রমেল চাকমা ৷ তার লাশ নিজ বাড়িতে পৌঁছার পরপরই আর্মির লোকজন এসে লাশ নিয়ে যায় ৷ বুঝতে পারছি না, লাশ নির্যাতন করে কথা বের করা যায় এমন প্রযুক্তি আবিষ্কার হলো কবে!


কেবল সন্দেহবশত একটা নিরপরাধ ছাত্রকে ধরে নিয়ে মেরে ফেলল এই নিউজটা কোনো জাতীয় পত্রিকায় দেখলাম না ৷ টিভির কোনো নিউজেও আসেনি ৷ এর কারণ কী? নামের সাথে চাকমা মারমা সাঁওতাল হাজং সরেন থাকা কি অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হতে শুরু করেছে? নাকি অমন দু’একটা লাশের মূল্য তিন বা চার কলামের একটি বিজ্ঞাপনের সমতূল্য হতে পারেনি?


বাংলাদেশের সরকার আওয়ামী লীগ ৷ পাহাড়ের সরকার আর্মি ৷ আওয়ামী লীগ ও আর্মি এই দুই ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠানকে নিন্দা জানানোর সাহস বা ক্ষমতা কোনোটাই আমার নাই ৷ আমার নিজেরও সন্তান আছে ৷ দরকার পড়লে সে এইচএসসি পরীক্ষা দেবে না, বাজারে সদাই করতে যাবে না ৷ জীবনের মূল্য যেখানে আলু বা পটল সেখানে ‘জ্বি হুজুর’ ‘আদাব স্যার’ ‘স্যালুট স্যার’ ‘উফ খুব ভাল করেছেন স্যার’ ‘আস্থা আছে’ বলে দিন এলে রাতের প্রতীক্ষা করা, রাত এলে দিনের প্রতীক্ষা করা ছাড়া আর উপায় কি!


কুঙ্গ থাঙ