মানুষ কী করবে?

বর্তমানে গণমাধ্যমগুলোতে উদ্ভট অনেক খাবারের রেসিপি দেখা যায়। এইসব রেসিপির পিছনের মনস্তত্ব চিন্তা করলে বোঝা যায়— অর্থের প্রাচুর্যে ঢাকা শহরের ঘরে ঘরে যে অনাসৃষ্টি শুরু হয়েছে তা রান্নাঘর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, না হলে ফলের পাটিসাপ্টা পিঠা বা ঢেঁড়শ-মুরগীর মাংস বানানোর চিন্তা মাথায় আসার কথা নয়, সেটি পত্রিকায় ছাপা হওয়ারও কথা নয়। ভারতবর্ষের কামসূত্র নামক এক পূরাণ আছে। সেখানে নানান কলা-কৌশলের মাধ্যমে শিখানো হয়েছে যৌন জীবনকে সমৃদ্ধ করার উপায়। আধুনিক যুগের কামসূত্র বিকৃতির পর্যায়ে পৌঁছেছে। অর্থের প্রাচুর্যে এখানেও অনাসৃষ্টি, যার শিকার এখন নারী-পুরুষ উভয়ই। বৈষয়িক সুখ খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত মানুষ আজ দিশেহারা। মানুষ আজ সৃষ্টির নামে অনাসৃষ্টি শুরু করছে, স্রষ্টার নামে ভ্রষ্ট হচ্ছে।

মানুষ খাবে এবং ঘুমাবে, আর কী করবে? বাধ্য হলে কাজ করবে। উপার্জনের তাগিদে কাজ করবে। যাদের সে তাগিদ নেই তারা কী করবে? তারা ফলের পাটিসাপ্টা বানাবে, তারা কামসূত্রের নতুন সংস্করণ খুঁজবে, তারা মাদকাসক্ত হবে।

যারা বলছে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে এসব ঘটছে তারা ভুল করছে। এসব ঘটছে শিল্প-সংস্কৃতির চর্চার সুযোগ ক্রমাগতভাবে সংকুচিত হওয়ার কারণে। শিল্পের সবটুকু আজ বাক্সবন্দি। এছাড়া নিজস্ব কোনো ভূবন না থাকলে, উৎকৃষ্ট কোনো নেশা থাকলে এরকমটিই তো হবার কথা। বর্তমানে চার দেওয়ালের মাঝে মানুষ খুঁজে নিতে চাইছে জীবনের সবটুকু সুখ। বিপরীতে তৈরি হচ্ছে শূন্যতা। মানুষের ভেতরের শূন্যতার সুযোগ নিতে ‘ঐশীদের’ ডাক আসে নিষিদ্ধ জগৎ হতে। সে জগৎ জুয়ার, সে জগৎ মাদকের, সে জগৎ স্রষ্টার নামে বর্বর হওয়ার।

কোনোভাবেই এই শূন্যতা আপনি বস্তুগতভাবে পূরণ করতে পারবেন না। খেয়াল করে দেখবেন যে, কিছু শখ শূন্যতা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। একটি দামী স্মার্টফোন, বা অন্য কোনো দামী গেজেট— এসবকিছু সাময়িক একটা উত্তেজনা তৈরি করলেও আপনাকে প্রকৃতপক্ষে সুখী করতে পারবে না। আবার বন্ধুত্ব এবং সম্পর্কের বিষয়গুলোও এখন খুব জটিল। মানুষের সামনে অপশন অনেক বেশি থাকায় কাউকেই আমরা আর আঁকড়ে থাকতে চেষ্টা করি না। নতুনত্ব চাই। ফলে মানুষও এখন আর কাউকে সুখী করে না। এজন্যই নিজের একটা একান্ত কাজ থাকা দরকার, একটা লক্ষ্য থাকা দরকার, যেখানে আপনি ফিরবেন— দিনশেষে ফিরবেন, রাতশেষে ফিরবেন, দুঃখ পেলে ফিরবেন ল …। লক্ষ্যটা অর্জনের জন্য আপনি নিরলস কাজ করে যাবেন। দেখবেন যে, আপনি বেশ শান্ত থাকতে পারছেন। আসলে সুখের চেয়ে শান্তিটাই মানুষের বেশী জরুরী।