ফেসবুক থেকে : পৈশাচিকতার বিশ্ব!

জাকিয়া সুলতানা মুক্তা

গতকাল থেকে একই রকমের কিছু বিষয়,
আমার মাঝে ভীষণ কৌতুকের সৃষ্টি করে যাচ্ছে।
মজা পাচ্ছি খুব…

🙂

গতকাল ওকে একটা মোবাইল গিফট করলাম। যে শোরুম থেকে মোবাইল সেটটা কিনলাম, বিক্রয়কর্মীর বাড়ি মুন্সিগঞ্জ বলে জানলাম।
হুম্মম! মুন্সিগঞ্জ!!

মোবাইল সেটটা কিনতে আসার পথে মুন্সিগঞ্জ-কেরাণীগঞ্জের মাঝামাঝি একটা জায়গা থেকে আমার এই মজা পাওয়ার শুরু…

একটা জায়গার নাম সেখানে ‘রামের কান্দা’। সি.এন.জি-থেকে আমার চোখে পড়লো, ‘রামের কান্দা ঈদগাহ মাঠ’!
আমি বেশ মজা পেলাম। বললাম~
“দেখো! রামের কান্দায় ঈদ জামাতের স্থান, কী সুন্দর সহাবস্থান। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অপূর্ব মিলন।”

বলেই সাথে সাথে আমার মনে পড়ে গেলো,
আরে! এই ‘মুন্সিগঞ্জ’ই না আগে ‘বিক্রমপুর’ বলে পরিচিত ছিলো?

হুম্মম! তাহলে সচেতন নাগরিকেরা সব স্থানের নাম এখনও পরিবর্তন করে পারে নাই।
তাইতো ‘বিক্রমপুর’, ‘মুন্সিগঞ্জ’ হলেও…’রামের কান্দা’, এখনও ‘রহিমের কান্দা’ হয়ে পারেনি!!
কী মুশকিল! কী মুশকিল!!

রামের কান্দায় ঈদ জামাত??
কীভাবে সম্ভব, সৃষ্টিকর্তা!
পরাধীন স্থানে তো ঈদ পালনের বিধান নাই…:/
তাই, করো সব পরিবর্তন…
“দড়ি ধরে মারো টান,
মূর্তি যাবে হিন্দুস্থান।।”

সবইতো ঠিক হলো, পিনাকীপরামর্শ(😈) মোতাবেক ‘লেডি জাস্টিস’-র ‘ভাস্কর্য’, থুক্কু ‘মূর্তি'(!) হিন্দুস্থানেই পাঠানোর ব্যবস্থা করলাম শেষতক।

তবে এখানে একটা গন্ডগোলের কথা মনে পড়লো।

নব্বইয়ের দশকে এই ‘পরিবর্তন-পরিশুদ্ধতা’র প্রয়াস সম্পর্কে, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত সাহেবকে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে এ প্রসঙ্গে এভাবে একবার বলতে শুনেছিলাম~

“মাননীয় স্পীকার!
বিক্রমপুর, না হয় মুন্সিগঞ্জ হলো। কৃষ্ণনগর, হলো মোহাম্মদনগর। কিন্তু ‘রামছগল’টার উপায় কী হবে?
তাই নিয়ে ভাবছি!”

আমিও ভাবনায় পড়লাম…:/ :/ :/

খেয়াল হলো~
আসার পথে ওই রামের কান্দারই কাছাকাছি একটা স্থানে, একটা মাদ্রাসার সামনে বড় বড় করে লেখা দেখেছিলাম অবশ্য…
“ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করা মহাপাপ।”

ছোট্ট মাদ্রাসা! অথচ কত বড় হৃদয় ধারণ করা উচ্চারণ লিখে রেখেছে…🙂
বেশিরভাগেই তো উল্টোটা শেখানো হয় বলে অনুমিত হয়।

আহারে!
দেশের সব ক’টা পরিবারে, সব ক’টা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি ওই ছোট্ট মাদ্রাসার মতন করে এমন শিক্ষাটাই শিশুদের মনস্তত্ত্বে দেয়ার ব্যবস্থা করা হতো। কত্ত ভালোই না হতো।

তাহলে হয়তো আমরা বিরুদ্ধমতকে না মানলেও, না পালন করলেও…তাকে সহ্য করে নিতে শিখতে পারতাম।
অপরকে সম্মান দিতে শিখতাম। শান্তির ধর্ম প্রতিষ্ঠায় রক্তক্ষয় করার পথে হাঁটতাম না।

এমনকি কোন শিক্ষার্থী হয়তো, পরমতসহিষ্ণুতার শিক্ষা দিতে যাওয়ার সময় তার শিক্ষককে শ্রেণিকক্ষে দাঁড়িয়ে আর বলে উঠতো না এমন করে যে~

“ধর্মের বিষয়ে কোন ছাড় নাই, ম্যাডাম। ধর্মকে কটাক্ষ করলে, ধর্মীয় গুরুকে নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করলে, ধর্মীয় রীতিকে নিয়ে অযাচিত কিছু বললে স্বয়ং রাষ্ট্রপতিকেও কোন ছাড় দেয়া হবে না।”

হায়! এদেশে আইন আছে, কিন্তু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত নাই!
আইন তাই বরাবর জনগণের মুষ্ঠিতে আবদ্ধ,আর জীবন তাই নারকীয় মৃত্যু থেকে এক সেকেন্ডেরও কম দূরত্বে অবস্থিত।

শুধু ধর্মীয় উগ্রতাই কী কেবল, জাতীয়তাবোধের উগ্রতাও আজকাল ভীষণ চোখে বাঁধে। তাই তো ‘রমেল চাকমা’-দের জীবিত দেহতো বিনাশ হয়ই, মৃতদেহকেও পেট্রোলে পুড়ে ভষ্ম হতে হয়!

পৈশাচিকতার বিশ্ব!

কৌতুক আর বেশিক্ষণ তাই কৌতুক থাকে না, মুখে উঠে আসতে চায়…
কবি বলা সেই কঠোর বাণী~
“আমি শূকরের সাথে সহবাসের ফতোয়া অস্বীকার করি।”

কৌতুকটা এখানেই যে~ ‘শূকর’ ইজ এভ্রিহোয়ার!
কই জাইতাম..



জাকিয়া সুলতানা মুক্তা