বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং সাইনবোর্ড বাজারে অবস্থিত শরৎচন্দ্র মেমোরিয়াল ক্লিনিকের পরিচালক ডা. তাপস কুমার দাস (৪৯) মারা গেছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২১ জুন ২০১৮) দুপুরে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লোকজন তাকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. অরুণ চন্দ্র মন্ডল দুপুরে বলেন, প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার সকালে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তাপস কুমার দাস তার কার্যালয়ে আসেন। সেখানে দাফতরিক কাজ করার সময়ে হঠাৎ তিনি তার সহকর্মীদের ডেকে তার বুকে ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে বলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এসময় তার সহকর্মীরা তার চিকিৎসা শুরু করেন। তার অবস্থার কোন উন্নতি না হওয়ায় তাকে দ্রুত বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। দুপুর একটায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
তিনি উপজেলার চরকাঠী গ্রামের শরৎচন্দ্র দাসের ছেলে। বাগেরহাটের পলি কিনিকের সত্ত্বাধিকারী ডা. সুনীল কুমার দাস তাঁর বড় ভাই। জয়িতা দাস (১৫) নামে তাঁর একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ৩ বছর আগে তার স্ত্রী ডা. তপোতি পোদ্দার মারা যান। তিনি আত্মহত্যা করেছিল বলে জানা যায়।
ডা. তাপসের মরদেহ বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর শওকত আলী বাদশা, সিভিল সার্জন ডা. অরুন চন্দ্র মন্ডল, কচুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএম মাহফুজুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান হাজরা ওবায়দুর রেজা সেলিম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা সরোয়ার, বাগেরহাট প্রেসকাবের সভাপতি আহাদ উদ্দিন হায়দার, সাবেক সভাপতি বাবুল সরদার, শেখ আহসানুল করিম, সহসভাপতি নিহার রঞ্জন সাহা, সাবেক সাধারন সম্পাদক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্তি সহ বাগেরহাট জেলার গণমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হন।
তাঁরা ডা. তাপসের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
ডা. তাপস কুমার দাস বরিশাল মেডিকেল কলেজে থেকে এমবিবিএস পাশ করে ২১তম বিসিএসে কৃতকার্য হন। ২০০৩ সালের ২১ মে মেডিকেল অফিসার হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগে যোগদান করেন।
ডা. তাপসের মৃত্যুতে ফেসবুকে কয়েকজনের প্রতিক্রিয়া:
Mosharraf Hossain Mukto
গভীর দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে আমাদের প্রিয় সহকর্মী কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ ও প.প. কর্মকর্তা ডা তাপস দাস আজ বেলা ১২টায় হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেন। তার এই অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। বাগেরহাটের সকল চিকিৎসকের চেম্বার তার বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্ধ রাখতে অনুরোধ করছি।
ডা মোশাররফ হোসেন
আহবায়ক, স্বা চি প
সহ সভাপতি,
বি এম এ,
বাগেরহাট
Chaina Khanam
Ajoy Kumar Chakrabortty
না ফেরার দেশে চলে গেলেন বন্ধুবর ডা:তাপস দাস
আজ বেলা ১২:৩০ মিনিটে হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের সময়ে হঠাত স্ট্রোক করে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়লেন আমার কলেজ জীবনের সহপাঠী ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত যার সাথে একসাথে প্রাইভেট পড়াসহ অনেক আনন্দদায়ক সময় উপভোগ করেছি বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার এক ঐতিহ্যবাহি পরিবারের কৃতি সন্তান আমাদের সেই প্রিয় তাপস দা।তাপস দা একজন জনদরদি জনপ্রিয় চিকিৎসক ছিলেন।চিকিৎসা পেশাকে সত্যিই তিনি মানব কল্যানে সেবামূলক পেশা হিসাবে গ্রহন করেছিলেন।তাইতো এলাকায় তার স্বর্গীয় পিতার নামে গড়ে তুলেছিলেন চিকিতসালয়।নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে এলাকার জনগনকে চিকিৎসাসেবা দিতেন তিনি।এ মহান ব্যক্তির মৃত্যতে এলাকাসী হারালো তাদের এক অকৃত্রিম বন্ধু।তার মৃতুজনিত ক্ষতি পূরণযোগ্য নয়। তাপস দার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনাসহ শোক সন্তপ্ত পরিবারে প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
Dilip Banik
ডা: তাপস দাস একজন দায়িত্বশীল চিকিৎসক ছিলেন। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এ অরাজকতার মধ্যেও তিনি নিরলসভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদানকরে গেছেন। কচুয়ায় ইউ এন ও থাকাকালে তিনি আমাদের পারিবারিক চিকিৎসক ছিলেন। কচুয়া থেকে চলে আসার পরেও যখনি চিকিৎসার ব্যাপারে তার পরামর্শ চেয়েছি, তখনি পরামর্শ পেয়েছি। চিকিৎসা পেশা ছাড়াও তিনি অনেক সামাজিক কাজকর্মে জড়িত ছিলেন। সাইনবোর্ড এলাকার দুর্গাপুজা তার সহ্যযোগিতায় হতো। তার এ অকাল মৃত্যু কচুয়াবাসীর জন্য এক ব্জ্রাঘাত। আমি তার বিদেহি আত্মার শান্তি কামনাসহ তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
Ashutosh Halder
ডা. তাপস দাস, তোমাকে শেষ বিদায় দিতে হোল।
স্বর্গবাসী হও তুমি।
Dipanjay Mirbar
গতরাতটা নির্ঘুম কাটালাম, ভালো লাগছিলোনা কিছুই। কত স্মৃতি ঘুরে ফিরে মাথার ভিতরে ভীড় করছিলো তার ঠিক নেই। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে যখন পোস্টিং নিয়ে নিজ উপজেলাতে আসলাম স্যার তখন ভারপ্রাপ্ত uh&fpo, তারপর থেকেই এই মানুষটিই হয়ে গেলেন আমার অভিভাবক ও পথপ্রদর্শক।
কতটা সময় যে একসাথে কাটিয়েছি। মাঝেমাঝে স্যারের উপর রাগ করতাম, এতো কেয়ার করে। যখন ঢাকায় যেতাম একদিন পরেই কল করে বলতেন কবে আসবো, অথচ আমার ছুটি আরো বেশি।
স্যার কিছুদিন আগে ইন্ডিয়া গেছিলেন বেড়াতে, সেখানে গিয়ে প্রতিদিন ৫-৭ বার আমাকে আর dr Belfar Hossain কে কল করতেন। রাগ করতাম স্যারের উপর বেড়াতে গিয়েও হাসপাতাল ভুলতে পারছেন না। হাসপাতাল ছিলো তার ধ্যান জ্ঞান।
তিনি যখন পদোন্নতি পেয়ে uh&fpo হলেন, তারপর থেকেই হাসপাতালের উন্নয়নের জন্য প্রানপন চেষ্টা করে গেছেন, কতবার আমায় নিয়ে health engineering department, khulna তে গেছেন। হাসপাতালের পুরানো বিল্ডিং সংস্কার, রাস্তা করা, ড্রেন করা সব কিছুই তার হাত শুরু হয়েছিল। তার স্বপ্ন ছিলো হাসপাতাল টিকে মডেল হাসপাতাল করে তুলবেন।
রুগীদের কে নিজের পকেটের টাকা দিয়ে সাহায্য করতেন, কখনো কেউ এসে তার কাছে নিরাশ হয় নি।
কচুয়া বাসির যে প্রোগ্রাম হোক উনার কাছে গেলে উনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন।
স্যার সব সময় একটা কথা বলতেন ” আমি ডা:তাপস (Tapas K Das) এই দেশের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছি এই দেশেই মারা যাবো আর রুগী ও হাসপাতালের স্বার্থ রক্ষার্থে সব কিছু করবো “।
জানি, ওনার শারীরিক মৃত্যু হয়ত হয়েছে কিন্তু কচুয়াবাসির অন্তরে উনি চির ভাস্বর হয়ে রইবেন। কচুয়া হাসপাতাল যতদিন সেবা দিয়ে যাবে ততদিন ওনাকে হাসপাতালের প্রতিটা বালুকণাও বিনম্রশ্রদ্ধায় স্মরন করবে।
আপনি যেখানেই থাকবেন ভালো থাকবেন, স্যার। এতো মানুষের আশীর্বাদ আর দোয়া বিফলে যেতে পারে না।
দিব্যেন্দু দ্বীপ ডা. তাপস দাসের উদ্দেশ্যে জন ডানের একটি কবিতা অনুবাদ করে উৎসর্গ করেছেন।
কেউই একাকী একটি দ্বীপ নয়; প্রত্যেক মানুষ
মহাদেশের একটি অংশ, সমগ্রের একটি খণ্ড;
একখণ্ড মাটি যদি সাগরের পানিতে ভেসে ভেঙ্গে পড়ে,
সমগ্র পৃথিবী কমে, একইভাবে যদি একটি অন্তঃরীপ হারিয়ে যায়,
একই হয় যদি ভেসে যায় তোমার বন্ধুর বাড়ি বা তোমার নিজের;
যে কোনো মানুষের মৃত্যু আমাকে দুর্বল করে,
কারণ আমি মানব জাতির অন্তর্ভুক্ত,
অতএব জানতে চেও না কার মৃত্যুতে
ঘণ্টা বাজে; এ সুর তোমার জন্যও।