ধর্মান্তরিত করে বিয়ে অতঃপর ধর্ষণ করে হত্যা

সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরা
হাসপাতালের বিছানায় মৃতপ্রায় অগ্নিদগ্ধ টুম্পা খাতুন।

একের পর এক বিয়ে করার প্রতিবাদ করায় যাত্রাদলের নায়িকা ধর্মান্তরিত টুম্পা খাতুনকে গণধর্ষণের পর তার শরীরে কোরাসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে হত্যার অভিযোগে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমসহ ১১জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা পাঁচজনের রিুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার আশাশুনি উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেন সরদারের ছেলে শহীদুল ইসলাম বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এ মামলা দায়ের করেন।

ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ জোয়ার্দার আমিরুল ইসলাম অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গন্য করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেনে।

মামলার আসামীরা হলেন, আশাশুনি উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের গহর গাজীর ছেলে সাইফুল্লাহ গাজী (৩৮), একই গ্রামের ওমর আলী সরদারের ছেলে রিপন সরদার (৩০), এছহাক সরদারের ছেলে আবু মুছা (৩০), একই উপজেলার গদাইপুর গ্রামের রাজাকার মোজাহার সরদারের ছেলে খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিম, দুর্গাপুর গ্রামের করিম বক্সের ছেলে কামরুল ইসলাম (৪৫), তার ভাই আনারুল ইসলাম (৩৫), আছিরদ্দিনের ছেলে লাভলু গাজী (৩৫), খালেক সরদারের ছেলে মহসিন সরদার (২৪), শহর আলীর ছেলে খায়রুল ইসলাম (২৮) চেউটিয়া গ্রামের লতিফ সরদারের ছেলে কবীর হোসেন (৩৬) ও খুলনা জেলা শহরের সোনাডাঙা গোবর চাকা মেইন রোডের আবুল হোসেনের ছেলে চিশতি ওরফে চুন্নু চোরা (৪০)। এ ছাড়া আরো পাঁচজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে।

মামলার বিবরনে জানা যায়, পাঁচ বছর আগে যাত্রাদলের নায়িকা হিসেবে আশাশুনির দুর্গাপুর গ্রামের সোনা চৌকিদারের বাড়ির পাশে মাঠে গান করতে আসা গোপালগঞ্জ জেলা সদরের বটবাড়ি গ্রামের মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাসের মেয়ে সোমা বিশ্বাসকে (২৫) ফুসলিয়ে নিয়ে খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াাজ ডালিমের সহযোগিতায় ধর্মান্তরিত করে টুম্পা খাতুন নাম দিয়ে তাকে বিয়ে করেন একই উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের মাদকাসক্ত সাইফুল্লাহ। বর্তমানে তাদের মরিয়ম নামে দু’বছর দু’ মাসের একটি মেয়ে আছে।

সাইফুল্লার প্রথম স্ত্রী বর্তমানে খাজরা সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য তমেনা। এ ছাড়া দু’মাস আগে খাজরা ইউনিয়নের দুর্গাপুরে সোনা চৌকিদারের বাড়ির পাশে মাঠে যাত্রা এনে এক ওই দলের এক নারীকে ও আড়াই মাস আগে আরো একটি যাত্রা দল এনে ওই দলের আরো একটি মেয়েকে বিয়ে করে সাইফুল্লাহ।

বর্তমানে তার ছয় স্ত্রী। এ নিয়ে টুম্পার সঙ্গে সাইফুল্লার বিরোধ চলে আসছিলো। প্রতিবাদ করায় সাইফুল্লাহ টুম্পাকে মাঝে মাঝে নির্যাতন করতো। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়ায় জোরালো কোনো প্রতিবাদ না করেই সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে সব ধরনের নির্যাতন সহ্য করতে থাকে টুম্পা।

গত ৯ জুন দিবাগত রাত তিনটার দিকে টুম্পা তার স্বামীর বাগদা চিংড়ির হ্যাচারির বাসায় স্বামী সাইফুল্লাহ’র সঙ্গে অবস্থান করছিলো। এ সময় সে বাসার পাশে কয়েকজনের ফসুফস করে কথা বলতে শোনে। বিষয়টি সাইফুল্লাহকে জানালে বাইরে থাকা ওইসব লোকজনকে সাইফুল্লাহ বলে যে— ‘তোদের যা বলেছি সেই অনুযায়ি কাজ কর’।

এর পরপরই শাহানেওয়াজ ডালিমসহ ১৪/১৫ জন টুম্পার উপর ঝাপিয়ে পড়ে গণধর্ষণ করে। পরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে ও কাথা জড়িয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। ১০ জুন টুম্পাকে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও পরে তাকে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ জুন সকাল সাতটার দিকে টুম্পা খাতুন মারা যায়। নিজেরা বাঁচতে আসামীরা পুলিশের সঙ্গে যোগসাজস করে টুম্পা খাতুনের লাশ পিরোজপুরে দাফন করে। মামলায় মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে নিরুপন করার জন্য লাশ কবর থেকে তুলে ময়না তদন্ত করার কথা বলা হয়েছে।

মামলার বাদি নিজেকে নিহত টুম্পা খাতুনের ধর্ম ভাই বলে উল্লেখ করেছেন। আসামীদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৪(১)/৯(২)/৯(৩)/৩০ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহীনুল ইসলাম শহীদ জানান, মামলার নথি পাওয়ার পর তা রেকর্ড করে আসামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


নিউজটি এইসময় পোর্টাল থেকে সংগৃহীত