ভুয়া কাবিননামার মাধ্যমে বিয়ে দেখিয়ে ঐ ছাত্র সহপাঠীর সঙ্গে প্রায় তিন বছর কাটানোর পর সম্পর্ক অস্বীকার করায় ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন
গ্রেপ্তার আতাউল্লাহ হাসান বিশ্ববিদ্যালয়টির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। অভিযোগকারী ছাত্রী একই বিভাগ ও সেশনে হাসানের সহপাঠী হলেও স্নাতক শেষ করার পর স্নাতকোত্তর পর্বের ক্লাস পরীক্ষায় আর অংশ নেননি।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর কদমতলী থানায় আতাউল্লাহর নামে ওই ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয় বলে জানান থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী। তিনি বলেন, “ওই ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষণ মামলায় তাকে আটক করা হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এর আগে সোমবার বিকালে সম্পর্ক অস্বীকার ও শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ে আতাউল্লাহর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের পাশাপাশি কোতয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেন।
অভিযোগের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে চার ঘণ্টার সালিশী বৈঠক শেষে প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদ, সহকারী প্রক্টর মোস্তফা কামাল ও কোতয়ালি খানার এসি শাহেন শাহ কদমতলী থানা পুলিশের কাছে আতাউল্লাহকে সোপর্দ করেন।
এরপর রাত সাড়ে ১০টায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সম্পর্ক স্থাপন আইনে ধর্ষণ বলে গণ্য হওয়ায় এই ধারায় মামলা করেন ওই ছাত্রী।
তার অভিযোগ, ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে সাংবাদিকতা বিভাগে একসঙ্গে ভর্তি হওয়ার পর তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। পরে বিয়ে করে ২০১২ সালের অগাস্ট থেকে জুরাইনের একটি বাসায় শারীরিক সম্পর্ক করে আসছিলেন তারা।
তবে বিয়ের যে কাবিননামার কারণে আতাউল্লাহ তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে আসছেন, সম্প্রতি সম্পর্ক অস্বীকার করার পর তার সেটি রেজিস্ট্রেশনবিহীন ‘ভুয়া’ বলে জানতে পারেন তিনি।
তার দাবি, সহপাঠী হলেও স্নাতক শেষ করার পর স্নাতকোত্তর পর্বের ক্লাস-পরীক্ষা অংশ নিলে সম্পর্কচ্ছেদ করবেন বলে আতাউল্লাহ তাকে হুমকি দেওয়ায় তিনি মাস্টার্সে ভর্তি হন নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ে দেওয়া অভিযোগপত্রে ওই ছাত্রী লেখেন, গোপনে বিয়ে করলেও পরে তার সাথে সম্পর্ক অস্বীকার করেন আতাউল্লাহ। স্ত্রীর অধিকার ফিরে পেতে সোমবার তার সাথে দেখা করতে আসলে আতাউল্লাহ তাকে লাথি দিয়ে বাস থেকে ফেলে দেন।
এসময় তাকে মারধরের পাশাপাশি আতাউল্লাহ তার কাপড়ও ছিড়ে ফেলেন বলে অভিযোগ ওই ছাত্রীর।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষাপটেই মঙ্গলবার প্রক্টর কার্যালয়ে দুই পক্ষকেই ডাকা হয়।
ওই বৈঠকে আতাউল্লাহ অভিযোগকারীকে ‘চরিত্রহীন’ দাবি করে বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও একজন অফিস সহকারীসহ কয়েকজনের নাম সাক্ষী হিসেবে লিখে পাল্টা অভিযোগ দেন।
তবে ওই সাক্ষীর তালিকায় থাকা চারজন বলেন, তাদের সাক্ষী করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে তারা কিছু জানেন নান। তবে দুইজনের সম্পর্কের বিষয়ে তারা অবগত, সে কারণে তারা আতাউল্লাহ ’র বিচার দাবিও করেন।
বৈঠকে আতাউল্লাহ তার পক্ষের সাক্ষী হিসেবে অভিযোগকারী ছাত্রীর এক ফুফুকে হাজির করেন। তবে তিনি দুইজনের বিয়ে ও শারীরিক সম্পর্কের বিষয়ে শুধু নানা তথ্য দেন।
পরে আতাউল্লাহ শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করলেও বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এসময় ওই ছাত্রীর দাবি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুই পক্ষকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আতাউল্লাহ বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর ওই ছাত্রী কদমতলী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূর মোহাম্মদ বলেন, “দুই পক্ষকে ডাকা হয়েছিল। ছেলে বিয়ের বিষয়টি স্বীকার না করলেও লিভ টুগেদারের বিষয়টি স্বীকার করেছে।
“কিন্তু ছেলে তার ফাঁসি হলেও ওই মেয়েকে বিয়ে করবে না জানালে তার বিরুদ্ধে মামলা করে ওই ছাত্রী। পরে তাকে পুলিশ নিয়ে গেছে।”
প্রক্টর কার্যালয়ের বৈঠকে অংশ নেওয়া কোতয়ালি থানার এসি শাহেন শাহ সাংবাদিকদের বলেন, “যেহেতু ঘটনাটি কদমতলী থানার অধীন, তাই মামলাটি ওই থানায় হবে।”
#খবরটি বিডিনিউজ থেকে নেওয়া।