উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সুরাইয়া আক্তার রিশা ছুরিকাহত হওয়ার পর তার চিকিৎসার ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল বলে অভিযোগ করেছেন রিশার বাবা-মা, অন্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, রিশা ছুরিকাহত হওয়ার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনও দায়িত্ব নেয়নি। তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিলে রিশাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেওয়া যেত। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তাদের কোনও গাফিলতি ছিল না। সোমবার রিশা হত্যার বিচার দাবিতে স্কুল মাঠে ও কাকরাইলের সড়ক অবরোধ কর্মসূচিকালে অভিভাবকরা এসব অভিযোগ করেন।
সোমবার (২৯ আগস্ট) রিশা হত্যার বিচার চেয়ে প্রথমে স্কুল মাঠে এবং পরে কাকরাইলের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। তবে ডিএমপির পক্ষ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওবায়দুলকে গ্রেফতার করার আশ্বাস দিলে অভিভাবকরা বিক্ষোভ স্থগিত করেন।
কাকরাইলে অবস্থিত উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে সোমবার সকাল সাড়ে ১১ টায় গিয়ে দেখা যায়, স্কুল মাঠে জড়ো হয়েছে স্কুল শিক্ষার্থীরা। তারা সেখানে এ হত্যার বিচার চেয়ে স্লোগান দেয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রিশার বাবা মো. রমজান হোসেন, মা তানিয়া হোসেনসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। রিশার অভিভাবকরা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রিশা ছুরিকাহত হয় স্কুলের সামনের ফুটওভার ব্রিজে। সেখান থেকে সে রক্তাক্ত অবস্থায় এসে দাঁড়ায় স্কুলের ভেতরে, তখন তার পেটের বাম দিক থেকে রক্ত পড়ছিল। কিন্তু তখন স্কুলের গাড়িটা পাশেই ছিল, কর্তৃপক্ষ তাকে গাড়িটা দেয়নি। কোনও শিক্ষক এগিয়ে আসেননি। এ অবস্থায় প্রথম কলেজ সেকশনের দুজন শিক্ষার্থী এসে ওর ওড়না খুলে পেটে বেঁধে রক্ত থামার ব্যবস্থা করে, তারা নিয়ে যায় পাশের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে নেওয়ার পর তারা গুরুতর আহত বলে ঢাকা মেডিক্যালে পাঠিয়ে দেয়। রিকশায় করে এখান থেকে ওকে তারা নিয়ে যায়। পুলিশ কেস হবে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসেনি। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল বলেছেন, মামলা হবে, ধরা যাবে না।’
রিশার মা বিলাপ করে বলেন, ‘আমার বাচ্চার রক্ত পড়তেছিল, কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালসহ কেউ এগিয়ে আসেননি। শিক্ষার্থীরা কোলে করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে, পেটের ভেতর থেকে নাড়ি বের হয়ে গিয়েছিল।’ এ সময় তিনি স্কুল কম্পাউন্ডে থাকা গাড়ি দেখিয়ে বলেন, ‘ওই যে কতগুলো গাড়ি, কিন্তু আমার বাচ্চাকে কেউ একটা গাড়ি দেননি। দিলে আমার বাচ্চা বাঁচতো, ওরে তাড়াতাড়ি নেওয়া যেত হাসপাতালে।’
স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী ও রিশার শিক্ষক সুমিত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালকে সঙ্গে সঙ্গে জানানো হয়েছে কিন্তু তিনি পুলিশ কেস বলে মন্তব্য করে তার রুম থেকেই বের হননি।’
এদিকে বিক্ষোভে উপস্থিত অভিভাবকরা বলেন, ‘আমরা যখন কাল মানববন্ধ করেছি, তখন শিক্ষকরা আমাদের কাছ থেকে ব্যানার কেড়ে নিয়েছেন। তারা আমাদের নামে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন। একজন শিক্ষিকা আমাদের অশিক্ষিত, মূর্খ বলেছেন। যা মুখে এসেছে তিনি তাই বলেছেন।’
শিক্ষার্থীদের মানবন্ধন নিয়েও স্কুল কর্তৃপক্ষ বিরূপ আচরণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক ফোরামের সদস্য সচিব আঞ্জুমান আরা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিজ বাসার পরে একটি শিশুর নিরাপদ জায়গা হলো তার স্কুল। কিন্তু এই ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল (অধ্যক্ষ) অদক্ষ। তিনি রিশা আহত হওয়ার পর কোনও পদক্ষেপ নেননি। সহযোগিতা করেননি। গাড়িটা পড়ে ছিল স্কুল মাঠে কিন্তু রিশাকে গাড়িটা দেননি তিনি।’
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘অভিভাবকদের এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি যখনই শুনেছি, তখনই ঢাকা মেডিক্যালে গিয়েছি। অভিভাবকরা আমার নামে মিথ্যা কথা বলছেন।’
উল্লেখ্য, গত বুধবার (২৪ আগস্ট) উইলস ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনের ফুটওভার ব্রিজে রিশাকে ছুরিকাঘাত করে বৈশাখী টেইলার্স কাটিং মাস্টার ওবায়দুল খান। গুরুতর আহতাবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর রবিবার (২৮ আগস্ট) রিশা মারা যায়। ঘাতক ওবায়দুলকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন