২০১৪ সালের সংবাদঃ খুলনা রেলওয়ের জমি উদ্ধারে কর্তৃপক্ষ নীরব

খুলনা রেলওয়ে স্টেশন
খুলনা রেলওয়ে স্টেশন
খুলনা রেলওয়ে স্টেশন। ছবিঃ ফলোআপ নিউজ

অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়া খুলনা রেলওয়ের জমি উদ্ধারে কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। শুধু নোটিশ দিয়ে নিজেদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। অপর দিকে দখল হওয়া এসব জমিতে গড়ে উঠেছে দোকান, বসতি, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, মাজার, স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিকদের সহযোগিতায় এবং রেলওয়ের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগসাজশে রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে এসব স্থাপনা গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
খুলনা রেলওয়ে কানুনগোর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা রেলওয়ে স্টেশনসহ খুলনা রেলওয়ের মোট জমির পরিমাণ ৪৬৮ দশমিক ৩৭ একর। এর মধ্যে রেলওয়ের নিজস্ব কাজে (অপারেশনাল) ৩৪০ দশমিক ৮১ একর, বাণিজ্যিক কাজে ১৪ দশমিক ৭৯ একর জমি ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষিকাজে ৪৯ দশমিক ৯৫ একর, মৎস্য চাষে ২৭ দশমিক ১৫ একর ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ২ দশমিক ৫৯ একর জমি ইজারা দেওয়া রয়েছে। এর মধ্যে অবৈধ দখলে রয়েছে ৩৩ দশমিক ০৫ একর জমি। শুধু খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের আওতায় রয়েছে ১৯৫ একর জমি। এসব জমির মধ্যে প্রায় ১২ একর অবৈধ দখলদারেরা ভোগ করছেন।
খুলনা রেলওয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, রেলের জমির উপর মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, স্কুল, বস্তি ও দোকানঘর (মার্কেট) বানিয়ে দখলে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, খুলনা রেলওয়ের সিনিয়র সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (ওয়ার্কস) কার্যালয়ের সামনে প্রায় এক একর জমির উপর গড়ে উঠেছে কয়েকটি ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ঘর। নিক্সন মার্কেটের পাশের মানিক মিয়া শপিং কমপ্লেক্সের আওতাধীন ১৪৫টি দোকানের ১৫টি অবৈধভাবে রেলওয়ের জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে।
রেলওয়ে স্টেশনের পাশে এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিব্লটিএ) কার্যালয়ের অদূরে রেলওয়ের ছয় একর জায়গায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য বস্তি ও দোকান। রেলওয়ের ৫ ও ৬ নম্বর ঘাট এলাকার এরশাদ আলী বিদ্যালয়ের পেছনে প্রায় নয় একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে প্রায় ৮০০ বস্তিঘর। ৬ নম্বর ঘাট এলাকায় রেলওয়ের চার একর জমিতে অবৈধভাবে বালুর ব্যবসা চলছে। নগরের জোড়াগেট এলাকার পেছনে তিন একর জমিতে গড়ে উঠেছে দোকানঘর ও বস্তি।
একাধিক দখলদার জানান, খুলনা রেলওয়ের বিপুল পরিমাণ জমি অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে। তাই তারা স্থানীয় রাজনীতিবিদদের মাধ্যমে এসব স্থানে স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এই রাজনীতিবিদদের সঙ্গে রেলওয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে।
খুলনা নাগরিক ফোরামের চেয়ারপারসন শেখ আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘রেলওয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে রাজনীতিবিদ ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব জমি অবৈধভাবে ভোগদখল করছেন। রেলওয়ের অব্যবহৃত জমি পরিকল্পিতভাবে ব্যবহারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আবেদন করে আসছি। তবে কর্তৃপক্ষ জমি উদ্ধারে নীরব ভূমিকা পালন করছে। এ কারণে বিস্তীর্ণ এলাকায় রেলওয়ের জমি ক্রমেই অবৈধ দখলে চলে যাচ্ছে।’
খুলনা রেলওয়ের জমি অবৈধভাবে দখল হওয়ার কথা স্বীকার করে কানুনগো মো. মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এসব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। পাকশি থেকে খুলনা পর্যন্ত রেলের আয়তন অনেক বেশি। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও নোটিশ দিয়ে উচ্ছেদ চলছে। দ্রুত আমরা খুলনায় ব্যাপক উচ্ছেদ চালাব।’


খবরটি দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশ করে ৪ সেপ্টম্বর ২০১৪ তারিখে