’৭১-এর গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ // পাঞ্জাবি কবি আহমদ সালিম

বক্তব্য রাখছেন পাকিস্তানের তরুণ কবি আনাম জাকারিয়া

“’৭১ এর গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ” –জাহানারা ইমাম স্মারক বক্তৃতায় পাঞ্জাবি কবি আহমদ সালিম

পাকিস্তানের কবি আহমদ সালিম বলেছেন, ১৯৭১-এ গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের উচিৎ বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া। তিনি বলেন, পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ এখন উন্নত এবং অধিকতর সার্বভৌম। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এখনও অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেনি। পাকিস্তানের বর্তমান প্রজন্মের এখন দায়িত্ব হলো, সত্য স্বীকার করার জন্য পাকিস্তান সরকারের বোধোদয় ঘটানো, ক্ষমা চাইতে বলা এবং যারা বাংলাদেশে গণহত্যা সংঘটিত করেছে তাদের বিচার করা।
পাকিস্তানী কবি আহমেদ সেলিম
শহীদজননী জাহানারা ইমাম স্মারক বক্তৃতা ও স্মৃতিপদক প্রদান অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন পাকিস্তানের কবি ও মানবাধিকারকর্মী আহমদ সালিম।
২৬ জুলাই (২০১৭) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়— জাহানারা ইমাম স্মারক বক্তৃতা: পাকিস্তানের মানবতাবাদী কবি আহমদ সেলিম, বালাদেশের গণহত্যা: পাকিস্তানের সচেতন নাগরিকদের নিন্দা।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা বিচারপতি শামসুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ‘ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে’র নির্বাহী পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুর রশীদ, পাকিস্তানের মৌলবাদবিরোধী তরুণ লেখক হারুণ খালিদ ও আনাম জাকারিয়া, শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর সন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সারের সন্তান শমী কায়সার, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর সন্তান ডা. নূজহাত চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

১৯৭১-এ বাংলাদেশে সংগঠিত গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে এ ঘটনায় পাকিস্তানকেই দায়ী করেছেন দেশটির তিন বরেণ্য কবি। একই সঙ্গে গণহত্যার জন্য তারা পাকিস্তানকে বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশের গণহত্যা: পাকিস্তানের সচেতন নাগরিকদের প্রতিবাদ’ শীর্ষক জাহানারা ইমাম স্মারক বক্তব্য উপস্থাপন করেন পাকিস্তানের মানবাধিকার নেতা ও কবি আহমদ সালিম। পরে এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন পাকিস্তানের মৌলবাদবিরোধী লেখক হারুন খালিদ ও আনাম জাকারিয়া। তাদের তিনজনের বক্তব্যেই ছিল এক সুর— গণহত্যায় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের দায় এবং ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান।

অনুষ্ঠানে আহমদ সালিম তার মাতৃভাষা পাঞ্জাবিতে বক্তব্য দেন। আর সেটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন হারুন খালিদ। আহমদ সালিম বলেন, “প্রথমেই আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, আমি পাকিস্তানের মুখপাত্র নই, কিংবা দেশটির সরকার বা সংসদের প্রতিনিধিও নই। আমি একজন পাঞ্জাবি কবি। সেই বিনম্র যোগ্যতায় আমি বাংলাদেশের জনগণের কাছে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের দ্বারা সংগঠিত গণহত্যার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।”

আহমদ সালিম তার বক্তব্যে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি গণহত্যার বিরুদ্ধে সেখানে লেখক, কবি ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রতিবাদের কথা তুলে ধরেন। ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা লেখার কারণে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও বেত্রাঘাতের শিকার হওয়ার কথাও জানান তিনি।

একইসাথে আহমদ সালিম তার বক্তব্যে গণহত্যার জন্য বর্তমান পাকিস্তানের সব নাগরিককে একই দৃষ্টিতে না দেখার আহ্বান জানান। বিশেষ করে পাকিস্তানের নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এই প্রজন্মের এখন দায়িত্ব হলো এগিয়ে আসা এবং বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের বোধোদয় ঘটানো। যারা বাংলাদেশে গণহত্যা সংঘটিত করেছে যেন তাদের বিচার করা হয়, সেই সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের কাছে যেন ক্ষমা চাওয়া হয়, সে জন্য নতুন প্রজন্মকে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।”

পাকিস্তানি কবি হারুন খালিদ বলেন, “যখন বাংলাদেশের গণহত্যার ঘটনাগুলো শুনি তখন আমি আমার কাঁধে এক বিরাট বোঝা অনুভব করি। এই গণহত্যাকে অস্বীকার করার মধ্যে কোনো সমাধান নেই। পাকিস্তানের স্বস্তির জন্যই বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া দরকার।”

বক্তব্য রাখছেন পাকিস্তানের তরুণ কবি আনাম জাকারিয়া
বক্তব্য রাখছেন পাকিস্তান হতে আগত কবি আনাম জাকারিয়া।

পাকিস্তানি কবি আনাম জাকারিয়া বলেন, “গণহত্যায় ভুক্তভোগীরা তাদের বুকে যে যন্ত্রণা বইছেন সেটা আমি পুরোপুরি অনুভব করতে পারব না। কিন্তু সত্যকে জানা এবং একই সঙ্গে তা পাকিস্তানিদের জানানো আমার দায়িত্ব।”

আনাম জাকারিয়া আরো বলেন, “আমি মনে করি, গণহত্যার জন্য পাকিস্তান সরকারের ক্ষমা চাওয়া প্রয়োজন। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের নতুন প্রজন্মের যোগাযোগ, কথাবার্তা শুরু হতে পারে। ক্ষমা চাওয়া ও গণহত্যাকে স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে দুই দেশের নতুন প্রজন্মের নতুন সম্পর্কের সূচনা হতে পারে।”

অভিনয় শিল্পী শমী কায়সার এবং ডা. নুজহাত চৌধুরী তাদের বক্তব্যে ১৯৭১-এ বুদ্ধিজীবী হত্যা তথা সংগঠিত সকল গণহত্যার প্রেক্ষিত, তাদের দুঃখ, ভাবাবেগ এবং প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন। তারা পাকিস্তান থেকে আগত তরুণ দুই কবিকে তাদের দেশের প্রজন্মকে গণহত্যা বিষয়ে পাকিস্তান সরকারকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে বলেন।


সূত্র : অনলাইন এবং ফলোআপনিউজ প্রতিনিধি