রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকে না মন্তব্য করে অধ্যাপক অজয় রায় বলেছেন, বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্ম করে ইসলামকে একদিক থেকে অপমান করা হয়েছে।ধর্ম চর্চা ব্যক্তির নিজস্ব বিষয় বলেও মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের এই সাবেক অধ্যাপক।
“এমনকি গোষ্ঠীরও নয়, আমি ব্যক্তি হিসেবে কোন ধর্ম পালন করব সেটা আমার একেবারে নিজস্ব ব্যাপার।” শুক্রবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে অজয় রায় বলেন, “আজকে বাংলাদেশ নানা ধরনের সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।
একদিকে সংবিধান অনুসারে বাংলাদেশ সেক্যুলার রাষ্ট্র, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। অথচ সংবিধানের তিলকে রাষ্ট্রধর্ম নামে ইসলামকে আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি, রেখে দিয়েছি।
“এর ফলে ইসলামের প্রতি বেশি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়েছে বলে আমি মনে করি না। বরং ইসলামকে একদিক থেকে অপমান করা হয়েছে। কেননা রাষ্ট্র একটি নৈর্ব্যক্তিক অস্তিত্ব, তার কোনো ধর্ম থাকে না।”
বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (বাকবিশিস) নবম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউজিসি অধ্যাপক অজয় রায়।
অজয় রায় সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি রাখব, এরশাদ সাহেব যে অপকর্মটি করেছেন আমাদের সংবিধানে ইসলাম সংযোজন করে, আপনি আমাদের সংবিধানকে রক্ষা করুন, প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান ফিরিয়ে আনুন। এবং সংসদে বিল এনে এরশাদের যে অপকর্মটি তা প্রতিবিধান করুন।”
তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকতে পারে, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাক বা না থাক, এই ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সব ধর্মের সব মতের মানুষের আইন মোতাবেক সম অধিকার থাকবে।
“সম অধিকার, সেক্যুলারিজম, গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের কথা বলব, অন্যদিকে ব্যক্তি-গোষ্ঠী মানুষের অধিকার সংকুচিত করব- এটা হতে পারে না।”
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ যে সংবিধান আছে তার উপর ভিত্তি করে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা দরকার মন্তব্য করে অজয় রায় বলেন, “আমরা ২০১০ সালে যে শিক্ষানীতি করেছি, সেটার কিছুটা বাদ দিলে অনেকটা গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ। এখন সময় সেটাকে বাস্তবায়ন করার।”
বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি।
শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাজেটের ন্যূনতম ৪০ শতাংশ বা ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী জিডিপির ৬ শতাংশ করার দাবি জানান তিনি।
সম্প্রীতি মঞ্চের সভাপতি অজয় রায়ের মতে, বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর চেয়েও ‘ক্ষতিকর’ হয়ে উঠছে মাদ্রাসাভিত্তিক ধর্মীয় গোষ্ঠী হেফাজতে ইসলাম।
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “তাদের (হেফাজত) কথায় পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনা হল। সেখান থেকে ধর্মনিরপেক্ষ লেখা বাদ দিয়ে ইসলামী হয়ে গেল। তারা হিন্দু ধর্মবালম্বী লেখকের লেখাতো বাদ দিতে বলল; কায়কোবাদের মতো লেখকের লেখা বাদ দেওয়ার মতো ধৃষ্টতা, আবদুল ওয়াদুদের মতো লেখকের লেখা বাদ দেওয়ার ধৃষ্টতা তারা কোথায় পায়?”
কওমী মাদ্রাসাকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ এবং আলিয়া মাদরাসায় সাধারণ শিক্ষাক্রমের পাঠ ও আচরণ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান অজয় রায়।
বাকবিশিস সভাপতি অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন, বিশ্ব শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানম, সর্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বালা বিজয় কুমার, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক বক্তব্য দেন।