ফিরিয়ে নাও মা
বসে আছি আজ কত দূরে ভালবাসার মাটি ছেড়ে
মনে পড়ে, মনে পড়ে তোমায় আমার জন্মভূমিরে।
ভালবাসি তোরে কত বেশি বলা হয়নিতো আজ অবধি
হৃদয়তো ঠিকই কাঁদে তোর লাগিরে।
মন কাঁদে, আজ মন কাঁদে তোকে একটি বার ছুঁয়ে যেতে
মন পোড়ে, আজ মন পোড়ে মনের কথা সব খুলে বলতে।
ভালবাসি, ভালবাসি ভালবাসি তোরে
ফিরিয়ে নাও এই আমায় তোমার বাহু ডোরে।
ভিনদেশে আজ আমি পরভুক তোমার স্মৃতি দেয় কত যে সুখ
কেটে যায় অলস দুপুর ভাবনায় প্রিয় কতশত মুখ।
মানস পটে ভেসে উঠে লাল সবুজের হাতছানি
জেনে নিও এই বুকে তোমার জায়গা কতখানি।
ভুলি নাই মা তোকে আমি যত দূরে যাই না কেন
এত স্মৃতি, এত সূধা বলনা আমি কোথায় পাব।
অলিগলি থেকে রাজপথ অথবা কোন মেঠোপথ
হেঁটে যাই ক্লান্তিহীন তোমার ঠিকানায়।
সবই আজ কল্পনায় তবু তা যেন স্বপ্ন নয়
আজ নয় তো কালই হবে তোমার কোলে স্থান।
ফিরছি মাগো, ফিরছি আমি তোমার বুকে আবার
হারাবো না আর কখনও বাসবো ভাল জনমভর।
ভালবাসি, ভালবাসি ভালবাসি তোরে
ফিরিয়ে নাও এই আমায় তোমার বাহুডোরে।
তোমার খোঁজে
তোমায় খুঁজি ভোরের আলোয় দূর গগণে
পূর্ব কোনে সূর্য যেথায় হাঁসে।
তোমায় খুঁজি শীতের ভোরে কুয়াশা ঢাকা শহরে
ছেঁড়া চাদরে মোড়া বৃদ্ধার হাসিতে।
তোমায় খুঁজি খেজুর রসের মাতাল গন্ধে
খোকাখুকির হাতে ভাপা পিঠার উন্মাদনায়।
তোমায় খুঁজি গ্রীষ্মের খরতাপে উত্তপ্ত রাজপথে
কৃষকের ক্ষেতে লাঙল জোয়ালে।
তোমায় খুঁজি আমের বনে বিমোহিত ঘ্রাণে
দূরন্ত কিশোরের রিং এর পেছনে।
তোমায় খুঁজি সুপ্রভাতে উত্তলিত পতাকায়
চাঁদের আলোয় উঠোন জুড়ে রূপকথার গল্পে।
তোমায় খুঁজি জোনাকির আলোয় অমাবস্যার রাতে
নিশাচর হাস্নাহেনার কোমল সুবাসে।
তোমায় খুঁজি স্বপ্নরাজ্যে তেপান্তরের দেশে
পরীর ডানায় ভর করে মুক্তি সেনার বেশে।
তোমার খোঁজে স্বাধীনতা, তোমায় খুঁজি বারংবার
তুমি মোদের সর্পমণি, অদম্য অহংকার।
অহন সিদ্দিকী
খায়রুল আলম সিদ্দিকী (অহন) বন্ধুমহলে এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে ‘অহন সিদ্দিকী’ নামেই পরিচিত। জন্ম ঢাকার অদূরে শরিয়তপুর জেলার সুবচনী হাট এলাকায়। দুরন্ত শৈশব গ্রামীণ মেঠপথে কাটিয়ে কৈশোরেই পদার্পণ ব্যস্ততম ঢাকা শহরে। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি ভিন্ন বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলাইনাতে ‘হেলথ সার্ভিসেস পলিসি এন্ড ম্যানেজমেন্ট’ এ পিএইচডি তে অধ্যায়নরত রয়েছেন।
কবি অহন সিদ্দিকীর লেখালেখিতে হাতে খড়ি কলেজ জীবনে হলেও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল লেখায় নতুন অনুপ্রেরণা যোগ করে। নিজ বিভাগ এবং বিভিন্ন সংগঠনের সাময়িকীতে তার লেখা নিয়মিত প্রকাশ পায়। কবি মূলত নিজেকে গীতিকবি হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। নিজের গানের দলের জন্য গান লেখা এবং সুর করা তাঁর মূল প্রচেষ্টা। তবে কবিতার পাশাপাশি ফেসবুকে এবং ব্লগে দীর্ঘদিন যাবত “অশনি সংকেত” নামে সমাজের নানাবিধ অসঙ্গতি নিয়ে নিয়মিত বিভিন্ন প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। বর্তমানে ব্যক্তিগত ব্যস্ততা এবং সামাজিক কিছু জটিলতার জন্য ছদ্দনাম ব্যবহার করে লেখালেখি বন্ধ রেখেছেন।
এরই মধ্যে কবির লেখা কিছু কবিতা এবং প্রবন্ধ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায়ও স্থান করে নেয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে পরিচিত মুখ। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি মানবকল্যাণমূখী বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত থেকে সামাজিক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধনে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। অহন সিদ্দিকীর সাহিত্য চর্চার মূলমন্ত্র হল, সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাধ্যমে সামাজিক বিপ্লব আনায়ন।