ব্রিজের উপর মরে পড়ে আছে একটা কুকুর।
বিশ্রী গন্ধে যখন গা গুলায়,
আমি টের পাই আমার ভেতরটায়ও ওরকম দুর্গন্ধ।
কত ইচ্ছে মরে যায় রোজ; স্বপ্ন মরে যায় মানুষদের।
নদীতে একটা মাছ ধরা নৌকা দেখে মনে পড়ে যায়–
সিন্দাবাদ হতে চেয়েছিলাম শৈশবে।
পাশ কাটিয়ে সাঁইসাঁই করে ছুটে যাওয়া
মালবাহী ট্রাকের উপর ঘুমন্ত কিশোরের মুখটা বড্ড চেনা!
আমার ঘুমন্ত মুখখানা দেখতে কেমন? (বড্ড জানতে ইচ্ছে করে।)
মৃত কুকুরটার মুখে অতৃপ্তির ছাপ; (যেন “মানুষ” বলে গালি দিয়েছে কেউ!)
এখনও মাঝেমাঝে শালতলা চলে যাই,
শৈশবের কতগুলো টুকরো পড়ে আছে ওখানে।
কমল পাগলার জন্য আমার মন কাঁদে কেন!
সে কি বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে?
একদিন তাকে মন খুলে কাঁদতে দেখে হিংসা হয়েছিল।
সেদিন চেয়েছিলাম তার অভিমানগুলো মরে যাক।
(যেমন করে ওর ইচ্ছেগুলো মরে গিয়েছিলো।)
আমাদের ইচ্ছেরাও লাশ হয়ে যায়, পড়ে থাক।
যেসব ইচ্ছেরা দুর্ঘটনায় মরে যায়, সামাজিক চাকার তলে;
ওগুলোও এভাবে পচে যাক।
সালমান শাহ’র সিনেমা দেখে ফাঁসির আসামি হতে চাইতাম ছেলেবেলায়।
বড় হয়েছি। খুন করেছি কত স্বপ্নকে!
সামাজিক ছুরি দিয়ে রগ কেটে দিয়েছি কত ইচ্ছের!
কোনো মামলা হয়নি। বিচার হয়নি।
তবুও দণ্ডপ্রাপ্ত আমি, সারাজীবন বেঁচে থাকার রায় পেয়েছি।
মনের মধ্যে হরেক রকম পচা গন্ধ নিয়ে ঘুরে বেড়াই।
আমি বোধ হয় অবেলায় বুড়িয়ে গেলাম!
মানসিক সমস্ত বার্ধক্য ব্রিজ থেকে নদীতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে,
আসছে ফাল্গুনে ঘুড়ির লেজে বেঁধে দেবো জীবনটাকে।
উড়তে উড়তে চলে যাবো বহুদূর।
দৃষ্টিসীমা ছাড়িয়ে উড়ে হারিয়ে যাবো।
ভুলে যাবো মৃত কুকুরটার মুখ, দুর্গন্ধ।
ভুলে যাবো—সামাজিক মুখোশে বন্দী ছিলাম জীবদ্দশায়।
ভুলে যাবো মালবাহী ট্রাকের হর্ন।
যেমন করে ভুলে গেছি বুক ভরে দম নিতে।
( ভুলে যাবো; অনুপম শেখর; ২৩/০৮/২০১৭ ইং; বাগেরহাট)