শান্তি নগরের ট্রেন
কুয়াশায় ভাসা ধূসর চাঁদে
ঝুলে আছে কু-কথাদের কুন্দল;
হিমাঙ্কের খাঁচায় বন্দি হয়ে আছে
দূরাগত শব্দের তাল লয়।
মেয়েটির নীল আঁচলে চিমটি কেঁটে যায়
শান্তিনগরের ট্রেনের হুইসেল!
রবীঠাকুরের গানের পাশ ঘেঁসে মেয়েটি হাঁটে
পাল ছেঁড়া হাওয়া এসে
সানাই বাজিয়ে যায় ঝরাপাতার শরীরে
মৌনতা বেড়ে যায় প্রকৃতির।
রাতের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকে স্মৃতির শহর
দহন পোড়া হিজলপাতার গান–
আর এক বোকা নদীর কান্না।
উড়াল
ভেতর বাহির ধূসর দিনের মেঘ
প্রচ্ছদ ভেঙে উড়াল দিচ্ছে
সান্ধ্য প্রার্থনার সুর !
লেবুগাছে লুটিয়ে পড়েছে জল মগ্নতার বেহাগ,
অতঃপর সন্ধ্যের হাত ধরে তুমুল বৃষ্টির খেলা!
তোলপাড় জানালায় বৃষ্টির ছাট
আমাকে হারিয়ে দিল আকাশের মেঘছায়া
জলের ভাসান।
ঘুমের অক্ষরে আজ নেই ইন্দ্রজাল
হিজাব খোলা স্মৃতিগুলো মুখ তুলেছে;
সর্পগন্ধা ব্যথা বাঁশিতে সুর তুলেছে
ভগ্ন রিদম নিয়ে উড়াল দিলো সুখপাখি।
সূতো ছেঁড়া ঘুড়ি
নৈঃশব্দের সিঁড়ি বেয়ে উড়তে দেখি
সূতো ছেঁড়া ঘূড়ি,
শূন্যতায় সাঁতার কাটে কিশোরি পাতিহাঁস;
কাছেই কোথাও পাঠাগার খুলে বসেছে
এক দুপুরের নির্জনতা।
সাতের নামতায় আটকে আছে কৈশোর
উড়ছে বর্ণমালার হাহাকার আর কল্পজাল
কুঁড়ির চোখে ফুল হয়ে ফুঁটে ওঠার স্বপ্নের
কোনো বিকল্প হয় না।
সময় কী যেন ব্যথায় আকাশের শূন্যে ছড়িয়ে দিয়ে
বয়সী মনের আবেগ;
জিরোতে বসেছে গোল্লাছুট আর কানামাছির মাঠে
সবুজের অদৃশ্য টান ডেকে ওঠে-
একঝাঁক প্রজাপতির পিছু ছুটে যাও!
এই তো– পদ্ম দীঘির কিনারে সাঁতারে ভাসছে স্মৃতি
আর ভ্যাঁ…ভ্যাঁ কান্নার ধ্বণীরা।
মাছরাঙা আর মাছের ডুবসাঁতারে
কী — তুমূল বিতর্ক !
একদিন নদী হবো
তোমাদের সব বিস্ময় গেঁথে নিয়ে
একদিন নদী হব!
সমুদ্রের কাছে চেয়ে নেব অস্তরাগের সুর
মেঘেদের ব্যথার গল্প শুনতে শুনতে
রটিয়ে দেব প্লাবনের বার্তা।
উদ্বাস্তু চাঁদটাকে বুকে ধরে মেপে নেব
দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-বেধ।
মিশে যাব বেরসিক হাওয়ার উচ্চতায়।
রোদের গা থেকে খুলে নেব স্যুট-ব্যুট
ভিজিয়ে দেব শকুনি গাঁয়ের প্রতিভার পথ;
ভাসিয়ে দেব নাটকীয় চর ।
কাঁকড়ার পায়ে পায়ে বেঁধে দেব
প্রশান্তির আলেখ্য;
মুছে দেব অসুস্থ দিনের যত মন্ত্র আর পুঁথিপাঠ ।