অর্থনীতি ও পরিবেশের আন্তঃসম্পর্ক: নিও-লিবারেল কাঠামোর সীমাবদ্ধতা ও টেকসই উন্নয়নে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

Herman Daly

প্রচলিত নিওলিবারেল অর্থনৈতিক কাঠামোতে অর্থনীতিকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন হিসেবে দেখা হয়। এ কাঠামোর মূল দর্শন হলো— অব্যাহত উৎপাদন, ভোগ বৃদ্ধি এবং মুক্তবাজার অর্থনীতির মাধ্যমে সামগ্রিক উন্নয়ন। কিন্তু বাস্তবে অর্থনীতি কোনো স্বতন্ত্র ব্যবস্থা নয়, বরং বর্তমান অর্থনীতি চিত্র-২-এর ন্যায় প্রকৃতির একটি উপ-ব্যবস্থা, যা পদার্থ (matter) ও শক্তি (energy)-র ওপর নির্ভর করে এবং বাস্তুতন্ত্র থেকে নিরন্তর ইনপুট গ্রহণ করে (Daly, 1996)।

উপরেঃ চিত্র-১, নিচেঃ চিত্র-২।

উপরের চিত্রে দেখা যায়, সূর্যের শক্তি পরিবেশে প্রবেশ করে এবং সেই শক্তি বাস্তুতন্ত্রকে চালিত করে। বাস্তুতন্ত্র অর্থনীতিকে পদার্থ ও শক্তি সরবরাহ করে, আর অর্থনীতি সেগুলো ব্যবহার করে উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এই উৎপাদনের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সেবা (economic services) লাভ করে। একই সঙ্গে বাস্তুতন্ত্রও সরাসরি নানা প্রাকৃতিক সেবা (ecosystem services) প্রদান করে। যেমন, বিশুদ্ধ বায়ু, নিরাপদ পানি, মাটির উর্বরতা, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ এবং জীববৈচিত্র্যের সমর্থন (Costanza et al., 1997; MEA, 2005)।মানবকল্যাণ বা welfare মূলত এই দুটি প্রবাহের সম্মিলিত অবদানের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপজাত হিসেবে উৎপন্ন তাপ ও বর্জ্য আবার পরিবেশে ফিরে আসে। যখন এই প্রবাহ পরিবেশের প্রাকৃতিক পুনর্গঠন ক্ষমতা (assimilative capacity) অতিক্রম করে যায়, তখন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়, দূষণ বৃদ্ধি পায় এবং জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় (Rockström et al., 2009; IPCC, 2022)।

১৯৬০-এর দশক থেকে বিশ্ব অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি-কেন্দ্রিক নীতিমালা ও ব্যবসাবান্ধব কাঠামোর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে (Harvey, 2005)। শিল্পোন্নয়ন, নগরায়ণ এবং ভোগবাদের বিস্তার অর্থনীতিকে একটি ‘বর্ধিত ব্যয়ের ধারণা’ (consumerist growth model) দ্বারা প্রভাবিত করে। এর ফলে শক্তি ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিজেদের অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য একমুখী নীতির অনুসরণ করতে থাকে এবং ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি টিকিয়ে রাখতে ক্রমশই বেশি হারে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও ব্যবহার শুরু করে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার ফলে পরিবেশ ধীরে ধীরে তার স্বাভাবিক পুনর্গঠন ক্ষমতা (assimilative capacity) হারাতে থাকে।প্রবৃদ্ধি-নির্ভর এই অর্থনৈতিক কাঠামোর কয়েকটি বড় প্রভাব হলো:

১) অতিরিক্ত সম্পদ আহরণ ও দূষণের ফলে পরিবেশের স্বাভাবিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে;

২) বহুকোষী জীবের বিবর্তন ধীরগতির হওয়ায় পরিবেশগত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছে না। ফলে দ্রুততর হারে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি (Biodiversity loss) ঘটছে (MEA, 2005;

৩) শিল্প ও জ্বালানি খাতে অতিরিক্ত নির্ভরতার কারণে কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন বহুগুণ বেড়ে গেছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে (IPCC, 2022);

৪) বিদ্যমান অর্থনৈতিক কাঠামোয় শক্তি ও সম্পদের প্রবাহ পরিবেশ থেকে অর্থনীতিতে আসে এবং পুনরায় পরিবেশে ফিরে যায়। কিন্তু পর্যাপ্ত পুনঃচক্রায়ন ছাড়া এই প্রক্রিয়া ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে;

৫) ক্রম বর্ধমান অর্থনীতির কারণে মানুষ ক্রমেই পরিবেশের সরাসরি সেবার চেয়ে অর্থনীতির বাজারভিত্তিক পণ্য ও পরিষেবার ওপর অধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। যেমন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, শিশুর খেলনা, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, গাড়ি, বিনোদন কিংবা বিশুদ্ধ পানি।

এখানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান আকার। সময়ের সাথে সাথে অর্থনীতি যত বিস্তৃত হচ্ছে, ততই এটি প্রকৃতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। যদি এই প্রবৃদ্ধি অনিয়ন্ত্রিত থাকে, তবে একসময় অর্থনীতি নামক উপসেট (sub-set) সমগ্র বাস্তুতন্ত্রের সার্বিক সেটকে (universal set) গ্রাস করবে। অর্থাৎ, অর্থনীতির সীমাহীন সম্প্রসারণ প্রকৃতির ধারণক্ষমতাকে অতিক্রম করে সেটিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে (Daly, 1996; Jackson, 2009)।

ফলে স্পষ্ট যে, অর্থনীতিকে কেবল প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন হিসেবে দেখা যাবে না। বরং এটিকে বাস্তুতন্ত্রের ভেতরে অবস্থানকারী এবং এর ওপর নির্ভরশীল একটি উপব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। অন্যথায়, অতিরিক্ত সম্পদ আহরণ ও দূষণ মানবকল্যাণের মূল ভিত্তি— প্রকৃতিকেই ধ্বংস করবে। আশঙ্কার বিষয় হলো, নিওলিবারেল প্রবৃদ্ধি-কেন্দ্রিক অর্থনীতি পরিবেশের মৌলিক সীমা (planetary boundaries) অতিক্রম করছে, যাজলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়, দূষণ বৃদ্ধি ও বাস্তুসংস্থানের ভাঙন ডেকে আনছে (Rockström et al., 2009)।

অর্থাৎ নিওলিবারেল অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি ও ভোগকে প্রাধান্য দিলেও এর পরিবেশগত মূল্য অত্যন্ত গুরুতর। জীবমণ্ডলের পুনর্গঠনক্ষমতা সীমিত হওয়ায় আমাদের এখন অর্থনৈতিক কাঠামো পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং এমন নীতি গ্রহণ করতে হবে. যা প্রকৃতি ও অর্থনীতির মধ্যে একটি সুষম সম্পর্ক বজায় রাখে। তাই প্রচলিত কাঠামোর বাইরে গিয়ে আমাদের নতুন ধারণাগত অর্থনৈতিক সরঞ্জামের প্রয়োজন। যেমন, Ecological Economics, Degrowth Approach, Circular Economy, এবং Green Technology, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নকে পরিবেশগত সীমার ভেতরে রেখে মানব কল্যাণ নিশ্চিত করবে।এটাই হবে টেকসই উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদী মানবকল্যাণ নিশ্চিত করার একমাত্র পথ।

Herman Daly

বিখ্যাত পরিবেশ অর্থনীতিবিদ Herman Daly তার গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ Ecological Economics: Principles and Applications-এ অর্থনীতির সাথে প্রকৃতির সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে “Empty World” ধারণার কথা উল্লেখ করেছেন। Daly (2000)-এর মতে, এই বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগ পর্যন্ত প্রাধান্য বিস্তার করেছিলো। এখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল ভিত্তি ছিলো সীমাহীন প্রবৃদ্ধি। অর্থাৎ, প্রকৃতিকে কেবলমাত্র কাঁচামালের এক ভাণ্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হতো, যেখান থেকে মানুষ সম্পদ সংগ্রহ করে তা ব্যবহার করে শিল্প ও অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির একটি মৌলিক সীমাবদ্ধতা হলো— এটি প্রকৃতির অবদানকে আংশিকভাবে ব্যাখ্যা করে এবং প্রকৃতির মৌলিক সেবাগুলোকে অবমূল্যায়ন করে।

বাস্তবে অর্থনীতি কোনো স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যবস্থা নয়, বরং প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল একটি উপ-ব্যবস্থা। মানুষ শুধু অর্থনীতির উৎপাদিত পণ্য ও সেবা ভোগ করে না, বরং প্রকৃতির কাছ থেকেও অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ সেবা বিনামূল্যে পেয়ে থাকে। যেমন, বিশুদ্ধ বায়ু ও পানি, উর্বর মাটি ও প্রাকৃতিক পুষ্টি চক্র, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ ও বন্যা প্রতিরোধ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নান্দনিক অভিজ্ঞতা। এসব সেবা অর্থনীতির মতো বাজারে ক্রয়-বিক্রয়যোগ্য নয়। এগুলো প্রকৃতির পক্ষ থেকে প্রদত্ত Public Goods বা জনসম্পদ, যা মানবকল্যাণের জন্য অপরিহার্য। পরিবেশ অর্থনীতিবিদ Costanza et al. (1997) তার গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, প্রকৃতির এসব বাস্তুতান্ত্রিক সেবার অর্থনৈতিক মূল্য অপরিসীম, তবে প্রচলিত অর্থনৈতিক কাঠামোতে এগুলোকে প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়।

অর্থনীতিবিদ Herman Daly (2000) তার ‘Empty World’ ডায়াগ্রামে (চিত্র-১) অর্থনীতি ও পরিবেশের পারস্পরিক সম্পর্ককে বিশ্লেষণ করেছেন। এই ডায়াগ্রামে দেখানো হয়েছে— পৃথিবীর সমগ্র অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল, এবং শক্তি ও পদার্থের প্রবাহের মাধ্যমে একে অপরের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত। চিত্রে ‘ECOSYSTEM’ অংশটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, অর্থনীতি প্রকৃতির বাইরে কোনো স্বতন্ত্র যন্ত্র নয়, বরং এটি বাস্তুতন্ত্রের একটি অন্তর্ভুক্ত অংশ। অর্থাৎ, অর্থনীতি জীবমণ্ডলের ভেতরে বিদ্যমান এবং এর প্রবাহিত শক্তি ও পদার্থের ওপর নির্ভরশীল। প্রথমত, সূর্যের শক্তিপরিবেশে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে চালিত করে। সূর্য থেকে প্রাপ্ত শক্তি ছাড়া পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্বই সম্ভব নয়।

দ্বিতীয়ত, পরিবেশ অর্থনীতিকে কাঁচামাল ও শক্তি সরবরাহ করে। যেমন, খনিজ, পানি, বনজ সম্পদ ও জীবাশ্ম জ্বালানি। এগুলোর ওপর ভিত্তি করেই উৎপাদন ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

তৃতীয়ত, এই সম্পদ ব্যবহার করে অর্থনীতি কর্মসংস্থান, পণ্য ও সেবা তৈরি করে, যা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কল্যাণ সাধনে ভূমিকা রাখে। এর মাধ্যমে একটি প্রবৃদ্ধির চক্র সৃষ্টি হয়, যা মানুষকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদান করে।

চতুর্থত, ইকোসিস্টেম পৃথিবীর প্রাকৃতিক সেবাদানকারী হিসেবে কাজ করে। এটি বায়ু পরিশুদ্ধ করে, পানি বিশুদ্ধ রাখে, মাটির উর্বরতা বজায় রাখে এবং জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে। এর ফলে শুধু মানুষ নয়, প্রাণী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও একটি বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিত হয়।

পঞ্চমত, মানবকল্যাণ ও সামাজিক উন্নয়নে অর্থনীতি ও পরিবেশ উভয়ই অবদান রাখে, তবে তারা ভিন্ন উপায়ে কাজ করে। অর্থনীতি সরাসরি পণ্য ও সেবা প্রদান করে, আর বাস্তুতন্ত্র প্রদান করে মৌলিক জীবনধারণের শর্ত। এ কারণে তাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ ও আন্তঃনির্ভরশীল।

ষষ্ঠত, বাস্তুতন্ত্র প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পদার্থ ও শক্তি পুনঃচক্রায়ন করে, যা সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করে। তবে অতিরিক্ত সম্পদ আহরণ বা দূষণ এই ভারসাম্যকে ভেঙে দিতে পারে। এতে মাটির উর্বরতা, পানি ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা অর্থনীতি ও মানবজীবনের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর।

সপ্তমত, শক্তি প্রবাহ প্রক্রিয়ায়কিছু শক্তি তাপ আকারে হারিয়ে যায়, যা স্বাভাবিকভাবে বাস্তুতন্ত্রে মুক্তি পায়।অষ্টমত, অর্থনীতি বর্জ্য পদার্থ ও তাপ পরিবেশে ফেরত পাঠায়, কিন্তু যখন এই নির্গমন প্রাকৃতিক পুনর্জনন ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে তখন পরিবেশের পুনর্গঠনক্ষমতা (assimilative capacity) দুর্বল হয়ে পড়ে।

সূর্যের শক্তি প্রকৃতিকে চালিত করে, প্রকৃতি অর্থনীতিকে কাঁচামাল ও জ্বালানি সরবরাহ করে, আর অর্থনীতি সেই সম্পদকে রূপান্তরিত করে কর্মসংস্থান, পণ্য ও সেবায়। আবার অর্থনৈতিক কার্যক্রম থেকে সৃষ্ট বর্জ্য ও অপচয় বাস্তুতন্ত্রে ফিরে যায়। যদিও বাস্তুতন্ত্র প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুনঃচক্রায়ন করতে সক্ষম তবে, অতিরিক্ত দূষণ বা সম্পদ আহরণ এর পুনর্জননক্ষমতাকে ব্যাহত করে। এর ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস, পানির সংকট এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি দেখা দেয় (Rockström et al., 2009)।

‘Empty World’ চিত্রটির বিশ্লেষণ ও টেকসই উন্নয়নের বিবেচনায় আমাদেরকে, ১) অর্থনীতি ও বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে সুষম সম্পর্ক বজায় রেখে ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপন ও সমাজের স্থায়িত্ব সুনিশ্চিত করতে হবে, ২) টেকসই উন্নয়নের কৌশল যেমন, সবুজ প্রযুক্তি (Green Technology), বৃত্তাকার অর্থনীতি (Circular Economy) এবংসংরক্ষণমূলক উদ্যোগ (Conservation Efforts) প্রাকৃতিক সম্পদের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার নিশ্চিত করে বাস্তুতন্ত্রকেঅবনতি থেকে রক্ষা করতে হবে, ৩) নীতি নির্ধারক ও ব্যবসায়ীদের জন্য এটি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, প্রাকৃতিক পুঁজির অতিরিক্ত শোষণ বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংস ঘটাতে পারে, যা শেষপর্যন্ত অর্থনীতিকেও অস্থিতিশীল করে দিতে পারে।

সার্বিকভাবে, Daly-এর (2000) এই মডেল আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, অর্থনীতি কোনো স্বাধীন ইঞ্জিন নয়, বরং প্রকৃতির ভেতরে নিহিত এক উপ-ব্যবস্থা। তাই টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থনীতি ও পরিবেশের মধ্যে একটি সুষম সম্পর্ক বজায় রাখা অপরিহার্য।

অতএব, ‘Empty World’ ধারণা সীমাহীন প্রবৃদ্ধিভিত্তিক অর্থনৈতিক চিন্তাধারায় প্রকৃতিকে কেবল সম্পদ আহরণের ভাণ্ডার হিসেবে দেখলেও, বাস্তবতা হলো প্রকৃতি মানবজীবন ও কল্যাণের মূলভিত্তি গড়ে তোলে। তাই অর্থনীতি ও পরিবেশকে দ্বৈত কাঠামো হিসেবে না দেখে একটি সমন্বিত ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা জরুরি।সুতরাং, দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব এবং পরিবেশ রক্ষা দু’ই অর্জন করতে সমন্বিত নীতি গ্রহণ অপরিহার্য। কেননা, অর্থনীতি মানুষের কর্মসংস্থান, আয়, পণ্য ও সেবা সরবরাহের মাধ্যমে জীবনের মৌলিক ও সামাজিক চাহিদা পূরণ করে। অন্যদিকে, বাস্তুতন্ত্র জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য সেবা প্রদান করে। যেমন, বিশুদ্ধ বায়ু, নিরাপদ পানি, উর্বর মাটি, জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ। একটি সুস্থ বাস্তুতন্ত্র ছাড়া অর্থনীতি সচল হতে পারে না, আর স্থিতিশীল অর্থনীতি ছাড়া মানুষ প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার ও সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয় না। তাই এ দুটি ক্ষেত্র একসাথে মানবসমাজের সমৃদ্ধি, সামাজিক স্থিতি এবং দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি তৈরি করা জরুরী।


লেখকঃ

মোঃ ওসমান গনি
জনতা ব্যাংক পিএলসি. তে কর্মরত
এম.এস., ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ছবিঃ লেখক।