কর ফাঁকি এবং কর কর্মকর্তাদের ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে সাংবাদিকতা করতে হলে

Tax invasion

বেশ কিছুক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের গোপনিয়তার আইনি সুরক্ষা দেওয়া আছে, পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা কর কর্মকর্তাদের সাথে যোগশাযোসে কর ফাঁকি দিতে চায়। ফলে এক্ষেত্রে তথ্য অনুসন্ধান বেশ জটিল একটি প্রক্রিয়া।

Tax invasion


✅ কর ফাঁকি নিয়ে সাংবাদিকতা কীভাবে করবেন (Legal & Ethical)

১️⃣ প্রথমে আইন বুঝুন

  • VAT Act
  • Income Tax Act
  • Customs Act
    এই আইনগুলো না বুঝলে সাংবাদিকতা করতে পারবেন না, কারণ কোথায় ফাঁকি হচ্ছে— এটা বোঝাই মূল কাজ।

২️⃣ পাবলিক ডেটা সংগ্রহ করুন

নিচের সব তথ্য বাংলাদেশে্র আইনে পাবলিক যাচাই করতে পারেঃ

  • NBR-এর নোটিশ
  • কোর্টের মামলা
  • ট্যাক্স রিটার্ন অনিয়ম (যেখানে তথ্য প্রকাশিত)
  • সরকারি অডিট রিপোর্ট
  • PAC রিপোর্ট
  • ACC চার্জশিট/তদন্ত তথ্য
  • ব্যবসার লাইসেন্স, TIN, BIN যাচাই

এসব ব্যবহার করা পূর্ণ বৈধ


৩️⃣ ভ্যাট/ট্যাক্স রসিদ সংগ্রহ (Field Investigation)

আপনি রেস্তোরাঁ, দোকান, শোরুমসহ যেসব ব্যবসায় VAT/BIN দেখানো বাধ্যতামূলক— সেখানে গিয়ে

  • তারা VAT রসিদ দেয় কিনা
  • POS মেশিন ব্যবহার করে কিনা
  • BIN নম্বর মিল আছে কিনা
    এসব পরীক্ষা করে রিপোর্ট করতে পারেন।

এটা কমন ইনভেস্টিগেটিভ টেকনিক


৪️⃣ হুইসেলব্লোয়ার সোর্স তৈরি করুন

কর ফাঁকির তথ্য বেশিরভাগ সময় আসে:

  • হিসাবরক্ষক
  • প্রাক্তন কর্মচারী
  • প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসায়ী
  • অভ্যন্তরীণ কাগজপত্র ফাঁসকারী

এদের পরিচয় গোপন রাখা সাংবাদিকতার নৈতিক নিয়ম।


৫️⃣ ডকুমেন্ট যাচাই করুন

যে ধরনের প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারবেনঃ

  • ভ্যাট রসিদ না দেওয়ার তথ্য
  • ট্যাক্স ফাইলিং এর অসঙ্গতি
  • ইনভয়েস-স্টক মিল না থাকা
  • ডিলার/সাপ্লায়ারদের সঙ্গে মিলিয়ে তথ্য বের করা

৬️⃣ বিশেষজ্ঞ মতামত নিন

  • কর আইনজীবী
  • চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট
  • সাবেক NBR কর্মকর্তা
    তারা তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে সাহায্য করে।

৭️⃣ সাংবাদিকতার নিয়ম মেনে সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করুন

  • তথ্য ১০০% যাচাই
  • উভয় পক্ষের বক্তব্য
  • ব্যক্তিগত আক্রমণ না করা
  • আইনি নোটিশ এড়াতে ডকুমেন্টেশন রাখা

❗ কী করা যাবে না (আইন লঙ্ঘন)

  • কোনোভাবেই কাউকে কর ফাঁকি দিতে সাহায্য করা যাবে না
  • নকল কাগজপত্র তৈরি
  • হ্যাকিং/ডাটা চুরি
  • ঘুষ দিয়ে তথ্য নেওয়া
    এসব অপরাধ।

স্টক-ইনভয়েসে অমিল বলতে কী বুঝায়?

স্টক–ইনভয়েসে মিল না থাকা মানে হলো
যে পরিমাণ পণ্য দোকান বা প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকার কথা (কাগজপত্র অনুযায়ী), বাস্তবে সেই পরিমাণ নেই — অথবা উল্টোভাবে, দোকানে যত পণ্য আছে, ইনভয়েসে তার হিসাব নেই।

এটা কর ফাঁকি বা হিসাব গরমিলের সবচেয়ে সাধারণ উপায়।

স্টক–ইনভয়েস না মিললে কী দেখা যায়?

১️⃣ ইনভয়েসে কম দেখানো, কিন্তু দোকানে পণ্য বেশি

ব্যবসায়ী ১০০ পিস পণ্য কিনেছে,
কিন্তু ইনভয়েস দেখিয়েছে মাত্র ৬০ পিস।

উদ্দেশ্যঃ

প্রকৃত কেনাবেচা লুকিয়ে রাখা

VAT/Tax কম দেখানো

লাভ বেশি দেখানো

২️⃣ স্টক আছে, কিন্তু কোনো ইনভয়েস নেই

দোকানে ৫০ পিস পণ্য আছে,
কিন্তু কাজের ইনভয়েস নেই।

এটা সাধারণত ঘটে যখনঃ

স্মাগলড পণ্য

নকল ইনভয়েস

এবং ভ্যাট ফাঁকির ঘটনা থাকে।

৩️⃣ ইনভয়েসে বেশি, কিন্তু স্টকে কম

ইনভয়েসে লেখা ২০০ পিস আছে,
কিন্তু দোকানে পাওয়া গেল ১৫০ পিস।

পরিস্থিতিঃ

চুরি

হিসাব তছরুপ

রিফান্ড/রিটার্ন হিসাব না রাখা

ভুয়া ইনভয়েস দেখিয়ে ট্যাক্স কমানো

৪️⃣ বিক্রি হয়েছে কিন্তু ইনভয়েস তৈরি করা হয়নি

POS স্লিপ বা VAT রসিদ না দিয়ে নগদ বিক্রি→ ইনভয়েস তৈরি হয়নি।

ফলেঃ

VAT জমা হয় না

আয় লুকানো হয়

স্টক দ্রুত কমে— কিন্তু রেকর্ডে একই থাকে।

সহজ ভাষায়ঃ

ইনভয়েস = কাগজে হিসাব
স্টক = দোকানে বাস্তব পণ্য

দুটো যেখানে মিলবে সেখানে সব ঠিক।
যেখানে মিলবে না, সেখানেই গরমিল, প্রতারণা বা কর ফাঁকির সম্ভাবনা।

সোনার দোকানে স্টক–ইনভয়েস গরমিল কেমন হয়, কেন হয়, কীভাবে ধরা যায়—এসব আমি খুব পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করছি। এটা সাংবাদিকতা বা গবেষণার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।


সোনার দোকানে স্টক–ইনভয়েস না মিললে কী বোঝায়?

সোনার দোকানের ব্যবসা অত্যন্ত সংবেদনশীল—কারণ এখানকার পণ্য দামি, ছোট, ওজন নির্ভর।

১️⃣ ইনভয়েসে যত সোনা দেখানো হয়েছে বাস্তবে তত নেই

যেমন—

  • ইনভয়েস: ১.০০০ ভরি
  • দোকানের স্টক: ০.৮৫ ভরি

এটার মানে:

  • সোনা লুকানো
  • হিসাব কম দেখানো
  • পুরনো সোনা কেনা–বেচার রেকর্ড লুকানো
  • কর্মচারী বা মালিকের তছরুপ

২️⃣ দোকানে যত সোনা আছে, ইনভয়েসে তার হিসাব নেই

এটাই সবচেয়ে সাধারণ কর ফাঁকির পথ।

উদাহরণ:

  • দোকানে পাওয়া গেল ৩ ভরি সোনা
  • কিন্তু ইনভয়েস/ক্রয় রশিদে যা দেখানো আছে: ১.৮ ভরি

এটা মানে:

  • রিফাইনারি বা পুরনো সোনা কেনার রেকর্ড লুকানো
  • ভ্যাট/ইনকাম ট্যাক্স কমানোর চেষ্টা
  • “ক্যাশ বিক্রি – রসিদ ছাড়াই” করা

৩️⃣ সোনা পুরোনো কিনে আনছে—কিন্তু রিসিপ্ট দিচ্ছে না

সোনার দোকান সাধারণত পুরনো সোনা রসিদ ছাড়া কেনে।

ফলে:

  • ইনভয়েসে দেখায় না
  • দোকানে সোনা থাকে, কিন্তু কাগজে নেই
  • পরে রিফাইন করে নতুন গয়নার মতো বিক্রি করে

এটা স্টক–ইনভয়েস গরমিলের বড় উৎস।


৪️⃣ কারিগরের কাছে দেওয়া সোনার হিসাব নেই

সোনা দিয়ে গয়না বানানোর জন্য স্বর্ণকারের কাছে “ইস্যু” করা হয়।
অনেকে এই ইস্যুর হিসাব রাখে না।

ফলে:

  • ইনভয়েসে সোনা আছে—স্টকে নেই
  • কারিগরী লস বলে কিছু সোনা দেখানো হয়
  • আসলে এর মধ্যে লুকানো গরমিল থাকে

৫️⃣ ২১ক / ২২ক নিয়ে ভেজাল হিসাব

অনেক দোকানে—

  • ২২ ক্যারেট বলে ২১ ক্যারেট দেয়
  • ইনভয়েসে ২২ ক্যারেট লিখে বিক্রি,
    কিন্তু স্টকে থাকে অন্য ক্যারেট

এটিও স্টক–ইনভয়েস গরমিল।


সোনার দোকানে স্টক–ইনভয়েস না মিললে কর ফাঁকি কীভাবে ধরা যায়? (সাংবাদিকতার দৃষ্টিকোণ)

✔ ১. প্রতিদিনের সোনার স্টক রেজিস্টার চেয়ে নিন

সেখানে লেখা থাকে—

  • কোন তারিখে কত ভরি আসলো
  • কত ভরি বিক্রি হলো
  • কত রিফাইন করা হলো
  • কত ক্যারেট

যদি এই রেজিস্টারে ইনভয়েসের সঙ্গে মিল না থাকে→ গড়মিল।


✔ ২. দোকানে থাকা ওজন–তুলা দিয়ে বাস্তব স্টক মাপুন

এটা সাক্ষাৎকারের সময় “ভিজ্যুয়াল চেক” হিসেবে করা যায়।


✔ ৩. পুরনো সোনা কেনার রসিদ মিলিয়ে দেখুন

বেশিরভাগ দোকান পুরনো সোনার রসিদ দেয় না—এটাই সবচেয়ে বড় “হোল”।


✔ ৪. রিফাইনারির স্লিপ চেক করুন

রিফাইনিং-এ কত হারিয়েছে (loss) সেটাই বড় জায়গা।
অনেকে loss বেশি দেখিয়ে সোনা লুকায়।


✔ ৫. ক্যারেট টেস্ট করুন

২২K বলে দিলে সেখানে যদি ২১K পাওয়া যায়—
এটিও ইনভয়েস গরমিল।


সোনার দোকান কীভাবে কর ফাঁকি দেয় — তা বোঝার ছোট উদাহরণ

ধরা যাক দোকানে আসলে আছে ৫০ ভরি,
কিন্তু ইনভয়েসে দেখানো হয়েছে ৩৮ ভরি

অতিরিক্ত ১২ ভরি হলোঃ

  • পুরনো সোনা কিনে কাগজে না দেখানো
  • রিফাইনের পর লুকানো
  • রসিদ ছাড়া বিক্রি
  • ইনভয়েস কম দেখানো

এটাই স্টক–ইনভয়েস গড়মিল


বাস্তবে একজন সাংবাদিক কি এগুলো করতে পারবে?

একজন সাংবাদিক বাস্তবে এগুলো করতে পারে, কিন্তু সঠিক পদ্ধতিতে এবং আইনগত সীমার ভেতরে
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা (Investigative Journalism) ঠিক এভাবেই কাজ করে।
তবে কী কী করা যাবে এবং কী কী করা যাবে না— সেটা স্পষ্টভাবে জানা জরুরি।

আমি আলাদা করে পরিষ্কারভাবে বুঝাচ্ছি


সাংবাদিক বাস্তবে যা যা করতে পারবেন (আইনসম্মত)

১. তথ্য চাইতে পারবেন (Right to Information / Public Interest)

  • দোকানের VAT রসিদ
  • BIN নম্বর
  • মূল্য তালিকা
  • ইনভয়েসে ক্যারেট উল্লেখ আছে কি না
  • পণ্যের বৈধতা (হলমার্ক/সীল)

এগুলো একজন গ্রাহক হিসেবেও চাইতে পারেন— এটি পুরোপুরি বৈধ।


২. দোকান পরিদর্শন করে প্রশ্ন করতে পারবেন

  • স্টক রেজিস্টারের কপি চাইলে দোকান দিতে বাধ্য নয়,
    কিন্তু জিজ্ঞেস করা আইনসঙ্গত
  • সোনার ক্যারেট টেস্ট করতে চাইলে আপনার অধিকার আছে (গ্রাহক হিসেবে)।

৩. ভ্যাট/ট্যাক্স ফাঁকি দেখলে (যেমন: রসিদ না দেয়া)— সেটা রিপোর্ট করতে পারবেন

এটা বাংলাদেশের সাংবাদিকতা আইনে বৈধ।
ভ্যাট ফাঁকি একটি পাবলিক ইন্টারেস্ট ইস্যু।
আপনি প্রমাণসহ রিপোর্ট করতে পারবেন।


৪. ওপেন–সোর্স তথ্য ব্যবহার করতে পারবেন

  • BAJUS রেট
  • NBR নোটিশ
  • আদালতের মামলা
  • প্রকাশিত তদন্ত রিপোর্ট
  • গণসাক্ষাৎকার

সবই আইনসঙ্গত।


৫. ক্রেতা হিসেবে গিয়ে সত্য ঘটনা পর্যবেক্ষণ করা (Undercover নয়)

আপনি স্বাভাবিক ক্রেতার মতো গিয়ে

  • ক্যারেট টেস্ট
  • রসিদ আছে কি না
  • দোকানের নিয়ম মানে কি না
    — এগুলো দেখে নোট করতে পারেন।

এটা সাধারণত “routine observation” হিসেবে গণ্য হয় এবং বৈধ।


সাংবাদিক যা করতে পারবেন না (আইনবিরোধী)

❌ ১. দোকানের স্টক রেজিস্টার জোর করে নেওয়া

এটা প্রতিষ্ঠানগত প্রাইভেট ডকুমেন্ট।

❌ ২. স্টক মাপার জন্য জোর করে পণ্য ধরতে চাওয়া

দোকান চাইলে সেটি দেখাতে পারে—না চাইলে আপনি বাধ্য করতে পারবেন না।

❌ ৩. চুরি হয়ে যাওয়া বা ফাঁসকৃত ডকুমেন্ট গ্রহণ করা

এটা আইনি ঝামেলা তৈরি করতে পারে।

❌ ৪. দোকানের অডিও/ভিডিও গোপনে রেকর্ড করা (Undercover)

বাংলাদেশে অনুমতি ছাড়া রেকর্ড করা আইন লঙ্ঘন হতে পারে।
তবে ওপেন রেকর্ডিং (যেমন, মোবাইল হাতে রেখে স্বাভাবিকভাবে ভিডিও) অধিকাংশ সময় গ্রহণযোগ্য।

❌ ৫. দোকানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা

প্রমাণ ছাড়া রিপোর্ট করলে মানহানি মামলা হতে পারে।


তাহলে সাংবাদিক বাস্তবে কী করতে পারে? সংক্ষেপে

✔ রসিদ চাইতে পারে

✔ ক্যারেট টেস্ট করতে পারে

✔ দোকানের আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে পারে

✔ ভ্যাট/রসিদ অনিয়ম ডকুমেন্ট করতে পারে

✔ কর্মচারী–গ্রাহক সাক্ষাৎকার নিতে পারে

✔ বাজারদর বনাম ইনভয়েস গরমিল ব্যাখ্যা করতে পারে

✔ সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থার তথ্য সংগ্রহ করতে পারে

এগুলো সম্পূর্ণ বৈধ সাংবাদিকতা।

বাস্তবতাঃ সোনার দোকান অনুসন্ধান কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়

সোনার ব্যবসা সংবেদনশীল হওয়ায় দোকানগুলো সহজে তথ্য দেয় না।
কিন্তু একজন দক্ষ সাংবাদিক কীভাবে কাজ করেন?

  • ধীরে ধীরে সম্পর্ক তৈরি করেন
  • ক্রেতাদের কাছ থেকে তথ্য নেন
  • একই দোকানে বারবার যান
  • ক্রেতার মতো আচরণ করে তথ্য সংগ্রহ করেন
  • আশেপাশের দোকান, কর্মচারী, কারিগরদের থেকে তথ্য নেন
  • ভ্যাট রসিদ না দিলে সেটার ভিডিও/ছবি রাখেন
  • BAJUS বা NBR থেকে অফিশিয়াল তথ্য সংগ্রহ করেন

এসব পুরোপুরি আইনি ও বাস্তবে কার্যকর।

বাংলাদেশে স্বর্ণে ট্যাক্স ফাঁকি কি ভয়ানক লেবেলে?

বাংলাদেশের বাস্তবতায় স্বর্ণে (সোনা) ট্যাক্স ফাঁকি অত্যন্ত বেশি এবং এটাকে সত্যিই “ভয়ানক লেভেল” বলা যায়। কারণগুলো খুবই স্পষ্ট এবং দীর্ঘদিন ধরে একই ধারা চলছে।

✅ কেন স্বর্ণে ট্যাক্স ফাঁকি ভয়ানক পর্যায়ে?

১.) আমদানির ওপর উচ্চ শুল্ক ফাঁকির প্রধান কারণ

বাংলাদেশে সোনা আমদানিতে

কাস্টমস ডিউটি,

ভ্যাট,

এটিভি,

আয়কর
মিলে মূল্যের ওপর ২৫–৩০% পর্যন্ত খরচ উঠে যেতে পারে।

➡️ এত বেশি ট্যাক্স দেখলে অনেক ব্যবসায়ী বৈধ পথে আমদানি না করে স্মাগলিং বা আন্ডার-ইনভয়েসিং বেছে নেয়।

২.) শোরুমে বিক্রির সময় অসঙ্গত ইনভয়েস

বহু স্বর্ণের দোকানে প্রকৃত ওজন দেখানো হয় না।

পুরনো স্বর্ণ কেনার ইনভয়েস ঠিকমতো তৈরি হয় না।

নতুন স্বর্ণ বিক্রিতে আসল ও নথিবদ্ধ স্টক মিলিয়ে না দেখানো হয় (স্টক–ইনভয়েস mismatch)

➡️ এতে ব্যবসায়ী ব্যক্তির বিক্রির ওপর ভ্যাট কম দেখানো সহজ হয়।

৩.) পুরনো সোনা কেনার পর সেটাকে নতুন হিসেবে দেখানো

পুরনো সোনা কোনো VAT নেই
নতুন স্বর্ণে VAT আছে

অনেক ব্যবসায়ী পুরনো সোনা কিনে নতুন বানিয়ে VAT এড়ানোর কৌশল নেয়।

৪.) স্মাগলিং এখনো বড় উৎস

অফিসিয়ালি বাংলাদেশে সোনা আমদানির পরিমাণ কম, কিন্তু বাজারে পাওয়া সোনার পরিমাণ অনেক বেশি।

➡️ এই gap–টাই প্রমাণ করে স্মাগলড স্বর্ণে বাজার ভরপুর, ফলে সরকার ট্যাক্স পায় না।

৫.) বাংলাদেশে সোনার ব্যবসা Mostly Cash-Based

নগদ লেনদেন বেশি

হিসাব কম দেখানো সহজ

TIN বা VAT রেজিস্ট্রেশন নেই এমন অনেক দোকানও আছে।

বাংলাদেশে স্বর্ণের ট্যাক্স ফাঁকি থেকে রাজস্ব কর্মকর্তারা কতটা সুবিধা নিয়ে থাকে?

স্বর্ণে ট্যাক্স ফাঁকি কোথায় কীভাবে হয়? কর্মকর্তাদের অবৈধ সুবিধা নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে কতটা? (Generic Pattern)

১.) আন্ডার-ইনভয়েসিং “এডজাস্ট” করার অজুহাতে

স্মাগলিং ছাড়া যে স্বর্ণ বৈধভাবে আসে, তার অনেকটাই
কম দামের ইনভয়েস দেখিয়ে আনা হয়।

সম্ভাব্য গোপন লেনদেনঃ

প্রকৃত দাম বেশি

কাগজে দেখানো হয় কম

কর্মকর্তা চাইলে তা “ধরতে” পারেন

কিন্তু ধরেন না → ব্যবসায়ী উপকৃত → কর্মকর্তা সুবিধা পান

এটি দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে পরিচিত under-reporting cartel pattern।

২.) জব্দকৃত স্বর্ণের মামলায় “সমঝোতা”

স্মাগলড স্বর্ণ ধরলে সাধারণত মামলা হয়।

এই সব কেসে কখনো কখনোঃ

জব্দকৃত স্বর্ণ কম দেখানো

কেস হালকা করে দেওয়া

তদন্ত দুর্বল করা

বা আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া বিলম্বিত করাএসব ক্ষেত্রে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার সুযোগ থাকে।

৩.) বাজার তদারকি ও VAT অডিটে “নরম হওয়া”

জুয়েলারি দোকানগুলোর অনেকেই নিয়মমাফিক:

স্টক দেখায় না

ক্রয়-বিক্রির ইনভয়েস সম্পূর্ণ রাখে না

VAT প্রদান কম দেখায়

তদারকি করতে গেলে যদি সব নিয়ম কঠোরভাবে দেখা হয়, অনেক অনিয়ম বের হয়।
কখনো কখনো যাচাইয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে নমনীয়তা দেখিয়ে সুবিধা নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।

৪.) “অফ দ্য রেকর্ড” তথ্য ফাঁস করা

যখন বিশেষ কোনো অভিযান, অডিট বা রেইড পরিকল্পনা হয়—

আগে থেকেই খবর দিয়ে দেওয়া

দোকানগুলোকে স্টক অ্যাডজাস্ট করতে সময় দেওয়া

এসব কাজের বিনিময়ে সুবিধা নেওয়ার উদাহরণ আন্তর্জাতিকভাবে আছে।