Headlines

চামড়া শিল্পে সুদিন কোনোভাবেই যেন ফিরছে না!

সাভার

বাংলাদেশের চামড়া শিল্প এক সময় কিছুটা সুপ্রতিষ্ঠা পেলেও, প্রচুর সম্ভাবনা হাতে রেখে এখন তা নিম্নগামী। চামড়া শিল্প রপ্তানি আয়ের দিক থেকে এক সময় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলো। হাজারিবাগ থেকে ঢাকার সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর করার পর থেকে এখনো হালে পানি পাচ্ছে না রপ্তানির এ দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত। উচ্চ মূল্য সংযোজন, বিপুল প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগের কারণে চামড়া খাতকে ইতিমধ্যে শীর্ষ অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্বের চামড়া ও পণ্যের বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব মাত্র ৩ %। বাংলাদেশে উৎপাদিত চামড়ার ৬০ ভাগই রপ্তানি হয়। গত কয়েক দশকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বহুগুণ বেড়েছে। কিন্তু গত পাঁচ ছয় বছরে রপ্তানি আয় ওঠানামা করেছে আতঙ্কজনকভাবে। তবে বাংলাদেশ থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের গঠনে একটি কাঠামোগত পরিবর্তন হয়েছে, কারণ, দেশটি এখন ম্যানুফ্যাকচারিং ফিনিশড লেদার থেকে বৈচিত্র্যময় ফিনিশড পণ্য উৎপাদনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রক একটি দশ বছরের পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা আঁকছে, যার মধ্যে রয়েছে চামড়া খাতের রপ্তানি আয় ২০৩০ সালের মধ্যে ১ বিলিয়ন বা ১ বিলিয়ন ডলারের কম থেকে ১০-১২ বিলিয়ন ডলার করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা। যদি এই লক্ষমাত্রায় পৌঁছানো যায়, তাহলে বাংলাদেশ শীর্ষ দশ চামড়া রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে চলে আসবে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছে ‘লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সার্টিফিকেট’ বিদেশী ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে গুরুত্বপূর্ণ। কারখানাগুলো সম্পূর্ণভাবে কমপ্লায়েন্ট না হলে এই সার্টিফিকেট পাওয়া সম্ভব নয়। এবং বিদেশী ক্রেতা পেতে এবং পণ্যের উচ্চ মূল্য পেতে, এটি আবশ্যক। দুর্বল কমপ্লায়ান্সের কারণে বিদেশিরা এখন বাংলাদেশ থেকে কম দামে চামড়াজাত পণ্য কিনছে। কারখানাগুলো কমপ্লায়ান্ট হলে দাম বাড়বে। রপ্তানি আয়ও বাড়বে। বিদেশী ক্রেতারা ‘লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপে’-এর সার্টিফিকেশন দেখে চামড়া কেনেন— বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এক নম্বর ব্র্যান্ড যা শিল্প এবং ভোক্তাদের কাছে দায়ী চামড়ার উৎসের প্রতিনিধিত্ব করে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি কোম্পানি এই সনদ পেয়েছে। অন্যদের কোম্পানিগুলো কমপ্লায়েন্ট না হওয়ায় সার্টিফিকেট পায়নি, যা এই খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির অন্যতম বাধা। দেশের প্রধান রপ্তানি খাতগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র চামড়া ও পাটজাত পণ্যের কাঁচামালের পুরো সরবরাহ স্থানীয় উৎস থেকে আসে। এই খাতে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ছয় লাখ লোক এবং পরোক্ষভাবে তিন লাখ লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে। দেশের মোট রপ্তানিতে এর অবদান ৪% এবং জিডিপির প্রায় 0.৫%। চামড়া রপ্তানিতে পৃথিবীতে বর্তমানে এক নম্বরে রয়েছে চীন। ইতালি, স্পেন ও হংকং বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের প্রধান বাজার। এছাড়াও দেশটি বিভিন্ন দেশে চামড়াজাত পণ্য পাঠায়। চামড়া শিল্পকে বহুমুখীকরণের জন্য নীতি সহায়তা প্রদান করা হলে রপ্তানি লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জ হলো ফ্যাক্টরিগুলোতে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা, যা বিশ্ব বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মতে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি হ্রাস পাচ্ছে এবং বর্তমানে রপ্তানি আয় ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে রয়েছে। উপরন্তু, কোভিড মহামারীর প্রভাবে রপ্তানি আয় কমে যায়। তদুপরি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের তুলনায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রপ্তানি প্রায় ১৮% বেড়েছে। ইপিব ‘র তথ্য অনুসারে ২০১০ সাল থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে এই খাত থেকে রপ্তানি হয়েছে ১.১২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এই আয় ১.২৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। এটাই বাংলাদেশের ইতিহাসে এই খাত থেকে সর্বোচ্চ আয়। এরপর কমতে থাকে। মহামারীর মধ্যে এই খাত থেকে রপ্তানি আয় ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৭৯৭.৯ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা এক বছর আগের তুলনায় ২১.৭৯% কম। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এটি আবার কিছুটা বাড়ে। এই অর্থবছরে এ খাত থেকে আয় হয়েছে ৯৪১.৬ বিলিয়ন ডলার। ফলে চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি এখন আর দ্বিতীয় অবস্থানে নেই। এ খাত থেকে রপ্তানি আয় এখন চতুর্থ অবস্থানে নেমে এসেছে।

গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চের একটি নতুন প্রতিবেদন অনুসারে বিশ্বব্যাপী চামড়াজাত পণ্যের বাজারের আকার ২০২৮ সালের মধ্যে ৬২৪.০৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে প্রত্যাশিত। স্ট্যাটিস্তা— একটি বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িক ডেটা প্ল্যাটফর্মের মতে ২০২০ সালে রপ্তানিকৃত চামড়াজাত পণ্যের বৈশ্বিক মূল্যের ৩০.৩% চীন দখল করেছে। ইতালি এবং ফ্রান্স ঐতিহ্যগত ইউরোপীয় ট্যানিং শিল্পের প্রতিনিধিত্ব করে, তারা যথাক্রমে ১৭.৮% বাজার দখল করে আছে। টাকার অংকে ১৪.৮ বিলিয়ন ডলার। অন্যান্য এশীয় দেশ, যেমন ভিয়েতনাম এবং ভারতেরও বৈশ্বিক রপ্তানি মূল্যেও এ খাতে একটি অংশ দখল করে। ভিয়েতনাম ৬.৪% এবং ভারত বিশ্বব্যাপী রপ্তানি মূল্যের ২.৬% অংশীদার।

বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের প্রধান বাজার হচ্ছে ইউরোপের দেশগুলো। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ আরও কয়েকটি দেশে রপ্তানি হয় এই পণ্য। লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে জুতার মোট বাজারের ৫৫ শতাংশ চীনের দখলে। ভারত ও ভিয়েতনামেরও ভালো অবস্থান আছে। বিশ্বে জুতার বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮তম। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের এ খাতে অবদান মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ। প্রতি বছর চামড়া খাত থেকে যে বিদেশি মুদ্রা দেশে আসে, তার প্রায় ১৫ শতাংশ রপ্তানি করে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। প্রতিষ্ঠানটি জার্মানি, ইতালিসহ ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশে জুতা রপ্তানি করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাতেও জুতা রপ্তানি শুরু করেছে অ্যাপেক্স।

চামড়া খাতকে এক সময় সম্ভাবনাময় মনে করা হলেও এটি ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছিলো। দ্বিতীয় শীর্ষ এই রপ্তানি খাত এখন চতুর্থ স্থানে নেমে এসেছে। প্রকল্প শেষ না হলেও ২০১৭ সালে উচ্চ আদালত হাজারীবাগের চামড়া কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়। ফলে সব কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে বেশ কিছু চামড়া কারখানার বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ ছিল। এ সনদের সুবাদে তারা জাপান, কোরিয়াসহ ইউরোপ-আমেরিকায় চামড়া রপ্তানি করতে পারতো। হাজারীবাগে কারখানা বন্ধ হওয়ায় সেই সনদ ও বায়ার (বিদেশি ক্রেতা) হারায় চামড়াশিল্প কারখানাগুলো। এত দীর্ঘ সময়েও সাভারের চামড়া শিল্পনগরী পূর্ণাঙ্গভাবে প্রস্তুত না হওয়ায় এখনও এলডব্লিউজির সনদ ফিরে পায়নি কারখানাগুলো। একইসাথে নতুন বাজার সৃষ্টি হয়নি। সনদ না থাকায় জাপান, কোরিয়াসহ ইউরোপ-আমেরিকায় এলডব্লিউজির আওতায় চামড়া রপ্তানি করতে পারছে না কারখানাগুলো।

নারী উদ্যোক্তাদের সাফল্য

এই খাতে সফল নারী উদ্যোক্তাদের একজন তানিয়া ওয়াহাব। তানিয়া ওয়াহাব পড়াশুনা করেছেন লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে, ফলে স্বপ্ন আর বাস্তবতা তার কাছে ধরা দিয়েছে। ২০০৫ সালে ছোট পরিসরে হাজারীবাগে একটা দোকান আর একটা মেশিন দিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। ছোট ছোট কাজ করতে করতে একসময় তার কারখানা ‘কারিগর’-এর যাত্রা শুরু হয়। এখন তার কারখানায় নিয়মিত কাজ করছেন অর্ধশতাধিক লেদার প্রডাক্ট তৈরির কারিগর। আর অনিয়মিতর তালিকায় আছেন আরো দুই শতাধিক শ্রমিক। দেশ ও বিদেশের অনেক নামি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুযোগ ঘটে কারিগরের। তিনি বিভিন্ন দেশের চামড়াজাত পণ্যের মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন দেশ থেকে সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পুরস্কারও পেয়েছেন। অনারারি নাগরিকত্বও পেয়েছেন। ২০১১ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পেনসাকোলা সিটির গভর্নরের কাছ থেকে অনারারি সিটিজেনশিপ সার্টিফিকেট লাভ করেন।

রেজবিন হাফিজের জন্ম গাইবন্ধায়। গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছেন, এরপর স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে এমবিএ ও ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেদার ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারিং বিষয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। উত্তরা মাইলস্টোন কলেজে প্রায় ১০ বছর শিক্ষকতা করেছেন রেজবিন। শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে ২০১২ সালে পিপলস নাইফ ইঞ্জিনিয়ারিং নামে চামড়া খাতে ব্যবহৃত ডাইসের (কাটিং নাইফ) কারখানা গড়ে তোলেন। যখন দেখেন তার কাটিং নাইফ দিয়ে জুতা তৈরী হচ্ছে, তখন ২০১৪ সালে ২ জন কর্মী নিয়ে জুতা তৈরির কাজে হাত দেন রেজবিন। তখন পুঁজি ছিল মাত্র সাড়ে ৩ লাখ টাকা। জুতা, ব্যাগ, বেল্টসহ চামড়াজাত পণ্য তৈরি করার জন্য আশুলিয়ায় ৫০০ বর্গফুটের একটি ঘর ভাড়া নিয়ে পিপলস ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস নামের কারখানা গড়ে তোলেন। বর্তমানে গাইবান্ধা বিসিক শিল্পনগরী ও ধামরাইয়ে বিসিক শিল্প নগরীতে রেজবিন হাফিজ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। প্রতিষ্ঠানে এখন ১৫০ জন কর্মী কাজ করছে। যেখানে প্রতিমাসে উৎপাদন হয় ১২ থেকে ১৩ হাজার চামড়াজাত পণ্য, যার ৭০ শতাংশই জুতা। তার প্রতিষ্ঠানের পণ্য রপ্তানি হয়েছে চায়না, মালয়েশিয়া, জাপান, ভারতে। দেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অর্ডার নিয়েও পণ্য তৈরী করে দেয়। তানিয়া ওয়াহাব এবং গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার রেজবিনা হাফিজের মতো এই খাতে সফল নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে রয়েছেন রুবিনা আক্তার, মাকসুদা খাতুন, আয়েশা সিদ্দিকা এবং রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার নাজমা খাতুন সহ আরো অনেকে।

চামড়া খাতে রপ্তানির বড় বাধা সিইটিপি

২০১৭ সালে আদালতের নির্দেশে সাভারের হেমায়েতপুরে শিল্পনগরী ট্যানারিগুলো যেতে বাধ্য হয়। আর এ শিল্পনগরী গড়ে তোলার কাজ এরও অর্ধযুগ আগে থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে সাভারে চামড়া শিল্প স্থানান্তর করা হলেও কাজের কাজ এখনো কিছু হয়নি। বরং কমেছে রপ্তানি আয়, আর এখন দূষিত হচ্ছে ধলেশ্বরী নদী। ওই নগরীতে ১৫৫টি ট্যানারিকে জমি দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার তৈরি করে দেওয়ার কথা বিসিকের। তারা এ জন্য একটি চীনা কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয় ২০১২ সালে। তবে তারা যথাসময়ে সিইটিপি পুরো চালু করতে পারেনি। সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে দৈনিক ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদন হয়, যেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা রয়েছে ২৫ হাজার ঘনমিটার। ২০২১ সালে পরিবেশ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে না হওয়ায় সাভারের চামড়া শিল্প নগরী ‘আপাতত বন্ধ রাখার’ সুপারিশ করে। যেসব ফ্যাক্টরি কমপ্লায়েন্স নীতি মানছে না সেসব ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলা হয়। আসলে সমস্যা সরকারি ব্যবস্থাপনার মধ্যেই— দুই বছর মেয়াদী প্রকল্পটি টেনে ২০ বছর ধরে বাস্তবায়ন করায় প্রকল্পের ব্যয় ছয় গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ শিল্প নগরীটিকে এখনো অসম্পূর্ণ ও পরিবেশ বান্ধবহীন বলে মনে করা হচ্ছে। দূষণমুক্ত ট্যানারি শিল্প গড়ে তোলে দেশীয় কাঁচামাল নির্ভর রপ্তানিমুখী খাতটিতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা কিংবা রপ্তানি বৃদ্ধির মতো কোন স্বপ্নই পূরণ হচ্ছে না। বরং চার বছর আগে ট্যানারিগুলো হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তরের পর দ্রুত কমছে রপ্তানি আয়। ২০০৩ সালে নেওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ ১২ দফা বাড়ানোর পাশাপাশি ১৭৫ কোটি টাকার পরিবর্তে ১০১৫ কোটি খরচ করা হলেও পরিবেশ দূষণ বন্ধে কমন ক্রোম রিকভারি ইউনিট নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি। প্রকল্পের আওতায় দুই বছরের মধ্যে সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি) স্থাপন করার কথা থাকলেও চীনা ঠিকাদারী কোম্পানির খামখেয়ালিপনা ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতার কারণে তা শেষ হতে লেগেছে সাত বছরেরও বেশি সময়। এখনো সিইটিপি প্রকল্প সফল হয়নি। আগে হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো যেভাবে বুড়িগঙ্গার পানিকে বিষে পরিণত করছিলো, সেই ভাগ্য বরণ করতে হচ্ছে এককালের টলমলে স্বচ্ছ পানির ধলেশ্বরীকে। আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল অভিযোগ ফ্যাক্টরির কমপ্লায়েন্স নিয়ে, এ কারণেই এ শিল্প থেকে রপ্তানি আয় থমকে আছে। কিন্তু এখনো সাভারের বেশিরভাগ ফ্যাক্টরি কমপ্লায়েন্স ফ্যাক্টরি হয়ে উঠতে পারেনি।

একসময় রপ্তানি খাতে পোশাক শিল্পের পরেই ছিলো চামড়াজাত পণ্যের অবস্থান। কিন্তু এখন চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য চলে গিয়েছে ৪ নম্বরে। এই শিল্পকে কেন্দ্র করে দেশে গড়ে উঠেছে প্রায় ২৩০টিরও বেশি ট্যানারি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী এখন প্রতি বছর দেশে কম বেশি এক কোটি পশু কোরবানি হয়। গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় বাজারে কাঁচা চামড়ার দাম কম। কোরবানির সময় পানির চেয়েও কম দামে চামড়া বিক্রি হয়। শুধু তাই নয়, চামড়াকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করার কারণে ও উপর্যুক্ত দাম না পাওয়ায় অতীতে চামড়া নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে, মাটিতে পুতে ফেলা হয়েছে। কোরবানি মৌসুমের চামড়ার এই বাল্ক কাজে লাগতে পারলে এবং চামড়াজাত পণ্যে বৈচিত্র আনতে পারলে এ খাতে রপ্তানি সম্ভাবনা প্রচুর। কিন্তু দক্ষ জনবল, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং উদ্যোক্তার অভারে চামড়া শিল্পের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।


অনলাইন অবলম্বনে ফলোআপ নিউজ ডেস্ক