Headlines

“জাম্প অন জায়ান্ট শোলডার”

প্রথমত নিজের হৃদয়বৃত্তির খোঁজ রাখতে হবে, প্রকৃতপক্ষেই মানুষের জন্য আপনার হৃদয় পোড়ে কিনা জানতে হবে। ‘পোড়া’ শব্দটা বোঝেন তো? যেমন আমরা বলি না যে, প্রাণ পোড়ে। ঘাটে মাঠে বন্দরে মানুষের অসহায়ত্ব দেখে যদি আপনার হৃদয় না পোড়ে তাহলে নিজেকে আগে তৈরি করুন। আর যদি দেখেন মন কাঁদে, কিন্তু কিছু করা যাচ্ছে না, তাহলে আমার কথা শোনেন।


এডাম বুরসেজেক
পোলিশ চিত্রকর এডাম বুরসেজেক-এর আঁকা একটি চিত্রকর্ম।

মানুষকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দিতে হবে। এটা আপনি বেছে বেছে করতে পারেন না। মালিক মানেই মন্দ, এই ভাবনা থেকে বেরোতে হবে। ধনী মানেই খারাপ —এটা ভুলেও ভাবা যাবে না। ভালো-মন্দের তফাৎটা আপনাকে করতে হবে সৃষ্টিশীল উপায়ে। কোনো ফ্রেম দিয়ে মাপতে গেলে ভুল হবে।

এদেশের বেশিরভাগ মালিক তো শ্রমিক থেকে মালিক হয়েছে, যে এক সময় শোষীত হত, সে এখন শোষণ করছে, ফলে শোষণটা সে খুব ভালোভাবে করতে পারছে। আবার সে ঠকছেও, ভুলও করেছে। ঠকছে শিক্ষিতদের কাছে, রাজনীতির নামে কিছু মানুষ, মিডিয়া এবং সরকারি কর্মকর্তারা তার সম্পদে ভাগ বসাচ্ছে। সে বরং কষ্ট করেছে, পরিশ্রম করেছে, কিন্তু যারা ভাগ বসাচ্ছে তারা শুধু ভড়কে দিয়ে এটা করছে।

একটা ব্যবধান আপনাকে করতে পারতে হবে— উচ্চশিক্ষিত ভদ্রলোকেরাই সমাজটাকে এখন নষ্ট করছে সবচে বেশি। চক্রটা এখানে খুব ভযঙ্কর। সাধারণ মানুষের টাকা তাদের পকেটে চলে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের টাকা ঘুরছে তাদের মধ্যে। ধরুণ, বড় কোনো কোম্পানির মালিকের ছেলে বা তাদের কেউ, তাদের যাবতীয় আয়োজন বা খরচ কোথায়? নিশ্চয়ই আরেক বিশাল ধনীর দোকানে (দোকান এখানে বৃহদার্থে ভাবতে হবে)। হোটেলে থাকলে তারা সেরা হোটেলে থাকে, খাইলে তারা সেরা রেস্টুরেন্টে খায়, বেশ্যার কাছে গেলেও লাখ টাকা দাম দিয়ে যায়, তাই তাদের টাকা আপনার আমার পকেটে আসা কঠিন। বিজ্ঞাপন দিলে কাদের চ্যানেলে দেয়, তার বদৌলতে কী নির্মিত হচ্ছে, সেখানে আপনার আমার কোনো প্রতিনিধিত্ব কি আদৌ আছে?

আগে যে ঝালমুড়িটা আমরা পাঁচ টাকা দিয়ে ফেরিওয়ালার কাছ থেকে খেতাম, সে মার্কেটটাও তারা এখন নিয়ে নিতে চাইছে, নিচ্ছে। ওদের কারখানাগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখেন, যে বেতন দিচ্ছে শ্রমিকদের তা খুবই মানবেতর। ষোলো ঘণ্টা পরিশ্রম করে এই বাজারে ছয় থেকে আট হাজার টাকা পাচ্ছে তারা! কোন অধিকারে তারা শ্রম শোষণ করছে? ‘লেবার ল’ প্রয়োগ হচ্ছে কোথায়? প্রয়োগ করার দায়িত্ব কার? সরকার বলবে কোনো অভিযোগ তো আসে নাই। অভিযোগ আসবে কেন? অভিযোগ করার সামার্থ ওদের আছে? ন্যায়বিচারের জন্য অভিযোগ লাগবে কেন? যেমন, ধর্ষিতার মামলা করতে হবে কেন? পুলিশ স্বতপ্রণোদিত হয়ে মামলা করবে। কোথায় কী অনিয়ম হচ্ছে সরকারই তো তা খোঁজ খবর রাখার কথা, তাই না?

যে কথা বলছিলাম, বাস্তবতা সবাই আমরা কম-বেশি জানি, কিন্তু এখন এদের মোকাবেলা করা যাবে কীভাবে? সহজ উত্তর হচ্ছে— আপাতত রাজনীতি বাদ দিয়ে প্রচুর গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করতে হবে। একেকটা টেরিটরি ধরে ধরে এগোতে হবে। ধরুণ, গার্মেন্টস সেক্টর, আগে ঐ শিল্পের মধ্যে অন্তরীণ হয়ে বিষয়গুলো বুঝতে হবে, তথ্যসংগ্রহ করতে হবে, লেখালেখি করতে হবে। শ্রমিকদের সাথে হাসি-ঠাট্টা-গান করতে হবে, মালিকের দুঃখও বুঝতে হবে, তাদের জীবন-যাপন তুলে ধরতে হবে, বরং কোনোভাবেই রাজনীতির কথা বলা যাবে না, তাহলে ওরা জীবিকা হারানোর ভয় পাবে, ধর্ম হারানোর ভয় পাবে। জীবনের কাছাকাছি হতে পারলে, হৃদয়ে খোঁচা মেরে যন্ত্রণার কিছু ভাগ নিতে পারলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়।

সবসময় বলি, “জাম্প অন জায়ান্ট শোলডার”

এর কোনো বিকল্প নেই। যে দৈত্যের সাথে শক্তিতে পারা যাবে না, তার মুখোমুখি না হয়ে তার ঘাড়ে চেপে কন্ট্রোল নিতে হবে তার অজান্তে, পরোক্ষ উপায় খুঁজে বের করতে হবে। ঘোড়া তাড়িয়ে কি পারা যায়, ধরা যায়? যায় না। লাগামটা হাতে নিতে হবে।


দিব্যেন্দু দ্বীপ