বাগেরহাটে ডিলার এবং ফড়িয়াদের কাছে জিম্মি পোলট্রি খামারিরা

ব্রয়লার মুরগি

বাগেরহাটে


সংকটে পড়েছেন বাগেরহাটের পোলট্রি খামারিরা। বাজারে ব্রয়লার এবং সোনালি মুরগির দাম আকস্মিকভাবে কমে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে যেসব মুরগি বর্তমানে বিক্রির উপযোগী, সেই খামারিরা সবচেয়ে বেশি সমস্যার মধ্যে পড়েছেন। গত মাসে তাদের কোনো লাভ হয়নি, এ মাসেও লাভ হওয়ার তেমন কোনো আমা দেখছেন না। কিন্তু বাচ্চার দাম, খাবার, ওষুধ -এসবের দামের কোনো হেরফের হচ্ছে। 

বাচ্চা কেনা, খাবার কেনা, ওষুধ কেনা ইত্যাদি কোম্পানির ডিলারদের দ্বারা পরিচালিত এবং তারা তাদের লাভ ঠিকই নিযে যাচ্ছে। লসের হিসেবে তারা নেই। খামারিরা বলছেন, প্রতি মুরগিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে। বিশেষ করে প্রতি ব্রয়লারে গড়ে ৩০ থেকে ৫৫ টাকা করে লোকসান হচ্ছে। কচুয়া উপজেলার বাধাল ইউনিয়নের সুমিত তিন বছর ধরে ব্রয়লার চাষ করছেন। খামারে খাটা খাটনি করে তা মা বাবা ও সে -তিনজন। কিন্তু লাভের অংক কোনোদিন দশ পনেরো হাজারের উপরে ওঠেনি। মাঝে মাঝে লোকসান গুণতে হয়, যেমন, গত মাসে লোকসান হয়েছে। ৫০০ থেকে ৭০০ মুরগী তুলে থাকে সুমিত, বাচ্চা, খাবার, ওষুধ ইত্যাদি সরবরাহ করে কোম্পানি এবং তাদের ডিলার ঠিকই পঁচিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা করে লাভ করে নিচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ মুরগির খামারিদের কাছ থেকে। অন্যদিকে খামারিদের শ্রমের পয়শাটুকুও হচ্ছে না। পরোক্ষ এবং প্রাথমিকভাবে তারা জিম্মি কোম্পানির ডিলারদের কাছে, প্রত্যক্ষভাবে জিম্মি মুরগির ফড়িয়াদের কাছে।   

তিন থেকে চার হাত বদল হয়ে বাজারে মুরগি সরবরাহ হয়। এ কারণে ক্রেতারাও বেশি দামে বাজার থেকে মুরগি কিনছেন। খামারিরা ফড়িয়া বা দালালদের কারণে মুরগির ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। এর ফলে বাগেরহাটের খামারিদের চলতি দফায় কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ধারণা করা হচ্ছে, পোলট্রি খামারে প্রায় বিশ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের হয়েছে। খামারের অর্ধেকের বেশি ব্রয়লার। এসব ব্রয়লার খামারে বিক্রির উপযোগী প্রায় এক লাখ মুরগি রয়েছে। আর সোনালি এবং দেশি মুরগির সংখ্যা হবে প্রায় ৫০ হাজার।

বড় খামারি হান্নান আলী, চলতি দফায় তার খামারে পাঁচ হাজার ব্রয়লার মুরগি রয়েছে। তিনি বলেন, শুরুতেই ৫০ টাকা দামে ব্রয়লারের বাচ্চা কিনেছি। একটি ব্রয়লার মুরগি খামারে সর্বোচ্চ ৪০ দিন পালন করতে হয়। এজন্য ব্রয়লারপ্রতি খাবার লাগে তিন কেজি। এর দাম ১২০ টাকা। ওষুধ, বিদ্যুৎ এবং লোকবলসহ আরও ২০ টাকা ব্যয় হয়। অর্থাৎ একটি ব্রয়লারে মোট উৎপাদন ব্যয় ১৯০ টাকা। সবকিছু একটু কমে পেলে খরজ ২০ টাকা কমে।

তিনি বলেন, ৪০ দিনে একটি ব্রয়লারের ওজন হয় সর্বোচ্চ দেড় কেজি। বর্তমানে বাগেরহাটের খামারিরা ফড়িয়াদের কাছে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি গড়ে বিক্রি করছেন ৯০ টাকায়। এর ফলে দেড় কেজি ওজনের ব্রয়লারের দাম হয় ১৩৫ টাকা। ফলে ব্রয়লারপ্রতি খামারিদের লোকসান গুনতে হচ্ছে ৫৫ টাকা।

Hadi Islam“বর্তমানে সারা দেশেই মুরগির দাম কম। এর বিপরীতে মুরগির বাচ্চা ও খাবারের দাম বেশি। এ কারণে খামারিদের উৎপাদন ব্যয় উঠছে না। বিপণন ব্যবস্থায়ও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। মূলত সমস্যা এখানে দুটো–

১। কীভাবে খামারিরা বাচ্চা, খাবার এবং ওষুধ-স্বাস্থ্যসেবা পাবে;

২। কীভাবে তারা বিক্রি উপযোগী মুরগিগুলো বাজারে বিক্রি করে ন্যায্য দাম পাবে।

এক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপ যেমন দরকার, পাশাপাশি প্রয়োজন বোধসম্পন্ন মানুষ এই ব্যবসায় নিয়োজিত হওয়া।” —বলছিলেন জেলার দরগা অঞ্চলের খামারি, উদ্যোক্তা এবং এজেন্ট ব্যাংকার হাদি ইসলাম। 

জনাব হাদি ইসলাম আরও বলেন, “এখন আমাদের ভাবতে হবে ব্রয়লার মুরগি থেকে আবার দেশীয় জাতে ফেরা যায় কিনা, কারণ, এটা প্রতিষ্ঠিত যে ব্রয়লার মুরগি পালনে ঝুঁকি আছে, এটা স্বাস্থ্যের দিক থেকেও খুব ঝুঁকিপূর্ণ । গ্রামের সাধারণ মানুষ যদি ছোটো ছোটো দেশি মুরগির খামার সৃষ্টি করে নিজেরা অর্গানিক খাবার তৈরি করে নিতে পারে বা অর্গানিক খাবারের বিশ্বস্ত কোনো সরবরাহকারী থাকে তাহলে বর্তমান সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব।”