ব্যাংক কি আপনাকে বন্ধক ছাড়া ঋণ দেয়?

অর্থনীতি

কোনো কোনো বিষয় যতটা না খারাপ তার চেয়ে বেশি খারাপ হিসেবে ধরে নেওয়া হয় বিষয়টির তাৎপর্য বুঝতে না পারার কারণে। মানুষ কেনো ঋণ নেয়? উন্নয়ন করার জন্য, উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ঋণ নেয়, একথা যেমন সত্য, এর চেয়ে শতগুণ সত্য— মানুষ আসলে জীবন বাঁচাতে ঋণ নেয়।

কে টাকা দেয় বলেন? ৫ টাকা ভিক্ষা দিয়ে কি তাৎক্ষণিক ৫০ হাজার বা ৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন মেটে? এমন প্রয়োজন যার হয় সে বোঝে আসলে কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তখন তৈরী হয়, যখন প্রিয়জনেরা সবাই মুখ ফিরিয়ে নেয়। এমতাবস্থায় কেউ যদি কোনো জিনিস রেখে ফিরিয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে ঋণ দেয়, সেটিকে কি মন্দ বলা যায়?

স্বর্ণ
বন্ধকী ব্যবসা করেন, এমন একজন ব্যবসায়ী কতৃক প্রদেয় পাকা রশিদ।

এখন পর্যন্ত কোনো বন্ধকী ব্যবসায়ী প্রতিশ্রুতির বাইরে গিয়ে স্বর্ণ মেরে দিয়েছে এমন রেকর্ড আছে? অনুসন্ধান করে এমন একটি ফলও পাওয়া যায়নি। তাহলে বিষয়টি খারাপ কেনো? ব্যাংক কি বন্ধক ছাড়া ঋণ দেয়? বরং বন্ধক হাতে নিয়েও ঘুরতে ঘুরতে জীবন শেষ হয়ে যায়। প্রশ্ন হতে পারে, এটি নিয়ম নীতির মধ্য দিয়ে চলছে কিনা, সে বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু কোনোভাবেই বন্ধকী ব্যবসাকে সামষ্টিক অর্থনীতির বাইরে নিয়ে গিয়ে দেখার সুযোগ নেই।

বন্ধকী ব্যবসায় ৩ শতাংশ হারে মুনাফা নিলে সেটি দেশের সবচেয়ে কার্যকর ব্যবসার খাত মাইক্রোক্রেডিটের সুদ হারকে কোনোভাবেই অতিক্রম করে না। বরং এক্ষেত্রে মুনাফা চক্রবৃদ্ধি হয় না। বিপরীতে আরেকটি হিসেবও এক্ষেত্রে খুবই প্রণিধানযোগ্য— ব্যাকের ভল্টে স্বর্ণ রাখতে গেলে টাকা লাগে। স্বর্ণ ব্যবসায়ী যে নিরাপত্তা দিয়ে স্বর্ণের মতো ঝুকিপূর্ণ সম্পদ রাখছে, তার জন্য যদি ১ শতাংশ চার্জ ধরা হয়, তাহলে সুদের হার দাঁড়ায় ২ শতাংশে। এটি আমাদের মতো উচ্চ মুদ্রাস্ফিতির দেশে সহনীয়, একইসাথে স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা হিসেব করলে গ্রাহকদেরর জন্য ক্ষতিকর নয়।

সমস্যা হয়— ঠিকমতো টাকা পরিশোধ করে গ্রাহক স্বর্ণ ফেরৎ নিতে না পারলে। যেহেতু বন্ধকী ব্যবসায়ী স্বর্ণের দাম ধরার সময় যথেষ্ট কম ধরে, ফলে গ্রাহক স্বর্ণ ফিরিয়ে নিতে না পারলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে।

বন্ধকী ব্যবসায়ীরাও স্বর্ণ রেখে টাকা দিয়ে অনেক সময় বিপাকে পড়ে যায়। অনেকে দুই তিন বছর পরে এসে নিয়মবহির্ভূতভাবে স্বর্ণ ফেরত চায়। এজন্য বন্ধকী ব্যবসা আইনসিদ্ধ হলে, সেটি গ্রাহক এবং ব্যবসায়ীদের জন্য যেমন ভালো হবে, সবচেয়ে বেশি ভালো হবে স্বর্ণের উপযোগিতা তৈরি হলে। কারণ, শুধু গয়না হিসেবে ব্যবহৃত হলে স্বর্ণ আসলে কোনো উপযোগিতা তৈরি করে না। স্বর্ণ যেহেতু ভোগ্য পণ্য হিসেবে গন্য হয় না, ফলে স্বর্ণ যত বেশী হাত বদল হবে ততই তার উপযোগিতা বাড়বে। ভল্টে পড়ে থাকার চেয়ে স্বর্ণ ঘোরাঘুরি করলেই আসলে ভালো।