ভ্যাট তুলে তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না করার অভিযোগ

VAT

ভ্যাট তুলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা হয় না —রাজস্ব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এ জাতীয় অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

ফলোআপ নিউজ খুলনা ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন জেলাগুলোর ওপর অনুসন্ধান চালিয়ে এ অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে।

বাৎসরিক টার্নওভার ত্রিশ লক্ষ টাকার কম হলে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশন বাধ্যতামূলক নয়।

কিন্তু আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান যেহেতু কোনো একাউন্টস্ সংরক্ষণ করে না, ফলে টার্নওভার হিসেব করা কঠিন।

এ জায়গা থেকেই ব্যবসায়ীর সাথে রাজস্ব কর্মকর্তার এক ধরনের যোগসাজশ তৈরি হয়। ব্যবসায়ী চায় রেজিষ্ট্রেশন না করে কোনোমতে পার পেতে। কিন্তু রাজস্ব কর্মকর্তা চাইলে প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক বিক্রয়ের একটা আনুমানিক হিসেব করে ফেলতে পারে। করেও। কিন্তু করে নিজ স্বার্থে।

রেজিষ্ট্রেশনের চাপ দিয়ে ঐচ্ছিক ভ্যাট হিসেবে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঐচ্ছিক ভ্যাটের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা হয় না বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাৎসরিক টার্নওভারের হিসেবটি ছোট হওয়ায় রাজস্ব কর্মকর্তাদের জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রের কোনো লাভ হয়নি। এমনিতেই বাংলাদেশের করপ্রথা ভোক্তাবান্ধব নয়, তার সাথে যোগ হয়েছে সীমাহীন দুর্নীতির সুযোগ।

এ বিষয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাপস দেবনাথ বলেন, আমার ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশন নেই, কিন্তু মাসে আমি ৩,০০০ টাকা ভ্যাট হিসেবে সমিতির কাছে দিই। এই টাকা কোথায় যায় আমি জানি না।

বাধাল বাজারের একজন ঢেউটিনের ব্যবসায়ী বলেন, রেজিষ্ট্রেশন নেই, আমি মাসে ২০০০ টাকা দিই। টাকাটা জমা হয় না, এটা আমি বুঝি। বাধ্যতামূলক ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশনের জন্য বাৎসরিক টার্নওভার এক কোটি টাকা হওয়া প্রয়োজন। আমাদের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে, জোরজুলুম করে টাকা নিলে, চাপ তো অবশেষে ভোক্তাদের ওপরে পড়ে। ভ্যাটের বর্তমান নিয়মে ঘুষপ্রথার অবারিত সুযোগ রয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।

বিভাগের ছোট ছোট জুয়েলার্স গুলোর সাথে কথা বলে জানা যায় তাদেরও ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশন নেই, কিন্তু সমিতির কাছে একটা টাকা দেয়। তারা ভ্যাটের আওতার বাইরে থাকার দাবীদার, কিন্তু সমিতি তাদের কাছ থেকে টাকা তোলে। নিক্তির বিএসটিআই রেজিষ্ট্রেশন করার নামেেও টাকা তোলে, কিন্তু টাকা ভাগাভাগিই হয় বলে অভিযোগ। সমিতিগুলো আসলে কর্মকর্তাদের সাথে হাত মিলিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং জনগণকে ঠকিয়ে চলেছে।

এতো গেলো পরোক্ষ কর। মাঝারি এবং বড় ব্যবসায়ীদের প্রত্যক্ষ করের চর্চা আরো ভয়াবহ। ফাঁকির চূড়ান্ত। ভয়াবহ হচ্ছে— ধনীরা কর দিচ্ছে তাদের আয়ের ৫.৪ শতাংশ, বিপরীতে দরিদ্র মানুষেরা কর দিচ্ছে তাদের আয়ের ১২.১ শতাংশ। এর চেয়ে হৃদয়বিদারক আর কী হতে পারে?