
মার্কিন ডলার (USD) সরাসরি কোনো দেশের কাছ থেকে টাকা “হাতিয়ে নেয়” না। কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এমন কিছু প্রক্রিয়া আছে, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে অন্য দেশগুলোর অর্থ থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি সুবিধা নিতে দেয়। এগুলোকে অনেক অর্থনীতিবিদ “ডলার হেজেমনি” বা “ডলার প্রিভিলেজ” বলে থাকেন।
১. ডলার হলো বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রা
-
বিশ্বের মোট বৈদেশিক রিজার্ভের প্রায় ৬০%-এর বেশি ডলারে রাখা থাকে।
-
ফলে, অন্য দেশগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করতে হলে ডলার কিনে জমা রাখে।
-
এতে যুক্তরাষ্ট্র ডলার ছাপিয়ে দিয়ে (ফেডারেল রিজার্ভের মাধ্যমে) নতুন অর্থ তৈরি করে এবং বাস্তবে কোনো পণ্য উৎপাদন না করেও পণ্য কিনতে পারে।
-
একে অনেক সময় বলা হয় “Exorbitant Privilege” — কারণ, যুক্তরাষ্ট্র নিজের মুদ্রা দিয়ে বিশ্বের কাছ থেকে সম্পদ কিনে নিতে পারে।
২. তেল ও কাঁচামাল বাণিজ্যে পেট্রোডলার সিস্টেম
-
আন্তর্জাতিক তেল বাণিজ্যের বড় অংশ ডলারে হয়ে থাকে (পেট্রোডলার)।
-
তেল আমদানি করা দেশগুলোকে ডলার কিনতে হয়। ফলে ডলারের চাহিদা বাড়ে, ডলার শক্তিশালী হয়।
-
ডলার শক্তিশালী হলে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি খরচ তুলনামূলকভাবে কমে যায়।
৩. যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ বন্ড ও সুদ
-
ডলার জমিয়ে রাখা দেশগুলো প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করে।
-
এতে যুক্তরাষ্ট্র খুব কম সুদে ঋণ নিতে পারে এবং তার বাজেট ঘাটতি মেটাতে পারে।
-
বাস্তবে অন্য দেশগুলো তাদের রিজার্ভ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সুদে টাকা ধার দেয়।
৪. মুদ্রার ওঠানামা ও অর্থনৈতিক ধাক্কা
-
ডলার শক্তিশালী হলে অন্য দেশের মুদ্রা দুর্বল হয়, ফলে তাদের আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়।
-
উন্নয়নশীল দেশগুলো যাদের বৈদেশিক ঋণ ডলারে, তাদের ঋণ শোধের খরচ অনেক বেড়ে যায়।
-
এর ফলে তাদের অর্থনীতি সংকটে পড়ে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে সুরক্ষিত থাকে।
৫. ডলার প্রিন্টিং ও মুদ্রাস্ফীতি রপ্তানি
-
যুক্তরাষ্ট্র যখন বেশি ডলার ছাপে (যেমন কোভিড সময়ে), তখন তা মুদ্রাস্ফীতি তৈরি করতে পারে।
-
কিন্তু ডলার সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ায় সেই মুদ্রাস্ফীতির একটা বড় অংশ অন্য দেশগুলো বহন করে।
এর মানে, যুক্তরাষ্ট্রের ছাপানো টাকার প্রভাব বৈশ্বিকভাবে ভাগ হয়ে যায়। অতএব, ডলার বাণিজ্যের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র প্রকারন্তরে যে সুবিধা পায়, সেটিকে ‘টাকা হাতিয়ে’ নেওয়া বললে বলাই যায়।
