
স্বর্ণের দাম বাড়লে পুঁজিপতিরা কয়েকভাবে লাভবান হতে পারেন। মূল বিষয় হলো— তাদের হাতে থাকা সোনা বা সোনার সাথে সম্পর্কিত সম্পদ এর মূল্য বেড়ে যায়।
১. সোনার মজুদের মূল্য বৃদ্ধিঃ
যেসব পুঁজিপতি এবং কালো টাকার মালিকেরা আগে থেকেই সোনা কিনে রেখেছেন (বার, কয়েন, গহনা বা বুলিয়ন আকারে), দাম বাড়ার সাথে সাথে তাদের সম্পদের বাজারমূল্য বেড়ে যায়।
-
উদাহরণঃ একজন যদি ১০ কেজি সোনা ৬০ লাখ টাকায় কিনে থাকেন এবং দাম এক বা দুই মাসে ১০% বেড়ে যায়, তার সম্পদের মূল্য দাঁড়ায় ৬৬ লাখ টাকা। তিনি কোনো কাজ না করেও ৬ লাখ টাকার সম্পদ বৃদ্ধি করলেন।
২. সোনার খনি ও রিফাইনারিতে বিনিয়োগঃ
যারা সোনা খনির শেয়ার বা সোনা প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানির শেয়ার ধরে রাখেন, দাম বাড়লে ঐ কোম্পানির মুনাফা বাড়ে। ফলে শেয়ারের দামও সাধারণত বাড়ে এবং তারা মূলধন লাভ পান।
৩. সোনার ফিউচার/অপশন/ETFs থেকে লাভঃ
অনেক বড় বিনিয়োগকারী বা ফান্ড সোনার দামের ওপর বাজি ধরে থাকে (ফিউচার কন্ট্রাক্ট বা ETF-এর মাধ্যমে)। দাম বাড়লে তারা সরাসরি লাভ করে।
৪. মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে হেজঃ
সোনার দাম বাড়া সাধারণত মুদ্রাস্ফীতি বা অর্থনৈতিক অস্থিরতার সংকেত। এসময় শেয়ার বাজার বা বন্ড দুর্বল হতে পারে। কিন্তু সোনার দাম বাড়লে যারা আগে থেকেই সোনাতে বিনিয়োগ করেছেন তারা তাদের ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেন, ফলে তাদের মোট সম্পদ নিরাপদ থাকে।
৫. নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছে বেশি দামে বিক্রিঃ
দাম বেড়ে গেলে যারা দেরিতে বাজারে প্রবেশ করে তারা বেশি দামে কিনতে বাধ্য হয়। আগে যারা কিনেছিলো, তারা এই সুযোগে বেশি দামে বিক্রি করে মুনাফা তুলতে পারে।

সোনার দাম বাড়িয়ে যেভাবে গরীবে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছেঃ
১. গরিব মানুষের সোনার চাহিদা স্থায়ী থাকেঃ
গরিব বা মধ্যবিত্ত মানুষ বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় বিয়ের গহনা, উৎসব, সঞ্চয় ইত্যাদির জন্য সোনা কিনতে বাধ্য হয়।
দাম যতই বাড়ুক, তারা সোনা কিনতে চেষ্টা করে কারণ এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রয়োজন।
ফলাফলঃ
তারা একই পরিমাণ সোনা কিনতে গেলে আগের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করতে হয়।
এতে তাদের হাতে থাকা নগদ টাকার বড় অংশ বের হয়ে যায় → অন্য খাতে খরচ কমাতে হয় → জীবনের মান কমে।
২. যাদের হাতে সোনা আছে তারা লাভবান হয়ঃ
যারা আগে সোনা কিনে রেখেছে (পুঁজিপতি, ব্যবসায়ী, বড় বিনিয়োগকারী) তারা কোনো পরিশ্রম ছাড়াই ধনী হয়ে যায়।
এটি এক ধরনের unearned income – কাজ না করেই সম্পদের মূল্য বেড়ে যাওয়া।
ফলাফলঃ
গরিবরা বেশি দাম দিয়ে কিনছে → ধনীদের হাতে থাকা পুরনো সোনার বাজারদর বেড়ে যাচ্ছে → ধনীদের সম্পদ আরো বাড়ছে।
৩. সোনার আমদানির উপর দেশের টাকা বেরিয়ে যায়ঃ
যেসব দেশে সোনা উৎপাদন হয় না, সেখানে বেশি দাম মানে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা খরচ।
এটি মুদ্রাস্ফীতি বাড়ায়, সাধারণ দ্রব্যের দামও বাড়তে থাকে → আবারও গরিব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৪. আর্থিক বাজারে জল্পনা-কল্পনা (speculation)ঃ
বড় বিনিয়োগকারী ও ফান্ডগুলো সোনার দামে খেলাধুলা করে (ফিউচার, অপশন মার্কেট)।
তাদের কারণে দাম কৃত্রিমভাবে আরও বাড়তে পারে।
এতে যারা দৈনন্দিন জীবনের জন্য সোনা কিনতে চায় তারা অতিরিক্ত দামে কিনতে বাধ্য হয়।
সারসংক্ষেপঃ
সোনার দাম বাড়া মানে গরিব মানুষদের বেশি খরচ করা, ধনীদের বেশি আয় করা।
এটি কার্যত গরিবদের থেকে ধনীদের কাছে অর্থ স্থানান্তরের একটি প্রক্রিয়া।
মুনাফা ব্যাংকের তুলনায় কয়েকগুণঃ
স্বর্ণ ভোগ্যপণ্য নয়, ফলে চাহিদা যোগানের সাধারণ তত্ত্ব স্বর্ণের ক্ষেত্রে খাটে না। প্রশ্ন হচ্ছে— তাহলে স্বর্ণের দাম বাড়ে কীভাবে? কারা বাড়ায়?
গত এক বছরে (২০২৪ জুন থেকে ২০২৫ জুন) বাংলাদেশে সোনার দাম প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ বেড়েছে বলে বিভিন্ন উৎসে তথ্য পাওয়া যায়। পরবর্তী দুই মাসে দাম বেড়েছে আরো দ্রুত।
সম্পর্কিত সংবাদঃ
স্বর্ণের দাম কোথায় গিয়ে থামবে
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম ৬০ হাজার টাকা ছাড়ালো
এক বছরে সোনার দাম বেড়েছে ১৩ হাজার টাকা
স্বর্ণের দাম কি ভবিষ্যতে অনেক কমে যেতে পারে?
৬ বছরে স্বর্ণের দাম তিনগুণ হওয়াটা বাংলাদেশের মতো কালো টাকার অর্থনীতির দেশে খুুুবই বিপদজনক!
সোনার দাম প্রায় দুই লাখ টাকা ভরি, কিনবেন নাকি বেচবেন
