১️⃣ কেন সোনা টিকে আছে হাজার বছর ধরে
- দুর্লভতা: সোনা পৃথিবীতে সীমিত পরিমাণে আছে। নতুন সোনা খনন করা ব্যয়সাপেক্ষ, তাই সরবরাহ সীমিত।
- রাসায়নিক স্থায়িত্ব: সোনা মরিচা ধরে না, কালচে হয় না, গলে যায় না। ফলে এটি চিরস্থায়ী।
- মানুষের বিশ্বাস: হাজার বছর ধরে এটি ধন-সম্পদ, মুদ্রা এবং অলংকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মানুষের মানসিকতায় সোনা নিরাপদ বিনিয়োগ।
- আন্তর্জাতিক মুদ্রা রিজার্ভ: অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো সোনা জমা রাখে রিজার্ভ হিসেবে।
২️⃣ সোনা মূল্য হারাতে পারে যেসব পরিস্থিতিতে
যদিও মূল্য শূন্যে নামা প্রায় অসম্ভব, কিছু ক্ষেত্রে দাম অনেকটা কমে যেতে পারে:
- বিকল্প প্রযুক্তি উদ্ভাবন: যদি বিজ্ঞানীরা এমন কোনো নতুন পদার্থ বানায় যা সোনার মতোই টেকসই ও আকর্ষণীয়, কিন্তু অনেক সস্তা, তখন সোনার চাহিদা কমে যেতে পারে।
- মহাকাশ খনন: যদি গ্রহাণু থেকে প্রচুর সোনা আনা সম্ভব হয়, সরবরাহ বেড়ে গেলে দাম পড়ে যেতে পারে।
- বিশ্বাস হারানো: যদি মানুষ বিনিয়োগ বা গহনা হিসেবে সোনার বদলে অন্য কিছু বেশি পছন্দ করে (যেমন ক্রিপ্টোকারেন্সি বা অন্য ধাতু), দাম কমতে পারে।
৩️⃣ বাস্তবতা
ইতিহাসে কখনো সোনা পুরোপুরি মূল্যহীন হয়নি, এমনকি বড় যুদ্ধ, অর্থনৈতিক মন্দা, বা মুদ্রা ধসের সময়ও নয়। বরং তখন সোনার দাম সাধারণত বেড়ে যায়, কারণ মানুষ এটাকে “নিরাপদ আশ্রয়” (safe haven) মনে করে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কি সোনার দামে ধ্বস নামাতে পারে?
১️⃣ সোনা বনাম ক্রিপ্টোকারেন্সি—তুলনাঃ
| বিষয় | সোনা | ক্রিপ্টোকারেন্সি |
|---|---|---|
| ইতিহাস | হাজার বছরের পুরোনো, মানুষের কাছে নির্ভরযোগ্য | মাত্র এক দশকের পুরোনো, এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে |
| মূল্য নির্ধারণ | সরবরাহ সীমিত, খনন ব্যয়বহুল | কোডে সীমিত (যেমন Bitcoin-এর সর্বোচ্চ ২১ মিলিয়ন), কিন্তু হাজারো নতুন কয়েন তৈরি করা সম্ভব |
| স্থিতিশীলতা | দাম ওঠানামা তুলনামূলক কম | দামে অত্যন্ত অস্থিরতা |
| ব্যবহার | অলংকার, শিল্প, ব্যাংক রিজার্ভ | মূলত বিনিয়োগ ও পেমেন্ট |
২️⃣ ক্রিপ্টো কি সোনার দাম ভেঙে দিতে পারে?
সম্ভাবনা খুব সীমিত —
- চাহিদা ভাগাভাগি হয়: কিছু বিনিয়োগকারী ক্রিপ্টোতে টাকা ঢালে, ফলে সোনার চাহিদা কিছুটা কমতে পারে।
- বড় ধ্বসের সম্ভাবনা কম: সোনা শুধু বিনিয়োগ নয়, অলংকার, ইলেকট্রনিক্স, মেডিকেল ডিভাইসেও লাগে। তাই চাহিদা পুরোপুরি হারায় না।
- কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোনা ছাড়ে না: বিশ্বজুড়ে সেন্ট্রাল ব্যাংকগুলো এখনো সোনাকে রিজার্ভ হিসেবে জমা রাখে। তারা হঠাৎ ক্রিপ্টোতে চলে যাবে, এমন সম্ভাবনা খুব কম।
৩️⃣ ক্রিপ্টোকারেন্সির ঝুঁকি
যদি ক্রিপ্টোকারেন্সির ওপর আস্থা কমে যায় (হ্যাকিং, সরকারী নিষেধাজ্ঞা, দামের পতন ইত্যাদি), তাহলে বিনিয়োগকারীরা আবার সোনায় ফিরে আসে। তখন বরং সোনার দাম বেড়ে যায়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি সোনার দামের ওপর চাপ তৈরি করতে পারে, কিন্তু বড় ধরনের ধ্বস ঘটানোর সম্ভাবনা খুবই কম। বরং দুই বাজার একে অপরকে প্রভাবিত করে। ক্রিপ্টোতে ভয় পেলে মানুষ সোনায় বিনিয়োগ করে, ফলে সোনার দাম বেড়ে যায়।
সোনা সম্পূর্ণ মূল্যহীন হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে ভবিষ্যতে এর দাম ওঠানামা করবে এবং কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে।

ফলোআপ নিউজ-এর বিশ্লেষণঃ
ফলোআপ নিউজ-এর পূর্বাভাস হচ্ছে স্বর্ণের দাম ২০২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশের বাজারে ২ লক্ষ ২০ হাজার থেকে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠবে। ২০২৬ সালের শুরুতে ২ লক্ষ টাকা, এবং ২০২৬-এর শেষ নাগাদ গিয়ে ২ লক্ষ ৪০ হাজারে ঠেকতে পারে। অর্থাৎ ২০২৬ পর্যন্ত স্বর্ণের দাম বাড়তেই থাকবে। এরপর দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকবে, অথবা কমবে।
