এনজিওগুলোকে, বিশেষ করে ব্রাককে দরিদ্র মানুষ এতটা ঘৃণা করে কেন?

ব্রাক

এনিজিওগুলো যে দানের টাকায় প্রতিষ্ঠান বানিয়েছে, এটা অবধারিতভাবে সত্য। এই টাকা যে দেশের দরিদ্র মানুষকে দেখিয়ে আনা হয়েছে, এই সত্যেরও কোনো ব্যত্যয় নেই। তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলো কেন এখন সেই দরিদ্র জনগণের ওপর চেপে বসবে? কথাগুলো বলছিলেন এনজিওকর্মী মোহাম্মদ রায়হান।

এনজিওগুলোর প্রতি মানুষের ঘৃণা জমেছে মূলত তাদের মাইক্রোফিন্যান্স ব্যবসার কারণে। এবং এক্ষেত্রে ব্রাকই সবচেয়ে ভয়ংকরভাবে ব্যবসা করছে। তাদের নেটওয়ার্ক বিশাল, সেই বিশাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তারা জনগণের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, দরিদ্র জনগণ কঠিন শর্তে লোন নিতে বাধ্য হচ্ছে।

আপনার সন্তান যখন হাসপাতালে তখন তো আপনি যেকোনো শর্তেই লোন নিতে চাইবেন, টাকা না থাকলে চাইবেন না? ২৫ থেকে ৩৫% সুদের এ ঋণ নিয়ে কোনোভাবেই কি তারা তা ব্যবসায়ীক কাজে লাগাতে পারছে, পারার কথা?

ধরুণ, ব্রাক থেকে কেউ ৫০,০০০ টাকা ঋণ নিতে চায়। ব্যাংক এ ধরনের মানুষকে ঋণ দেয় না বলে ব্রাক বা এ ধরনের এনজিওগুলো এ সুযোগটা ঠিক কীভাবে নিচ্ছে। ৫০,০০০ টাকা ঋণ নিতে হলে ভোটার আইডি কার্ড এবং ছবি নিয়ে ব্রাক মাইক্রোফাইন্যান্সের কোনো শাখায় গিয়ে সদস্য হতে হবে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনকেই যেতে হয়, তবে লোন হয় স্ত্রীর নামে। সদস্য ফি ৩০ টাকা। এরপর হোম ভিজিট বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভিজিট করে জানানো হয় তাকে লোন দেওয়া হবে কিনা।

লোন দেওয়ার জন্য মনোনীত হলে আগ্রহী ব্যক্তিকে ৫০,০০০ টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য ৭,৫০০ টাকা জমা দিতে হবে। ঋণ গ্রহীতাদের অভিযোগের শুরুটা এখান থেকেই। ঋণ নিতে কেন টাকা জমা দিতে হবে? টাকা নেই বলেই তো সে সুদে টাকা নিচ্ছে, তাহলে এই ৭,৫০০ টাকা সে কীভাবে সংগ্রহ করবে? ফলোআপ নিউজ অনুসন্ধান করে পেয়েছে এই জমার টাকাটুকু সংগ্রহ করতে অনেকে স্থাবর কোনো সম্পদ বিক্রি করতে বাধ্য হয়, অনেক সময় কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে ২০০% বাৎসরিক সুদে ঋণ নিয়ে জমার টাকাটা তারা ম্যানেজ করে।

দ্বিতীয় অভিযোগের জায়গাটি হচ্ছে— ঋণের টাকা পরিশোধের শর্তে। ঋণ যখনই নেওয়া হোক কিস্তির টাকা জমা দিতে হবে পরবর্তী মাসের দশ তারিখের মধ্যে, কোনো ক্ষেত্রে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনে। ঋণ নেওয়ার ১০ থেকে ২০ দিনের মধ্যে কীভাবে ঋণের টাকা কাজে লাগিয়ে টাকা উপার্জন করে সেই টাকা জমা দেওয়া সম্ভব?

তৃতীয় অভিযোগ— প্রতিটি কিস্তি পরিশোধের সাথে আবার অতিরিক্ত ৫০০ টাকা জমা হিসেবে দিতে হয়। যেখানে ঋণের কিস্তি পরিশোধের করতেই তার নাজেহাল অবস্থা, সেক্ষত্রে সাথে কেন আরো অতিরিক্ত ৫০০ টাকা দিতে হবে?

চতুর্থ প্রশ্ন— ঋণের যে সুদের হার দাঁড়ায় সেটি এনজিওভেদে ২৫ থেকে ৩৫%। এটা সরকারের আইন পরিপন্থী কিনা? এছাড়াও অনেক প্রশ্ন রয়েছে— জমা টাকা ফেরৎ দিতে গড়িমসি করা হয়, ঋণ নিতে এবং জমা টাকা তুলতে তাদের অনেক কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, বেশিরভাগ এনজিও জমা টাকায় কোনো সুদ দেয় না, দিলেও সেটি ঋণের সুদের তুলনায় অনেক কম। সেক্ষেত্রে স্প্রেড দাঁড়ায় ১৮ থেকে ২৫%-এ। ঋণ গ্রহীতাদের বক্তব্য— সরকার কোনো ব্যবস্থা না নিলে তারা এই জুলুমের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে।