নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন অন্যসব আন্দোলনের মতো নয়, এটি আসলে রাজপথের আন্দোলন নয় ঐ অর্থে। বর্তমান সময়ে আমরা জেনেবুঝে ভেজাল খাদ্য খাচ্ছি, খেতে বাধ্য হচ্ছি। আসলে যখন জীবনের মৌলিক প্রয়োজনগুলো হেলাফেলায় ‘অযোগ্য অশিক্ষিত’ মানুষদের দ্বারা মেটাতে চাই তখনই বাধে বিপত্তি। ঘটছেও তাই।
হাতেগোণা কয়টা রেস্টুরেন্ট পাওয়া যাবে যেগুলো শিক্ষিত-সচেতন মানুষে চালায়? অথচ জীবনে ব্যস্ততা বাড়ছে, একই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাইরে খাওয়ার প্রয়োজনিয়তা। কৃষিকাজের কথা যদি বলি, তাহলে তো আরও ভয়াবহ অবস্থা। ক’জন কৃষক পাওয়া যাবে যারা আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে কৃষিকাজ করতে পারছে?
খাদ্যে ভেজাল নিরোধক আইন আছে, কিন্তু সেগুলো সবসময় প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। আইন প্রয়োগ করা হলেও খুঁজে দেখা হয় না অন্যান্য বিষয়গুলি।
শুধু বক্তব্য, নীতি নির্ধারণ এবং আইন প্রয়োগের মাধ্যমে খাদ্যে ভেজালের মতো এই সামাজিক ব্যধি রোধ করা সম্ভবও নয়। এজন্য সামাজিক আন্দোলনের পাশাপাশি প্রয়োজন ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা।
খাদ্যে ভেজালের ‘কারণ’ হিসাবে মোটাদাগে যে বিষয়গুলি আমাদের নজরে এসেছেঃ
১. অতিরিক্ত মুনাফার লোভ।
২. রাজনৈতিক চাঁদাবাজি।
৩. মালিকদের ঘন ঘন দোকান ভাড়া বাড়ানো এবং উচ্চহারে টাকা ডিপোজিট রাখা; রেস্টুরেন্ট একটু চালু হলেই উঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া।
৪. বেশিরভাগ রেস্টুরেন্ট মালিক অশিক্ষত এবং অসচেতন।
৫. ওয়েটারদের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে কোনো ট্রেনিং না থাকা। শিশু শ্রম।
৬. কীটনাশক এবং সার-ঔষধের ব্যবহার সম্পর্কে কৃষকদের পর্যাপ্ত ট্রেনিং না থাকা।
৭. মাছ মুরগীর খাবার হিসেবে নিরাপদ খাদ্য ব্যবহার না করা।
৮. অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা।
৯. পঁচা-বাশি খাবার ফেলে না দেওয়া এবং পোড়া তেল দিয়ে রান্না করা।
১০. জনসাধরণের অসচেতনতা এবং ভেজাল খাদ্য বিক্রেতাকে সামাজিকভাবে বয়কট না করা।
১১. খাদ্য উৎপাদন এবং খাদ্য ব্যবসায় শিক্ষিক-সচেতন মানুষ যুক্ত না হওয়া।
১২. আইন প্রয়োগে গড়িমশি এবং ক্ষেত্রবিশেষ সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে ব্যবসায়ীদের অবৈধ সম্পর্ক তৈরি হওয়া।
১৩. হঠাৎ মোবাইল কোর্ট করা, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদের প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা না রাখা বা চিন্তা না করা।
১৪. জনগণের মধ্য থেকে নিরাপদ খাদ্যের জন্য বড় ধরনের দাবী না ওঠা।
১৫. ভেজালকারীদের দৃষ্টামূলক শাস্তি না হওয়া।