ব্রাক, এপেক্স এবং স্কয়ার কি তাহলে নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সুবিধা দিতে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্সুরেন্স খুলেছে?

গার্ডিয়ান লাইফ ইন্সুরেন্স

গার্ডিয়ান লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেড ১ জানুয়ারি ২০১৪ সালে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে। মালিকানা সম্পর্কে তাদের ওয়েবসাইট থেকে যে বিবরণ পাওয়া যায়, তাতে লেখা আছে— “গ্রাহকরাই গার্ডিয়ান লাইফ এর প্রধান অংশীদার, প্রধান সদস্য, এবং মূল চালিকাশক্তি। গার্ডিয়ানের প্রধান স্পন্সরগণ; ব্র্যাক, স্কয়ার এবং অ্যাপেক্স স্ব স্ব শিল্পে অগ্রগণ্য হিসেবেই বিবেচিত হয়ে থাকেন।”

স্পন্সর শব্দটি এখানে কেন তারা ব্যবহার করলো সেটি প্রশ্ন সাপেক্ষ। তারা তো আসলে মালিক, মালিকেরা কীভাবে নিজ কোম্পানিতে স্পন্সর হয়? ‘স্পন্সর’ শব্দটির তো ভিন্ন প্রায়োগিক অর্থ রয়েছে। মালিকানার বিষয়টিও তারা নিশ্চিত করেছে খুব কৌশলে। মোট ১৪ টি পার্টি দেখালেও প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি এবং ফাউন্ডেশন মিলিয়ে মূলত ঘুরে ফিরে তারা তারাই। এবং বীমা সুবিধাও প্রধানত তারা দিচ্ছে তাদের নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের।

প্রশ্ন হচ্ছে— তাহলে জনগণ কীভাবে মূল চালিকাশক্তি? জনগণের টাকা নিয়ে চালাচ্ছে, এ অর্থে? তাদের টাকা তোলার (গ্রাহক বানানো) বিষয়টিও অভিনব— কোম্পানির প্রথম পাঁচটি পদে (ফিনানশিয়াল এসোসিয়েট, ইউনিট ম্যানেজার, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার, রিজিওনাল ম্যানেজার, ডেপটি রিজওনাল ম্যানেজার) কোনো বেতন নেই, সবাই তারা কমিশনধারী! গার্ডিয়ান কেবল একটি মাঠ দিয়েছে এবং ডিআরএম (ডেপুটি রিজিওনাল ম্যানেজার)-এর ওপরে যে কয়টি পদ রয়েছে তারা রয়েছেন রেফারির ভূমিকায়। এইসব রেফারিদের অনেকের উচ্চ বেতন রয়েছে। কোম্পানির শীর্ষপদে যারা রয়েছে তাদের অনেকে মালিক পক্ষের নিজস্ব লোক বলে জানা গিয়েছে।

এখন যে যেভাবে পারো ‘হাডুডু’ খেলো। কিন্তু এ খেলায় নামারও কিছু শর্ত আছে। একজন এফএ বানানোর জন্য তারা ১৭৫০ টাকা নিয়ে থাকে, পাশাপাশি একটি বীমা তো তার খুলতেই হয়। পান্না নামে একজন এফএ অভিযোগ করেছেন— এফএ বানানোর জন্য তার কাছ থেকে যে টাকাটি নেওয়া হয়েছে সেটি তার কাছে ন্যায্য মনে হয়নি। একইভাবে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে ইউনিট ম্যানেজারদের।

বাংলাদেশে বীমাখাত নিয়ে যেহেতু বিস্তর অভিযোগ রয়েছে, তাই মানুষের আশা ছিলো এই প্রতিষ্ঠানটি (গার্ডিয়ান) হয়তো জনবান্ধব হবে, যেহেতু গার্ডিয়ানের মালিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিমালিকদের প্রচারিত সুনাম রয়েছে। কিন্তু মানুষের সে আশার জায়গাটি নষ্ট হয়েছে কোম্পানির কিছু বিষয় সামনে আসার পর।

যেটি জানা যাচ্ছে— গার্ডিয়ান তার মালিক প্রতিষ্ঠানগুলো যে বীমা সুবিধা—কার্যত স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা প্রদান করছে ব্যক্তি বীমাধারীদের সেটি দিচ্ছে না। কিছু হাসপাতালে বীমাধারীদের জন্য তাদের ক্যাশলেস সুবিধা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সুবিধাটি ব্যক্তি বীমাধারীদের পাওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ব্যক্তি বীমাগ্রহীতাদের এ ধরনের দাবীগুলো পাশ কাটানো হয়। বিপরীতে ব্রাক বা তাদের কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা নিঃশর্তভাবে স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা পেয়ে থাকে। ওষুধ থেকে শুরু করে সবকিছুতে হাসপাতাল তাদের ক্যাশলেস সুবিধা দেয়। খুলনার সিটি মেডিকেলে হাসপাতালে অনুসন্ধান করে বিষয়টি জানা গিয়েছে।

গার্ডিয়ানের একজন বীমাগ্রহীতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফলোআপ নিউজকে জানিয়েছে— নিয়মানুযায়ী অনলাইনে আবেদন করলে স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা পাওয়া যায় না, বক্তিগত প্রচেষ্ঠায় গ্রাহকেরা এই সুবিধাটা পায় না, যেটি পাওয়ার কথা। বিপরীতে রিজিয়ন থেকে কিছু মানুষকে (গ্রাহক, এবং একইসাথে তারা বীমার সাথে কমিশনভোগী কর্মী) নিয়ে ক্লিনিকের সাথে যোগসাযশে সত্যমিথ্যা মিলিয়ে বীমাদাবী তৈরি করা হয়, ফলে কোম্পানিও বিভ্রান্ত হয়। এ কারণে স্বাধীনভাবে যারা স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা পেতে চায়, তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। গার্ডিয়ানের খুলনাঞ্চলের একজন ইউনিট ম্যানেজার দাবীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে জানিয়েছেন— তাদের (গার্ডিয়ানের মালিক প্রতিষ্ঠানগুলো) নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা পুরো পরিবারের জন্য এবং সকল রোগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা পায়, বিপরীতে ব্যক্তি বীমাগ্রহীতাদের বিভিন্নভাবে নিয়মের মারপ্যাঁচে আটকে দিয়ে নাজেহাল করা হয়। এটা অনৈতিক। আমরা এ অনৈতিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে চাই। আমরা চাই — বীমারা মাধ্যমে মানুষের টাকা লুটপাট করে বা কৌশলে মানুষের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়া বন্ধ হোক।


বীমাসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন এবং মতামত প্রকাশ করা হবে। কারো কোনো অভিযোগ থাকলে নিচের নম্বরটিতে জানাতে পারেন। অথবা পত্রিকার মেইলে মেইল করুন।