কোনো ব্যক্তি দ্বারা মৌখিক, আর্থিক অথবা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে উকিল নোটিশ দিতে হয়। কারো বিরুদ্ধে মামলা করার আগে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে এ নোটিশ দিতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নোটিশের জবাব না এলে তখন মামলা দায়ের করতে হয়।
উকিল নোটিশ
যেকোনো মামলার কার্যক্রম শুরুর আগে প্রতিপক্ষকে উকিল নোটিশ দিতে হয়। সাধারণত মামলার বাদীপক্ষ নিজের আইনজীবীর মাধ্যমে এই নোটিশ প্রেরণ করে। উকিল নোটিশে নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে বলা হয়, নির্দিষ্ট এই সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নোটিশে কত দিন সময় দিতে হবে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তবে সরকার প্রতিপক্ষ হলে এক মাস সময় দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। অন্যদের ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা থেকে এক মাস পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। এর পর সরকারি ডাকযোগে প্রতিপক্ষকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা বরাবর পাঠাতে হয়।
মামলা দায়ের
উকিল নোটিশ পাঠানোর পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উকিল নোটিশের সঠিক জবাব বা প্রতিকার না পেলে নোটিশ প্রেরণকারী আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে মামলা করতে পারবেন। নোটিশে উল্লেখ করা সুনির্দিষ্ট মেয়াদের আগে মামলা করা যায় না।
আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ
হাইকোর্টে মামলা পরিচালনার জন্য সাধারণত হাইকোর্টের নিবন্ধনযুক্ত আইনজীবীর মাধ্যমে নোটিশ প্রেরণের দায়িত্ব প্রদান করতে হয়। আর জেলা জজ আদালতে মামলা পরিচালনার জন্য জজ আদালতে মামলা পরিচালনা করেন এমন আইনজীবীকে দিয়ে উকিল নোটিশ দিতে হয়। উকিল নোটিশ প্রেরণের ক্ষেত্রে আইনজীবীকে ফি দিতে হয়। অধিকাংশ আইনজীবী উকিল নোটিশ দেওয়ার আগে ওকালতনামায় স্বাক্ষর নেন। তবে উকিল নোটিশের সঙ্গে আদালতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
মামলা পরিচালনার জন্য যেকোনো আইনজীবীর কাছেই যাওয়া যেতে পারে।
আইনজীবীরা বিভিন্ন ধরনের মামলা পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন করেন। কাজেই কোন আইনজীবী কোন বিষয়ে দক্ষ, সেটি জেনে আইনজীবী বাছাই করা ভালো। আর পরিচিতদের মাধ্যমেও আইনজীবীদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা যেতে পারে।
ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত ল’ ফার্মগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে। আবার ব্যক্তিগতভাবেও কাউকে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। হাইকোর্ট চত্বরে অবস্থিত সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ভবনে বিভিন্ন আইনজীবীর চেম্বার রয়েছে। এ ছাড়া এ ভবনের দুটি হলে আইনজীবীরা বসেন। সুপ্রিম কোর্ট বার অফিস থেকে তালিকাভুক্ত সব আইনজীবীর ঠিকানা ও ফোন নম্বরসংবলিত একটি ডিরেক্টরি সংগ্রহ করা যেতে পারে। এটি প্রতিবছর সংস্কার করা হয়।
মামলার দায়িত্ব দেওয়া
ওকালতনামা বা একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আইনজীবীকে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলার দায়িত্ব দিতে হয়। একবার আইনজীবীকে দায়িত্ব দেওয়ার পর তার লিখিত সম্মতি ছাড়া অন্য কোনো আইনজীবীর মাধ্যমে মামলা পরিচালনার সুযোগ থাকে না।
মামলার খরচ
মামলায় খরচ হয় সাধারণত দুই ভাবে। একটি আইনজীবীর ফি বাবদ, অন্যটি দাপ্তরিক খরচ বাবদ। আইনজীবীর ফির অঙ্ক নির্দিষ্ট নয়। বিভিন্ন আইনজীবী নানা ধরনের মামলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অঙ্কের ফি নেন। স্বাভাবিকভাবেই জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের ফির অঙ্কটা বেশি হয়। মামলার ধরন বুঝে দাপ্তরিক খরচ নির্ধারিত হয়।
মামলা শুরু করা
এ কাজটি আইনজীবী বা তাঁর সহকারী করে থাকেন। কোর্ট অফিসে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা দায়ের করলে সেখানে একটি নম্বর দেওয়া হয়। এর পর কোর্টের একটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করাতে হয়। সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় মামলাটি অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর কার্যতালিকা অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে শুনানি সম্পন্ন করা হয়। মামলার একাধিক দিন শুনানি হতে পারে। প্রতিপক্ষকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য সময় দেওয়া হতে পারে। তবে এর মাঝে বেঞ্চ ভেঙে দেওয়া হলে পুনরায় অন্য একটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। এ কার্যতালিকাকে কজলিস্ট বলা হয়।
সূত্র: NTV