কামাল আতাতুর্কের তুরস্ক ছিল অত্যন্ত আধুনিক একটি রাষ্ট্র। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানীয় সম্রাজ্যের পরাজয়ের পর কামাল আতাতুর্ক তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধে তুর্কি জাতীয় আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। আতাতুর্কের সামরিক অভিযানের ফলেই তুরস্ক স্বাধীনতা লাভ করে। তার উদ্দেশ্য ছিল সাবেক উসমানীয় সম্রাজ্যকে একটি আধুনিক, কিছুক্ষেত্রে পশ্চিমাধাচের ও ধর্মনিরপেক্ষ জাতিরাষ্ট্রে রূপান্তর করা। আতাতুর্কের সংস্কার আন্দোলনের মূলনীতির উপর আধুনিক তুরস্ক প্রতিষ্ঠিত। তার মতবাদ কামালবাদ নামে পরিচিত।
তিনি সফলও হয়েছিলেন। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তিনি ১৯২৩ সালের ২৯ অক্টোবর তুরস্ককে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেছিলেন। নতুন সরকার ফ্রান্স, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডের মতো ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রতিষ্ঠান ও সংবিধানগুলো পর্যালোচনা করে সেগুলোকে তুরস্কের জন্য গ্রহণ করে।
মজার বিষয় হল— আতাতুর্কের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জনগণ ছিল অন্ধকারে। জনগণকে জানানোর সুযোগ আসলে ছিল না। জনগণ মনে করেছিল তারা সম্ভবত খেলাফত রাজ্যে ফিরে যাচ্ছে। এমনকি কামালের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনবহিত থাকায় জনগণ “আমরা প্রথম খলিফাদের দিনে ফিরে যাচ্ছি” বলে উল্লাসও করেছিল।
মোস্তফা কামাল একজন দক্ষ সামরিক অধিনায়ক হিসেবে তুরস্কে সম্মানিত ছিলেন। তিনি সে সম্মান আধুনিক তুরস্ক গঠনের কাজে লাগান এবং ১৯৩৮ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রে সংস্কার কাজ চালিয়ে যান। এভাবে বিশাল মুসলিম সম্রাজ্যের ভেতর থেকে তিনি তুরস্ককে বের করে আনেন। এবং তুরস্ককে একটি আধুনিক, গণতন্ত্রী ও ধর্মনিরপেক্ষ জাতিতে পরিণত করেন।
আতাতুর্ক দেশের এবং জনগণের পূর্ণ স্বাধীনতা চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন,
……পূর্ণ স্বাধীনতার মাধ্যমে আমরা সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, বিচারিক, সামরিক, সাংস্কৃতিক ও সর্বক্ষেত্রে স্বাধীনতা বোঝাতে চাই। এগুলোর মধ্যে কোনো একটিতে স্বাধীনতা বঞ্চিত হলে সমগ্র স্বাধীনতাই বিপন্ন বলে বিবেচিত হবে।
তিনি উসমানীয় সাম্রাজ্য ও নতুন প্রজাতন্ত্রের মধ্যকার পরিবর্তন এবং পার্থক্য তুলে ধরার জন্য এক ধরনের ব্যানার তৈরী করেন। প্রত্যেক পরিবর্তন একেকটি তীর চিহ্ন দ্বারা নির্দেশিত হত।
পরিবর্তনগুলো বিশ্বসভ্যতায় সব নতুন ছিল না, কিন্তু তখনকার তুরস্কে তা ছিল অভাবনীয়। এমনকি আধুনিক খ্রিস্ট্রান রাষ্ট্রগুলোর তুলনায়ও তুরস্ক তখন এগিয়ে ছিল।
বঙ্গবন্ধুর মতো তিনিও একদলীয় শাসন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন। ১৯২৪ সালে সংবিধান চালুর পরের বছর ১৯২৫ সালে একদলীয় শাসন চালু হয় তুরস্কে।
আতাতুর্কের রাজনৈতিক সংস্কারের মধ্যে অন্যতম ছিল খিলাফত আন্দোলন এবং খিলাফত দর্শনের বিলোপ সাধন, একইসাথে জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রতিষ্ঠা।
১৯২৪ সালের ৩ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে তুরস্ক থেকে খিলাফত বিলুপ্ত হয়। খিলাফতের ক্ষমতা জিএনএ’র আওতাভুক্ত করা হয়। অন্যান্য মুসলিম জাতিগুলো তুরস্কের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল এবং এ বিষয়ে বিতর্কে অবতীর্ণ হয়েছিল, তবে তা আতাতুর্কের সাহসী পদক্ষেপে ভুলুণ্ঠিত হয়।
সংস্কার কাজের শুরুতেই মোস্তফা কামাল প্রথাগত ইসলামিক শিক্ষাপদ্ধতিকে পরিবর্তন করেন। শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারকে তিনি তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন।
জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা (একীভূতকরণ ও আধুনিকীকরণ) আজকের দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে উৎপাদনশীল কাজ। জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমে আমাদেরকে সফল হতে হবে এবং আমরা সফল হব। একটি জাতির স্বাধীনতা শুধুমাত্র এই পন্থায় আসতে পারে।
—মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক
১৯২৪ সালে তুরস্কে শিক্ষাব্যবস্থার একীভূতকরণ নিশ্চিত হয় এবং তা আইনের মাধ্যমে বলবত করা হয়। নতুন প্রক্রিয়ায় বিদ্যালয়গুলো তাদের পাঠ্যক্রম জাতীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। একই সময় ধর্মীয় বিষয়গুলোকে সরকারের ধর্মীয় বিভাগের আওতাধীনে আনা হয়।
১৯২৫ সালে আতাতুর্ক তুর্কীদের মধ্যপ্রাচ্যের রক্ষণশীল পোশাক পরিত্যাগ করে আধুনিক ইউরোপীয় পোশাক পরতে পরামর্শ দেন।
তুরস্কে পোশাক সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় মাহমুদের সময় থেকে। দ্বিতীয় মাহমুদের সময় থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের প্রথাগত পোষাক ত্যাগ করা হচ্ছিল, তাকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়াতে মোস্তফা কামাল বা কামাল আতাতুর্ক বদ্ধ পরিকর ছিলেন।
১৮২৬ সালে থেকে ধর্মীয় টুপির পরিবর্তে সর্বপ্রথম সরকারি চাকুরেদের জন্য হ্যাট বাধ্যতামূলক করেছিলেন। এখানেই থেমে ছিলেন না। তিনি শিক্ষার্থী ও সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জন্য পোশাক বিধিমালা প্রণীত করেছিলেন।
সরকারি চাকরিজীবিদের অনেকে অবশ্য হ্যাট স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছিল। ১৯২৫ সালে তিনি নিজে সমাবেশে পানামা হ্যাট পরিধান করতেন। হ্যাট আধুনিক সভ্য জাতির পরিচয় বহন করে এটি বুঝাতে চেয়েছিরেন তিনি। তার পোশাক সংস্কারের সর্বশেষ অংশ ছিল পাগড়ি, গেড়ুয়া টুপি বা ইসলামী টুপির মতো ধর্মভিত্তিক পোষাকের পরিবর্তে আধুনিক পশ্চিমা স্যুট ও নেকটাই এবং সাথে হ্যাট পরিধান করা।
তার সব সংস্কার যে প্রয়োজনীয় ছিল এটি না হলেও তিনি সেকালে কতটা সাহসী এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তা তার কিছু বিবৃতি থেকে বোঝা যায়।
১৯২৫ সালের ৩০ আগস্ট ধর্মীয় চিহ্নের উপর কামালের দৃষ্টিভঙ্গি তার কাস্তামনু বক্তৃতায় বিবৃত হয়। তিনি বলেন,
জ্ঞান, বিজ্ঞান ও সভ্যতার সামনে দাঁড়িয়ে আমি তুরস্কের সভ্য সমাজের জনগণকে জাগতিক ও আধ্যাত্মিক লাভের জন্য শেখদের নির্দেশনায় চলতে দিতে পারি না। তুর্কি প্রজাতন্ত্র শেখ, দরবেশ ও অনুসারীদের দেশ হতে পারে না। সর্বোৎকৃষ্ট রীতি হল সভ্যতার রীতি। মানুষ হওয়ার জন্য সভ্যতার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করাই যথেষ্ঠ। দরবেশ প্রথার নেতৃবৃন্দ আমার কথার সত্যতা বুঝতে পারবেন এবং তাদের খানকাহগুলো গুটিয়ে নেবেন ও স্বীকার করবেন যে তাদের রীতিগুলো পুরনো হয়ে গিয়েছে।
একই বছরের ২ সেপ্টেম্বর সরকার দেশের সকল সূফি কার্যক্রম ও খানকাহসমূহ বন্ধের আদেশ জারি করে। মোস্তফা কামাল খানকাহগুলোকে জাদুঘরে রূপান্তরের আদেশ দেন। বেশকিছু ক্ষেত্রে ধর্মের প্রাতিষ্ঠানিক প্রদর্শন তুরস্কে বেআইনি ঘোষিত হয়। রাজনীতি নিরপেক্ষ সূফিবাদ, যা শুধুমাত্র সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে থাকবে, তার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
এরপর থেকে রক্ষণশীল তুরস্কে বহু প্রতিবাদী গ্রুপ তৈরি হয়। এবং আতাতুর্ককে হত্যা চেষ্টা হয়। এ প্রেক্ষিতে মোস্তফা কামাল বলেন,
আমার নশ্বর দেহ ধুলো হয়ে যাবে, কিন্তু তুর্কি প্রজাতন্ত্র চিরকাল টিকে থাকবে।
১৯২৬ সালে পরের কয়েক বছরে রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় তিনি দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন। প্রথমবারের মতো ইসলামী আইন সেক্যুলার আইন থেকে পৃথক হয়ে যায় এবং ধর্মীয় আইন শুধু ধর্মীয় ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে মোস্তফা কামাল বলেন,
আমরা অবশ্যই আমাদের ন্যায়বিচার, আইন ও আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেসব বন্ধন থেকে মুক্ত করতে হবে যা আমাদের শতাব্দীর উপযোগী নয় কিন্তু আমাদের উপর চেপে বসেছে।
একই বছর অর্থাৎ ১৯২৬ সাল থেকেই ইতালীয় দণ্ডবিধির ওপর ভিত্তি করে গঠিত তুরস্কের দণ্ডবিধি পাস হয়। একই বছরের ৪ অক্টোবর ইসলামী আদালতগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। নতুন আইন এবং আদালত প্রতিষ্ঠা এবং কার্যকর করা সময়সাপেক্ষ ছিল বলে কামাল ১৯৩৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অবলুপ্তি দীর্ঘায়িত রাখেন।
উসমানীয় রক্ষণশীল আমলে নারী পুরুষের সামাজিক মেলামেশা নিরুৎসাহিত করা হত। এবং অনেকক্ষেত্রে আইনি বাধাও ছিল। মোস্তফা কামাল ক্ষমতায় এসে সামাজিক সংস্কার কার্যক্রম খুব দ্রুত শুরু করেন। তার ব্যক্তিগত জার্নাল থেকে এসব বোঝা যায়। তিনি ও তার অধীনস্তরা নারীদের পর্দাপ্রথা ও বাইরের জগতের সাথে তাদের মেলামেশার বিষয়ে আলোচনা করেন। এই বিষয়ে তিনি কীভাবে অগ্রসর হচ্ছিলেন তা ১৯১৫ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত তার জার্নালে পাওয়া যায়–
সামাজিক পরিবর্তনের উপায় হলঃ
(১) মায়েদেরকে শিক্ষিত করা;
(২) নারীদেরকে স্বাধীনতা প্রদান;
(৩) একজন পুরুষ তার নীতি চিন্তা ও অনুভূতি নারীদের সাথে একই জীবনযাপনের মাধ্যমে পরিবর্তন করতে পারে, যেহেতু তাদের ভেতর জন্মগতভাবে আকর্ষণ বিদ্যমান।
নারীদের স্বাধীনতা প্রদানের জন্য মোস্তফা কামালের নতুন কিছু আইনের প্রয়োজন ছিল। তার প্রথম পদক্ষেপ ছিল নারীশিক্ষা আইনে হস্তক্ষেপ। ১৯২৬ সালের ৪ অক্টোবর তুরস্কের সিভিল কোড পাশ হয়। সুইস সিভিল কোডের ওপর ভিত্তি করে আইনটি প্রণীত হয়েছিল। নতুন আইনের অধীনে নারীরা উত্তরাধীকার ও তালাকের মতো বিষয়গুলিতে পুরুষের সমান ক্ষমতা পায়। মোস্তফা কামালের মতে নারি ও পুরুষের একতার মাধ্যমে সমাজ তার উদ্দেশ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে উসমানীয় যুগের মতো নারী পুরুষের পৃথকীকরণ থাকলে আকাঙ্ক্ষিত প্রগতি অর্জন করা যাবে না।
একটি বৈঠকে তিনি বলেন,
নারীদের প্রতি: আমাদের জন্য শিক্ষার যুদ্ধ জয়লাভ কর, তবে তুমি তোমার দেশের জন্য আমাদের চেয়েও বেশি কিছু করতে পারবে।
পুরুষদের প্রতি: নারীরা যদি জাতির সামাজিক জীবনে অংশগ্রহণ না করে তবে আমরা কখনোই আমাদের সামগ্রিক উন্নতি অর্জন করতে পারব না। এর ফলে আমাদেরকে পশ্চাৎপদ হয়ে থাকতে হবে এবং পাশ্চাত্য সভ্যতার সাথে তাল মেলানো অসম্ভব করে তুলবে।
১৯২৭ সালে রাষ্ট্রীয় স্কাল্পচার মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয়। তুরস্কে ইসলামী আদর্শ সমুন্নত রাখতে ভাস্কর্যের চর্চা খুবই কম ছিল। কামাল বিশ্বাস করতেন, সংস্কৃতি হচ্ছে তুর্কি প্রজাতন্ত্রের ভিত্তি।
আতাতুর্কের নির্দেশে এবং পৃষ্ঠপোশকতায় প্রাক-ইসলামী যুগের তুর্কি সংস্কৃতি গবেষণার বিষয়বস্তু হয়ে উঠে। সেলজুক ও উসমানীয় সভ্যতার পূর্বের তুর্কি সংস্কৃতির ওপর জোর দেয়া হয়। একইসাথে লোকসংস্কৃতির ওপর জোর দেয়া হয়।
এরপর তিনি আরবী বর্ণমালার পরিবর্তে ১৯২৮ সালে তুর্কি ভাষা লেখার জন্য ল্যাটিন বর্ণমালার ওপর ভিত্তি করে নতুন বর্ণমালা গঠনের বিষয়টি সামনে আনেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এজন্য তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, সর্বোচ্চ পাঁচ মাসের মধ্যে এটি করতে হবে।
১৯২৮ সালের ১ নভেম্বর নতুন তুর্কি বর্ণমালা চালু হয় এবং আরবি বর্ণমালার ব্যবহার বিলুপ্ত করা হয়। এসময় জনগণের ১০ শতাংশ শিক্ষিত ছিল। তুর্কি ভাষায় আরবি বর্ণমালার ব্যবহার শিখতে প্রায় তিন বছর সময় লাগত।
১৯২৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর নতুন বর্ণমালা ব্যবহার করে তুরস্কে সর্বপ্রথম পত্রিকা প্রকাশিত হয়। নাগরিকদেরকে নতুন পন্থা শিক্ষাদানের জন্য কামাল নিজে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সফর করেন। নতুন এবং সহজতর বর্ণমালার কারণে তুরস্কের শিক্ষিতের হার দুই বছরের মধ্যে ১০% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৭০% হয়।
১৯৩২ সালের শুরুতে দেশজুড়ে পিপলস হাউস খোলা হয়, যাতে ৪ থেকে ৪০ বছর বয়সের মানুষেরা নতুন বর্ণমালা শিখতে পারে। কপিরাইট, গণশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক প্রকাশনীর ওপর সভা অনুষ্ঠিত হতে থাকে। স্বাক্ষরতা সংস্কারের জন্য নতুন কপিরাইট আইনে ব্যক্তিগত উদোগে প্রকাশনীকে সাহায্য করা হয়।
মোস্তফা কামাল প্রাথমিক স্তর থেকেই আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতির প্রবর্তন করেন। তিনি বয়স্ক শিক্ষার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। তুর্কি নারীদেরকে গৃহস্থালীর কাজ এবং সন্তান প্রতিপালনের পাশাপাশি বাইরের কাজে উৎসাহ দিতেন। নাগরিকদের দায়িত্ববান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তিনি দারিদ্র দূরীকরণ ও লিঙ্গ সমতার জন্য শিক্ষাকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।
আধুনিক শিক্ষাকে বিস্তৃত করার জন্য মোস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে ব্যবহার করেন। তিনি দুটি পাঠ্যবই প্রণয়নের সাথেও জড়িত ছিলেন। এ দুটি হল “Vatandaş İçin Medeni Bilgiler (১৯৩০) ও জিওমেট্রী (১৯৩৭)।
১৯৩০ সাল পর্যন্ত তিনি মোটামুটি নির্বিঘ্ন ছিলেন। এরপর থেকে ভেতর-বাহিরে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল মূলত দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের দুর্নীতির পথ বন্ধ হওয়ায় এবং ধর্মীয় অজ্ঞতা, মধ্যযুগীয়তা, ধর্ম ব্যবসা এবং ধর্মের অপব্যবহারের কোনো পথ খোলা না থাকায়।
১৯৩০ সালের ১১ আগস্ট মোস্তফা কামাল বহুদলীয় ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি আলি ফেতহি ওকয়েরকে নতুন দল গঠন করতে বলেন। নবগঠিত লিবারেল রিপাবলিকান পার্টি দেশজুড়ে সাফল্য লাভ করে। তবে এবারেও এটি আতাতুর্কের সংস্কারের বিরুদ্ধাচারীদের কেন্দ্র হয়ে উঠে, বিশেষত ব্যক্তিজীবনে ধর্মের অবস্থানকে কেন্দ্র করে।
১৯৩০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি সহিংস ঘটনা সংঘটিত হয়। মেনেমেন শহরে ইসলামী বিদ্রোহী গোষ্ঠী এ সহিংসতার সূচনা করে। ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কারের প্রতি একে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
১৯৩০ সালের নভেম্বরে আলি ফেতহি ওকয়ের তার দলকে বিলুপ্ত করেন। এরপর ১৯৪৫ সালে দীর্ঘস্থায়ী বহুদলীয় ব্যবস্থা শুরু হয়।
#দিব্যেন্দু দ্বীপ